মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যেই তাঁদের সিপিএমের লোক বলে দাগিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, পোশাক-পরিচ্ছদ দেখেই তিনি চিনতে পারেন কার উদ্দেশ্য কী। তাঁর সেই কথার প্রতিধ্বনি করেই টুম্পা কয়াল-মৌসুমী কয়ালদের সিপিএম-যোগ খুঁজে পেল রাজ্য গোয়েন্দা দফতর (আইবি)।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কামদুনি সফরে বিক্ষোভের তদন্ত রিপোর্ট শুক্রবারই জমা পড়েছে মহাকরণে। বিক্ষোভের সামনের সারিতে ছিলেন যাঁরা, তাঁদের কিছু আত্মীয় যে সিপিএমের সঙ্গে জড়িত, তা সাফ বলে দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে। শুধু তা-ই নয়, মুখ্যমন্ত্রী কামদুনি যাওয়ার দু’দিন আগে টুম্পা-মৌসুমীরা ঘরোয়া বৈঠক করে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি ঠিক করেছিলেন বলেও রিপোর্টে লেখা হয়েছে। কিন্তু ঘটনা হল, ১৭ জুন মুখ্যমন্ত্রীর ওই কামদুনি সফর গোড়া থেকেই অত্যন্ত গোপন রাখা হয়েছিল। ফলে গ্রামের মহিলারা কী করে আগেভাগে সেই সফরের কথা জেনে গেলেন, সেই প্রশ্নও থাকছে।
সে দিন বিক্ষোভের মুখে পড়ার পর মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাস্থলেই বলেছিলেন, “কামদুনিতে ঢুকেই দেখি লাল পতাকায় চার দিক ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তখনই বুঝেছিলাম, কোথাও একটা পরিকল্পনা ছকে রাখা হয়েছে। যদিও এই ধরনের কাজ যারা করেছে তারা বহিরাগত।” |
কামদুনিতে ধর্ষিত ও নিহত কলেজছাত্রীর পরিজনদের
সাংবাদিক বৈঠক। শুক্রবার নিজেদের বাড়িতে।—নিজস্ব চিত্র |
কামদুনি ও তার আশপাশের ছ’জন মহিলাকে চিহ্নিত করেছে রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ। তাঁরা হলেন টুম্পা কয়াল, মৌসুমী কয়াল, জবা হাজরা, মিতা কয়াল, সুচিত্রা মণ্ডল এবং অপর্ণা। স্বরাষ্ট্র দফতরে দেওয়া ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ার দু’দিন আগেই এঁরা বিক্ষোভ কর্মসূচি ঠিক করে ফেলেছিলেন। নির্যাতিতার পরিবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী যে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করবেন, তার বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত সে দিনই নেওয়া হয়েছিল। গোয়েন্দাদের অনুমান, ওই বৈঠকে কিছু বহিরাগত মহিলাও ছিলেন। তাঁরা সকলেই সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত।
রিপোর্টে টুম্পা-মৌসুমী-সহ ওই ছ’জন মহিলার পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যও পৃথক ভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে প্রত্যেকের বাপের বাড়ি-শ্বশুরবাড়ির বিস্তারিত বিবরণের পাশাপাশি যে যে আত্মীয়েরা সিপিএমের যুক্ত, সেই তথ্যও সবিস্তার দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র দফতরের ব্যাখ্যা, ধর্ষিতার আত্মীয়রা যে দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, সে দিনই তিনি তাঁদের বাড়ি যাওয়ার কথা বলেছিলেন। ফলে, এই মহিলারা তখন থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতার ছক কষতে শুরু করেছিলেন। এবং তাতে সিপিএমের ইন্ধন ছিল।
এ তো গেল গ্রামের কথা। দিল্লির সেন্ট জোন্স কলেজের অধ্যাপিকা তাপসী চট্টোপাধ্যায় কেন প্রতি দিন কামদুনি যাচ্ছেন, তা-ও খতিয়ে দেখা শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। স্বরাষ্ট্র দফতর তাঁদের খোঁজখবর করে দেখতে বলেছে, স্থানীয় মহিলাদের সচেতন করাই কি ওই অধ্যাপিকার একমাত্র উদ্দেশ্য, নাকি এর পিছনে কামদুনিকে নন্দীগ্রাম বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে।
গত কয়েক দিনের মতো শুক্রবারও কামদুনি গিয়েছিলেন তাপসীদেবী। তিনি এ দিন বলেন, “এ মাসের ১০ তারিখে প্রথম কামদুনি যাই। সে দিনই পুলিশ আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমি তাদের সব কিছুই জানিয়েছি। কেন পুলিশ আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? ব্যবস্থা নিক না।” তাপসীদেবী বলেন, “আমার এক আত্মীয়ার সঙ্গে একই ঘটনা ঘটেছে। খবরের কাগজে এই ঘটনা আমাকে নাড়া দিয়েছিল। সেই কারণেই আমি ছুটে এসেছি। আমার অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই।” |