খুনের অভিযোগে ফাঁক দেখেই কি সুজনকে ঘাঁটাচ্ছে না পুলিশ
বারুইপুরে তৃণমূল প্রার্থী খুনের ঘটনায় এফআইআরে নাম থাকা সত্ত্বেও সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত কোনও রকম জিজ্ঞাসাবাদ করেনি পুলিশ।
কেন?
তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, এফআইআরে যে-ভাবে সুজনবাবুর নাম লেখা হয়েছে, তার ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আদালতে ধাক্কা খেতে হবে। একই অভিমত আইনজীবীদের একাংশের।
পুলিশি সূত্রের খবর, বুধবার দুপুরে এক মদ্যপানের আসরে খুন হন বারুইপুরের পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল প্রার্থী শিবরাম নস্কর (৪২)। ওই আসর বসেছিল বারুইপুরের কুড়ালি গ্রামের বাসিন্দা কানু সাঁপুই নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে। সেখানেই কুপিয়ে খুন করা হয় শিবরামবাবুকে। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে নিহতের ভাই সুশান্তবাবু জানান, কানুর বাড়ি থেকে চিৎকার শুনে তিনি ছুটে গিয়ে দেখেন, তাঁর দাদা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। আসরে উপস্থিত কিছু তৃণমূল-সমর্থক সুশান্তবাবুকে জানান, কানু একটি কাটারি দিয়ে শিবরামকে কুপিয়েছে। সুশান্তবাবু তাঁর দাদাকে বারুইপুর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে শিবরামবাবুকে পাঠানে হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল হাসপাতালে। সেখানেই মারা যান তিনি।
এফআইআরে নিহতের ভাইয়ের বয়ান
কী বলছেন?
প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজ্য সরকার ও তৃণমূল আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে চাইছে।
সুজন চক্রবর্তী |
এই এফআইআরের বয়ানের অসঙ্গতি থেকে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মিলন মুখোপাধ্যায় |
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পুলিশ জেনেছে, কানু কাটারির কোপ মেরে শিবরামবাবুকে খুন করেছে। তার পর থেকে কানু এবং তার স্ত্রী ফেরার। ওই ঘটনার পিছনে সিপিএমের হাত আছে বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতাদের। এবং সেই অভিযোগের প্রতিফলন ঘটেছে সুশান্তবাবুর এফআইআরের বয়ানেও। তাতে সুশান্তবাবু লিখেছেন, ঘটনার পরে তিনি অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছেন, স্থানীয় কয়েক জন সিপিএম নেতা ওই খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন। অভিযোগপত্রে সিপিএমের তিন নেতার নামও উল্লেখ করেছেন তিনি। লিখেছেন, “তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সমস্ত ঘটনা সিপিএম জেলা সম্পাদক ড. সুজন চক্রবর্তীর নির্দেশে সংঘটিত হয়েছে।”
সিপিএমের আপত্তি এই বয়ান নিয়েই। তাদের বক্তব্য, শিবরামবাবুর ছায়াসঙ্গী ছিল কানু। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে নিহতের পরিবার। ঘটনার পরে শিবরামবাবুর মেয়ে বলেন, “মারা যাওয়ার আগে বাবা আমার হাতে তাঁর মোবাইল দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমাকে কানু কুপিয়েছে’।” তা হলে নিহতের ভাই কী ভাবে অনুসন্ধান করে সিপিএমের যোগ পেলেন, প্রশ্ন সিপিএম নেতাদের। তাঁরা বলছেন, “প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই সুজনবাবুকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।’’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “সুজনবাবুর এত অধঃপতন হয়নি যে, তিনি তৃণমূলের নিজস্ব মদের আড্ডায় বসে খুনোখুনি করবেন। ওই ব্যক্তি খুন হয়েছেন নিজেদের অন্তঃকলহের জেরে। তৃণমূল কমিউনিস্টদের খুন করে এখন নিজেদেরই খুন করছে। এটাই তাদের নিয়ম!”
আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, নিহতের ভাই অল্প সময়ের মধ্যে কী ভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে ওই হত্যাকাণ্ডে সুজনবাবুর জড়িত থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হলেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এফআইআরের বয়ানের মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার ইঙ্গিতও দেখতে পাচ্ছেন ওই আইনজীবীরা।
ঘটনার সঙ্গে শিবরাম-ঘনিষ্ঠ কানু এবং তার সঙ্গীদের যোগ রয়েছে, মানছেন পুলিশকর্তারাও। পুলিশি সূত্রের খবর, এফআইআরে নাম না-থাকা সত্ত্বেও ঘটনার রাতেই কানুর দুই সঙ্গী দীনবন্ধু ও অরবিন্দকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আশপাশের কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানও ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। এক পুলিশকর্তা জানান, কানুই যে মূল অভিযুক্ত, সেই ব্যাপারে তদন্তকারীরা মোটামুটি নিশ্চিত।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.