মুখ্যমন্ত্রীর মুখরক্ষায় ফরেন্সিক রিপোর্ট ছাড়াই কামদুনি কাণ্ডের চার্জশিট দিতে চলেছে সিআইডি।
ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ওই ঘটনার ১৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হবে বলে প্রথমে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও চার্জশিট না হওয়ায় ধৈর্য হারাচ্ছিল কামদুনি। এর পর বৃহস্পতিবার উলুবড়িয়ার জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কামদুনির মামলায় ২৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা হবে।” প্রশাসনের একাংশের মতে, সম্ভবত ২৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়ার কথাই বলতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ঘটনার দিন থেকে ধরলে আজ, শনিবারই ২৫ দিনের মধ্যে ২৩ দিন হয়ে যাচ্ছে। ফরেন্সিক দফতরের এক কর্তা বৃহস্পতিবারই জানান, রিপোর্ট তৈরি করতে আরও অন্তত দিন সাতেক লাগবে। তা ছাড়া, কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি থেকেও কিছু তথ্য পাওয়া বাকি। পরিস্থিতি যা, তাতে ফরেন্সিক রিপোর্ট-সহ ২৫ দিনের মধ্যেও চার্জশিট দেওয়া আদৌ সম্ভব নয়।
এই পরিস্থিতিতে আজ বারাসত আদালতে কামদুনির ধর্ষণ ও খুনের মামলায় চার্জশিট দেওয়া হতে পারে বলে সিআইডি সূত্রের দাবি। শুক্রবার এডিজি (সিআইডি) শিবাজী ঘোষ বলেন, “ফরেন্সিক রিপোর্ট বাদ দিয়েই আদালতে চার্জশিট দেব। ফরেন্সিক রিপোর্ট পেলে তা অতিরিক্ত চার্জশিট আকারে পেশ করা হবে।” সিআইডি সূত্রের দাবি, ফরেন্সিক রিপোর্ট ছাড়া চার্জশিট জমা দেওয়া কোনও নতুন ঘটনা নয়। অনেক সময়েই মূল চার্জশিট আগে দেওয়া হয়। পরে ফরেন্সিক রিপোর্ট-সহ অন্যান্য তথ্য মিললে তা ফের ‘সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট’ হিসেবে আদালতে পেশ করেন তদন্তকারীরা।
তবে ফরেন্সিক রিপোর্ট ছাড়া বিচারের সময় মামলাটি যে দুর্বল হয়ে পড়বে, তা মেনে নিচ্ছেন পুলিশকর্তারা। সিআইডি-র এক কর্তা বলছেন, ‘‘খুব শীঘ্রই ফরেন্সিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।” অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, খুন-সহ একাধিক অপরাধের চার্জশিট পেশ করা হচ্ছে বলে সিআইডি সূত্রের খবর। ইতিমধ্যে দুই অভিযুক্ত গোপন জবানবন্দি দিয়েছে। ক’জন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানও নথিভুক্ত করা হয়েছে।
৭ জুন দুপুরে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বারাসতের কামদুনিতে ওই কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করে এলাকার কয়েক জন দুষ্কৃতী। এর পরেই উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা। মৃতদেহ আটকে রেখে চলে বিক্ষোভ। তদন্তভার হাতে নিয়ে সিআইডি মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করে। তবে এক জন এখনও ফেরার। তার উপর মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত দেওয়া সময়সীমার মধ্যে চার্জশিট না হওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে কামদুনির মানুষের ক্ষোভ ফুটে বেরোচ্ছিল। এ দিন দুপুরে নিহত ছাত্রীর পরিবার রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে বলে, “মুখ্যমন্ত্রীর কোনও প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়িত হয়নি। চার্জশিটের সময়সীমাও পেরিয়ে গিয়েছে। ঠিক মতো চার্জশিট এবং এক মাসের মধ্যে দোষীদের ফাঁসি না হলে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হবে।”
বিকেলে ফরেন্সিক রিপোর্ট ছাড়া চার্জশিট জমার সিদ্ধান্ত শোনার পরেও ক্ষোভ কমেনি নিহত ছাত্রীর পরিবারের। তাঁর দাদা বলেন, “চার্জশিটে গরমিল থাকলে আমরা গ্রামবাসীদের নিয়ে ফের আন্দোলনে নামব।”
শুধু তদন্ত নয়, এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে এখনও অসন্তুষ্ট কামদুনির বাসিন্দারা। গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, “ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এলাকায় আলো লাগানো থেকে শুরু করে নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু তার কোনওটাই এখনও হয়নি।”
|
শিশুকে যৌন নিগ্রহ বারাসতে |
কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের পরে বারাসতে এ বার ছ’বছরের এক শিশুকন্যার উপরে যৌন নিগ্রহ চালানোর অভিযোগ উঠল। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত জামের আলি নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশি সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বিকেলে শিশুটি বারাসতের কাজীপাড়া এলাকায় বাড়ি সংলগ্ন মাঠে খেলছিল। অভিযোগ, প্রতিবেশী জামের তাকে ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। বারাসত
থানায় দায়ের করা অভিযোগে নাবালিকার পরিবার জানিয়েছে, জামের শিশুটির উপরে যৌন অত্যাচার চালায়। কাউকে জানালে মেয়েটিকে খুন করা হবে বলে হুমকি দেয় সে। বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুটি। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বারাসত হাসপাতালে। তার পরেই মেয়েটি পরিবারের কাছে সব খুলে বলে। রাতেই বারাসত থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। শুক্রবার সকালে পুলিশ গ্রেফতার করে জামেরকে। শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে।
|