|
|
|
|
নিয়োগে স্বচ্ছতা চায় কেন্দ্র |
ফাঁকা বহু শীর্ষ পদ, রেল পরিষেবা নিয়ে চিন্তায় কর্তারা
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
রেলবোর্ডের মোট সদস্য সাত। তার মধ্যে তিনটি পদ ফাঁকা পাঁচ মাস ধরে। ৩০ জুন অবসর নিচ্ছেন খোদ চেয়ারম্যান। বোর্ডের অধীনে ২৬টি জোন। ছয়টি জোনে জেনারেল ম্যানেজারের পদ ফাঁকা অনেক দিন ধরে। আরও এক জন অবসর নেওয়ার মুখে। এ ছাড়া, ২৬টি ডিভিশনাল ম্যানেজারের (ডিআরএম) পদও শূন্য।
দীর্ঘদিন ধরে গোটা দেশে রেল পরিষেবার যা হাল, তারই ছবি যেন ধরা পড়েছে রেল প্রশাসনের শীর্ষে। রেল কর্তাদেরই একাংশ বলছেন, এমন অবস্থায় রেলের চাকা ঘুরবে। কিন্তু রেলের বিরাট কর্মকাণ্ড যে ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা নড়বড়েহয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে নিয়োগ হচ্ছে না কেন? রেল সূত্রে খবর, কিছু দিন আগেই এক রেলকর্তা নিয়োগ নিয়ে ঘুষ দেওয়া-নেওয়ার অভিযোগে রাজনীতি সরগরম হয়ে ওঠে। অভিযোগ ওঠে তৎকালীন রেলমন্ত্রী পবন বনশলের নিকটাত্মীয়ের বিরুদ্ধে। বনশলকে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়। রেলবোর্ড সূত্রের খবর, ওই ঘটনার পরে নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার দিকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে বলেছেন ক্যাবিনেট সচিব।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বোর্ডের যে শীর্ষ পদগুলি খালি পড়ে রয়েছে সেগুলি হল, মেম্বার ট্রাফিক (দায়িত্ব, ট্রেন চলাচল), মেম্বার স্টাফ (দায়িত্ব, কর্মীদের দেখভাল), ফিনান্সিয়াল কমিশনার (দায়িত্ব, আর্থিক বিষয়) এবং সর্বোপরি রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান। মেম্বার ট্রাফিক সাধারণত ট্রেন চলাচলের যাবতীয় বিষয় দেখভাল করেন।
পাশাপাশি রেলের বাণিজ্যিক স্বার্থও তিনি দেখেন। রেলের প্রতি বছরেই আয়ের একটি লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়। কিন্তু শীর্ষ কর্তাই যদি না থাকেন তবে ওই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন রেলের কর্মী-অফিসারেরা। তাঁদের মতে, এমনিতেই রেলের এখন আয় কমেছে। এই অবস্থায় আবার যদি প্রশাসনিক কাজেও খামতি থাকে, তবে রেলের ক্ষতিও হতে পারে। রেলে কর্মী সংখ্যা ১৪ লক্ষের কাছাকাছি। রেলবোর্ডে সংশ্লিষ্ট সদস্য না থাকলে এই বিরাট সংখ্যক কর্মীর ভালমন্দের বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব পায় না বলে অনেকেই মনে করছেন।
দেশে রেলের সব জোনে যত পরিকল্পনা রূপায়ণ হয়, সেগুলির জন্য টাকা বরাদ্দ করেন ফিনান্সিয়াল কমিশনার। বিভিন্ন কাজে জোনগুলিকে বরাদ্দ করা টাকার নজরদারিও তাঁরই দায়িত্ব। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাঁকা পড়ে থাকলে কাজ করতে গিয়ে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয় বলে জানিয়েছেন রেলের কর্তারা।
জেনারেল ম্যানেজারের পদে লোক না থাকাও সংশ্লিষ্ট জোনের পক্ষে খুবই সমস্যার বলে মনে করেন রেলবোর্ডের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুর। তাঁর কথায়, “চেয়ারম্যান যেমন রেলবোর্ডের সর্বোচ্চ কর্তা, জোনের ক্ষেত্রে সেই দায়িত্ব জেনারেল ম্যানেজারের। তিনি না থাকলে জোনের কাজকর্ম বিঘ্নিত হয়।” যে যে জোনে জেনারেল ম্যানেজারের পদ ফাঁকা সেগুলি হল, পশ্চিম রেল, মধ্য রেল, দক্ষিণ-পূর্ব-মধ্য রেল, কলকাতা মেট্রো রেল, আইসিএফ প্যারাম্বুর ও দক্ষিণ-পূর্ব রেল ও বারাণসী ডিজেল লোকোমোটিভ।
শীর্ষ পদে নিয়োগ করা নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তাতে কী করে তাড়াতাড়ি ওই সব পদে নিয়োগ করা যাবে, তা ভেবেই পাচ্ছেন না রেল কর্তারা। আপাতত বোর্ড চেয়ারম্যানের পদে যে তিন জনের নাম সামনের সারিতে উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার রণজিৎ ভির্দি অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন।
বোর্ড সূত্রে খবর, বোর্ডের সদস্য পদ পেতে পারেন জেনারেল ম্যানেজাররাই। কিন্তু তাঁদের অনেকেরই বিরুদ্ধে আবার কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের তদন্ত চলছে। রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান পদে বিবেচনার জন্য আপাতত দশ জনের নামের তালিকা হয়েছে। পাশাপাশি বোর্ড সদস্য করার জন্যও আলাদা তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খার্গে বলেন, “যাঁদের নামে ভিজিল্যান্স কমিশনের ছাড়পত্র মিলেছে, তাঁদের মধ্যে থেকেই বোর্ড চেয়ারম্যান এবং বোর্ড সদস্য নিয়োগ করা হবে।” তবে নিয়োগ সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটির বৈঠকের পরে প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত হবে বলেও রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন।
রেলবোর্ডের শীর্ষ পদে লোক না থাকায় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও যাত্রী পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তাঁর কথায়, “মুণ্ড ছাড়া ধড় বাঁচে না কি? এটা মারাত্মক ব্যাপার। খুব তাড়াতাড়ি ওই সব শীর্ষ পদে লোক দরকার। যাতে তাড়াতাড়ি মন্ত্রিসভার অনুমোদন মেলে সে
জন্য ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি।”
এমনিতেই গত ৪ বছরে সাত জন মন্ত্রী বদলে রেলের কাজকর্ম অনেকটাই বিঘ্নিত হয়েছে বলে রেলকর্তাদের অনেকেই। তার উপরে রেল বোর্ড ও জোনগুলির শীর্ষ পদগুলি অনেক দিন ধরে ফাঁকা পড়ে থাকায় আরও খারাপ হয়েছে পরিস্থিতি। |
পুরনো খবর: রেলকর্তা থেকে গ্যাংম্যান, বিপদ বাড়াচ্ছে শূন্য পদ |
|
|
|
|
|