ভোটের ধাক্কায় বানচাল
পরীক্ষাসূচি, ক্লাসেও কোপ
ঞ্চায়েত নির্বাচনের জট কাটলেও দুর্দশা বাড়ল পরীক্ষার্থীদের! একেবারে জোড়া বিড়ম্বনা। পরীক্ষা-বৈতরণীতে নৌকা বানচাল আর ক্লাস ছাঁটাই।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পার্ট ওয়ান ও পার্ট টু পরীক্ষা ইতিমধ্যেই এক মাস পিছিয়ে গিয়েছে। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের যে-নির্ঘণ্ট তৈরি করে দিয়েছে, তাতে আরও এক দফা পিছিয়ে যাচ্ছে স্নাতক স্তরের দু’টি পরীক্ষাই। পার্ট টু পরীক্ষা অগস্টের আগে শুরু করা যাবে না বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা। পার্ট ওয়ান এমনিতেই অগস্টে শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু পার্ট টু পরীক্ষার জন্য তা-ও পিছিয়ে যাবে। পরিস্থিতি যা দাঁড়াল, তাতে স্নাতক স্তরের পরীক্ষা পর্ব সেপ্টেম্বরের আগে শেষ হবে না।
দেড় লক্ষেরও বেশি ছাত্রছাত্রী পার্ট ওয়ান ও পার্ট টু পরীক্ষা দেবেন। তবে ফের পরীক্ষা পিছোনোয় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পার্ট টু পরীক্ষার্থীরা, যাঁরা তৃতীয় বর্ষে উঠবেন। ক্লাস কমবে তাঁদেরই। তাঁরা তৃতীয় বর্ষে সাকুল্যে মাস চারেক পঠনপাঠনের সময় পাবেন বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজে তৃতীয় বর্ষের ক্লাস সাধারণত জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হয়। তা মাথায় রেখেই পার্ট টু জেনারেল পত্রের পরীক্ষা শুরুর দিন ধার্য করা হয়েছিল ১৮ জুন। ভোটে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে টানাপোড়েনের প্রেক্ষিতে সেই পরীক্ষা এক মাস পিছিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। শিক্ষক-ছাত্রদের অনেকেই মনে করছেন, অত তাড়াতাড়ি পরীক্ষা পিছোনোর সিদ্ধান্ত না-নিলে এত দিনে অনেক পরীক্ষা নিয়ে নেওয়া যেত। সে-ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের সমস্যা অনেক কমত। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, পূর্ব ঘোষিত সূচি অনুযায়ী ২ জুলাই যে-নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, তার জন্য জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহেই পুলিশ বিভিন্ন কলেজ ভবন অধিগ্রহণ শুরু করে। তাই পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
ফের পরীক্ষা পিছোনোয় আগামী শিক্ষাবর্ষে পঠনপাঠনের দিন কমে যাবে। সমস্যায় পড়বেন ছাত্রছাত্রীরা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষও উদ্বিগ্ন। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানান, অগস্টে পার্ট টু পরীক্ষা হলে সেপ্টেম্বরের আগে তৃতীয় বর্ষের ক্লাস পুরোদমে শুরু হবে না। অক্টোবরে পুজোর ছুটি। তার পরে পঠনপাঠনের জন্য থাকছে দু’মাস, নভেম্বর-ডিসেম্বর। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে আবার শীতের ছুটি। জানুয়ারি থেকে ক্লাস টেস্ট, প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা, পার্ট থ্রি-র টেস্ট ইত্যাদি শুরু হয়ে যাবে।
আশঙ্কা আছে আরও। এর পরে লোকসভা নির্বাচন কোনও কারণে এ বছরের শেষে হলে পড়ুয়াদের দুর্দশার সীমা থাকবে না, মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের।
বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ অবশ্য পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়েই আপাতত মাথা ঘামাচ্ছেন। সুরঞ্জনবাবুর কথায়, “পার্ট থ্রি পরীক্ষা এপ্রিলে। পার্ট টু পরীক্ষা সময়মতো হলে তৃতীয় বর্ষে পঠনপাঠনের জন্য সময় মেলে সাড়ে ছয় থেকে সাত মাস। নির্বাচনের জেরে তা কমে চার মাসে দাঁড়াবে।”
পার্ট থ্রি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, ওই পরীক্ষার পরে অনেক ছাত্রছাত্রীই স্নাতকোত্তরে জাতীয়, আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন জানান। সেখানে স্নাতক স্তরের নম্বর প্রয়োজন হয়। তাই পড়ুয়াদের সমস্যার কথা ভেবে সময়মতো পার্ট থ্রি পরীক্ষা বা ফল প্রকাশ করতেই হয়। তা ছাড়া উচ্চশিক্ষা সংসদের নির্দেশ মেনে জুনে পার্ট থ্রি-র ফল বার করতেই হবে বলে জানান সুরঞ্জনবাবু।
এই পরিস্থিতিতে পার্ট টু পরীক্ষার আগে পার্ট থ্রি-র ক্লাস বা পার্ট ওয়ান পরীক্ষার আগে পার্ট টু-র ক্লাস শুরু করে দিয়ে পঠনপাঠনের সম্ভাব্য ক্ষতি কিছুটা অন্তত কমানো যায় কি?
উপাচার্য বলেন, “আমাদের নিয়মে পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে পরের বছরের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এমন অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে যদি কোনও কলেজ পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষার আগেই পরবর্তী বর্ষের পঠনপাঠন শুরু করে দেয়, তাতে ব্যক্তিগত ভাবে আমার আপত্তি নেই।” বিষয়টি নিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বৈঠকে আলোচনা করবেন বলে জানান সুরঞ্জনবাবু।
শীর্ষ আদালতে শুক্রবারের ঘোষিত সূচি অনুযায়ী হাওড়া, হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নির্বাচন হবে ১৫ এবং ১৯ জুলাই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলি রয়েছে ওই সব জেলায়। উপাচার্য জানান, গণনা কেন্দ্র হিসেবে কলেজগুলিকে কিছুটা ছাড় দিয়ে আরও বেশি সংখ্যক স্কুল ব্যবহার করার জন্য তিনি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি লিখে অনুরোধ জানাবেন। সুরঞ্জনবাবুর কথায়, “গণনা কেন্দ্র বা নিরাপত্তা বাহিনীর থাকার বন্দোবস্ত করা হলে দীর্ঘ ২০-২৫ দিন কলেজ ভবনগুলি ব্যবহার করা হয়। সেই জন্যই কমিশনের কাছে ওই অনুরোধ জানানো হবে। এতে পরীক্ষাসূচিতে বিঘ্নের ব্যাপ্তি কিছুটা কমবে বলে আশা করা যায়।”
শুধু পরীক্ষাই নয়। ভোটের জেরে প্রথম বর্ষে ছাত্র ভর্তি নিয়েও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। ১৫ জুলাই থেকে কলেজগুলিতে ছাত্র ভর্তি করার নির্দেশ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার এই নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।
নির্বাচনের জেরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট ওয়ান পরীক্ষা নিয়েও। সেখানে ওই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ১৯ জুলাই। প্রায় এক লক্ষ ২৮ হাজার ছাত্রছাত্রী ওই পরীক্ষা দেবেন। আগামী মঙ্গলবার পরীক্ষা সাব-কমিটির বৈঠকে নতুন সূচি নিয়ে আলোচনা হবে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট টু পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে বলে জানান পরীক্ষা নিয়ামক বিমলেন্দু বিশ্বাস। বর্ধমান ও সিধো-কানহু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা পিছোতে পারে। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষাসূচি নিয়ে বৈঠকে বসবেন কর্তৃপক্ষ। বিদ্যাসাগর ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্য পরীক্ষা পিছোনোর ব্যাপারে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। প্রয়োজনে পরে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানান।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.