যে খুনের ঘটনায় সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর নামে অভিযোগ দায়ের হওয়ায় বিরোধীরা সরব, তা আসলে মদের আসরে গোলমালের পরিণতি বলেই পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে! প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ছায়াসঙ্গীর দায়ের কোপেই মারা গিয়েছেন বারুইপুরের হাড়দা পঞ্চায়েত এলাকার কুড়ালি গ্রামের বাসিন্দা শিবরামবাবুকে। সেই সঙ্গীও এলাকার সক্রিয় তৃণমূল কর্মী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার বেলা ১১টা থেকেই বাড়ির অদূরে কানু সাঁপুইয়ের বাড়িতে মদের আসর বসেছিল। কানু ও শিবরাম ছাড়া অরবিন্দু ও দীনবন্ধু নামে আরও দু’জন সেখানে ছিলেন। পুলিশ দীনবন্ধুকে গ্রেফতার করেছে। তাকে বৃহস্পতিবার বারুইপুর মহকুমা আদালতে হাজির করা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। আর এক সহযোগী অরবিন্দ সাঁপুইকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান তদন্তকারী অফিসারা।
দীনবন্ধু ও অরবিন্দকে জেরায় উঠে এসেছে, ঘটনার দিন বেলা ১টা নাগাদ মদ ফুরিয়ে গিয়েছিল। কানু ফের মদ কিনে নিয়ে আসেন। বেলা ২টো নাগাদ কানুর সঙ্গে বচসা বাধে শিবরামের। আচমকাই দা দিয়ে শিবরামের মাথায় ও গলায় কোপ মারে কানু। দেহটি বারান্দায় তুলে মাদুর দিয়ে মুড়ে দেয় সে। এর পরে তিন জনই বাড়ি ছেড়ে পালায়। উধাও হয়ে যান কানুর স্ত্রীও।
পাঁচিল ঘেরা কানুর বাড়িতে গিয়ে এ দিন দেখা গিয়েছে, সদর দরজার পাশের রক্তের দাগ। মাটির বারান্দায় রক্তাক্ত মাদুর। বুধবার রাতেই কানুর বাড়ি থেকে একাধিক মদের খালি মদের বোতল ও রক্তমাখা দাটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শী মহিলার বয়ান ভিডিওগ্রাফিও করা হয়েছে বলে জেলা পুলিশের বক্তব্য।
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার গভীর রাতে শিবরামের ভাই সুশান্ত বারুইপুর থানায় কানু সাঁপুই, রাজু নস্কর, বিমল নস্কর, যুক্ত মণ্ডল ও সুজনবাবুর নামে এফআইআর দায়ের করেন। থানার বাইরে উপস্থিত বারুইপুর মহকুমা আদালতের এক আইনজীবীর পরামর্শেই পাঁচ নম্বরে সুজনবাবুর নাম লেখা হয়েছে বলে পুলিশের এক সূত্রের ইঙ্গিত। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি জেলা এসপি প্রবীণ ত্রিপাঠি। তবে এ দিন কিছু স্থানীয় তৃণমূল নেতা ওই এফআইআর থেকে সুজনবাবুর নাম বাদ দেওয়ার জন্য তদন্তকারী অফিসারদের কাছে মৌখিক আবেদন করেন। ওই আবেদন মানা হয়নি বলে পুলিশ সূত্রের খবর। শিবরামবাবুর বাড়িতে গিয়ে এ দিন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আশ্বাস দেন, পরিবারের কারও কাজের ব্যবস্থা করা হবে। সঙ্গে ছিলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। |