ফরেন্সিক রিপোর্ট আসতে দেরি
কামদুনির চার্জশিট জমা পড়েনি তিন সপ্তাহেও
কামদুনির ঘটনায় ১৫ দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের চার্জশিট দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, এক মাসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। আজ, শুক্রবার কামদুনির ঘটনার তিন সপ্তাহ পূর্ণ হচ্ছে। এবং চার্জশিট জমা পড়েনি। ফলে এক মাসের মধ্যে বিচার শুরু হওয়া কঠিন বলেই মনে করছেন পুলিশ কর্তারা। যদিও এ দিনই উলুবেড়িয়ার এক জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “২৫ দিনের মধ্যেই সব ব্যবস্থা করা হবে।”
কিন্তু এখনও চার্জশিট জমা পড়ল না কেন?
বৃহস্পতিবার রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “ফরেন্সিক রিপোর্ট না আসাতেই কামদুনির ঘটনায় চার্জশিট দেওয়া যাচ্ছে না।” শুধু রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি নয়, কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির রিপোর্টেরও অপেক্ষা করছেন তদন্তকারীরা। প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের ব্যাখ্যা, রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির বেহাল পরিকাঠামোর জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। ফরেন্সিক দফতরের একাংশ পাল্টা বলছেন, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে ফরেন্সিক দফতরের পরিকাঠামো মুখ্যমন্ত্রী জানেন। তড়িঘড়ি ১৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়ার কথা তিনি কী ভাবে বললেন, তাই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
গত ৭ জুন ভরদুপুরে বারাসত থানা এলাকার কামদুনিতে এক কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়। তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় রাজ্যে। গ্রেফতার করা হয় আট অভিযুক্তকে। খোঁজ চলছে আরও এক জনের। ঘটনার পর খোদ মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ১৫ দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে। এক মাসের মধ্যে শুরু হবে বিচারপর্ব। কিছু দিন আগেই মালদার ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে একটি ধর্ষণ মামলায় ২৭ দিনের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সেই উদাহরণ টেনে বলেন, ‘‘একটি মামলায় ২৭ দিনে ফয়সালা হয়েছে। কামদুনির মামলায় ২৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা হবে।” প্রশ্ন উঠেছে, মালদহের মামলায় চার দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা পড়েছিল। কামদুনিতে তা হয়নি। প্রশাসনের ভিতরেই একাংশের মত, মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত এ দিন ২৫ দিনের মধ্যে কামদুনির চার্জশিট গঠনের কথা বলতে চেয়েছেন।
কামদুনি মামলায় এখন কী অবস্থা তদন্তের?
সিআইডি-র একটি সূত্র জানাচ্ছে, পুলিশি হেফাজতে বারবার জেরা করা হয়েছে ধৃতদের। তাতে দেখা গিয়েছে, ধৃত আট জনই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। তাই আট জনকেই অভিযুক্ত সাব্যস্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই দুই অভিযুক্ত বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছে। গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে কয়েক জন সাক্ষীরও। কিন্তু ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি থেকে রিপোর্ট না মেলায় চার্জশিট জমা দেওয়া যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের এক পুলিশকতার্র বক্তব্য, “ফরেন্সিক রিপোর্টের এই দীর্ঘসূত্রিতাই বাস্তব চিত্র। কামদুনি বড় ঘটনা বলে বিষয়টি সামনে আসছে।”
রিপোর্ট জমা দিতে এত সময় লাগছে কেন?
স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির পরিকাঠামোগত দুর্বলতাই এর জন্য দায়ী। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বহু মামলার নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য জমা পড়েছে। কিন্তু লোকবলের অভাবে তার রিপোর্ট মিলছে না। ফরেন্সিক দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে বিভিন্ন ঘটনার কয়েক হাজার নমুনা রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পড়ে রয়েছে। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা
রয়েছে বলেও ওই সূত্রের দাবি। তবে কামদুনির মতো তোলপাড় তুলে দেওয়া ঘটনার ক্ষেত্রে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বিশেষ নজর দেওয়া হল না কেন, সে প্রশ্নও মহাকরণের অন্দরে উঠতে শুরু করেছে। এ বিষয়ে ফরেন্সিক দফতরের এক কর্তা বলেন, “কামদুনির রিপোর্ট গুরুত্ব দিয়েই তৈরি করা হচ্ছে। চুল, জামাকাপড়, রক্ত-বীর্যের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। জামাকাপড়ের নমুনা এর পরে সেরোলজি পরীক্ষায় পাঠানো হবে।” তবে পুরো রিপোর্ট তৈরি করতে আরও সাত দিন সময় লেগে যেতে পারে বলে তিনি এ দিন জানিয়েছেন।
সিআইডি সূত্রের খবর, আদালতের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির কাছে নিহত ছাত্রীর গায়ে লেগে থাকা মাটি, অভিযুক্তদের গায়ে নখের আঁচড়-সহ ২১টি বিষয় সম্পর্কে তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এক তদন্তকারী জানান, ওই ২১টি বিষয় জানতে বিশেষজ্ঞদের অন্তত ৫২টি পরীক্ষা করতে হবে। সেই কারণেই রিপোর্ট আসতে দেরি হচ্ছে বলে তদন্তকারীদের ধারণা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.