প্রচার সেরে বাড়ি ফেরার আগে খুন হয়ে গেলেন পঞ্চায়েত সমিতির এক তৃণমূল প্রার্থী। বুধবার বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর থানার হাড়দায়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম শ্রীদাম নস্কর (৪২)। ঘটনায় যুক্ত সন্দেহে রাতে দু’জন গ্রেফতার হয়েছে, এক জন পলাতক। এই ঘটনায় তৃণমূলের তরফে সিপিএমের দিকে আঙুল তোলা হলেও সিপিএমের দাবি, নিজের দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই শ্রীদামবাবুকে মরতে হয়েছে।
বারুইপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্রীদামবাবু এ বারও পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন হাড়দা পঞ্চায়েত থেকে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ: এ দিন দুপুরে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার সেরে শ্রীদামবাবু যখন কুরালি গ্রামের বাড়িতে ফিরছেন, তখন এক দল দুষ্কৃতী তাঁর উপরে হামলা চালায়। তাঁকে চপার দিয়ে কোপানো হয়। পুলিশ-সূত্রের খবর: গুরুতর জখম শ্রীদামবাবুকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে। অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকলে তাঁকে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে আনার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু পথেই তিনি মারা যান।
পুলিশ তদন্তে নেমে রাতে দীনবন্ধু সাঁপুই ও অরবিন্দ সাঁপুই নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ইতিমধ্যে শ্রীদাম-হত্যার জন্য সিপিএমকে দায়ী করেছেন। কলকাতার মেয়র তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল চেয়ারম্যান শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সুজন চক্রবর্তী পরিকল্পিত ভাবে দুষ্কৃতীদের দিয়ে ওই তৃণমূল প্রার্থীকে খুন করিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মেদিনীপুরে। আমরা বিষয়টি তাঁকে জানিয়ে দিয়েছি।” |
আজ, বৃহস্পতিবার দলের নেতারা শ্রীদামবাবুর বাড়ি যাবেন বলে জানিয়ে শোভনবাবুর মন্তব্য, “সিপিএম-ই সন্ত্রাসের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।”
সিপিএম নেতৃত্বের কী বক্তব্য?
দলের জেলা সম্পাদক সুজনবাবুর পাল্টা দাবি, “সিপিএম খুনের রাজনীতি করে না। ওই তৃণমূল প্রার্থী তাঁর দলের কর্মীদের সঙ্গে বসে নেশা করছিলেন। এবং তখনই যে তিনি দলীয় কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হন, জেলা পুলিশের আধিকারিকেরা তা জানেন। তৃণমূল মিথ্যে প্রচার করছে।”
কিন্তু এ ক্ষেত্রে তো সরাসরি তাঁরই নাম বলেছেন মেয়র!
সুজনবাবুর প্রতিক্রিয়া, “সারদা কেলেঙ্কারিতেও মুকুল রায়দের বদলে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছিল! সেটা ব্যর্থ হয়েছে। এখন আবার হয়তো নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে। এ সব তৃণমূলের নোংরা রাজনীতিরই উদাহরণ।” পুলিশ কী বলছে?
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার কঙ্করপ্রসাদ বারুই শুধু বলেন, “তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” যদিও জেলা পুলিশের একাংশের বক্তব্য: এ দিন প্রচার সেরে বাড়ি ফেরার পথে শ্রীদামবাবু এক দলীয় কর্মীর বাড়ি গিয়েছিলেন। সেখানে ক’জনের সঙ্গে তাঁর বচসা হয়। তখন দলেরই এক কর্মী চপার নিয়ে তাঁর উপরে চড়াও হয় বলে পুলিশের এই অংশের দাবি। “অফিসারেরা গিয়ে পুরো ব্যাপারটা খতিয়ে দেখেছেন। প্রাথমিক ভাবে খুনে জড়িত সন্দেহে কয়েক জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।” জানান জেলা পুলিশের এক কর্তা। |