পঞ্চায়েত ভোটে নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েনের প্রশ্নে কেউই যে তাদের আগেকার অবস্থান থেকে নড়ছে না, আজ তা কার্যত পরিষ্কার করে দিয়েছে তিন পক্ষ পশ্চিমবঙ্গ সরকার, রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
মন্ত্রক সূত্রে আজ বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে পাঠানোর মতো বাহিনী যে তাদের হাতে নেই, সেটাই তারা আগামী কাল সুপ্রিম কোর্টে জানাতে চলেছে। অন্য দিকে মহাকরণের খবর: রাজ্য সরকারের তরফে শীর্ষ আদালতকে কাল বলা হবে, রাজ্যের হাতে থাকা বাহিনী দিয়েই যে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। সুপ্রিম কোর্টে পঞ্চায়েত-মামলা তদারকি করতে রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দিল্লি এসেছেন। সঙ্গে এসেছেন জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় ও পঞ্চায়েত-সচিব সৌরভ দাস।
চন্দ্রিমাদেবী আজ রাজধানীতে দিনভর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। রাত পর্যন্ত বৈঠক করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তথা প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের সঙ্গে, কাল যিনি রাজ্য সরকারের হয়ে সওয়াল করবেন। মহাকরণ-সূত্রের খবর: কাল সুপ্রিম কোর্ট যদি তিনের বেশি দফায় ভোট নিতে বলে, রাজ্যের আপত্তি নেই। কিন্তু সে ব্যাপারে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে কি না, ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীদের ভবিষ্যৎ কী, কিংবা মঙ্গলবার মেয়াদ ফুরোতে চলা পঞ্চায়েতগুলোয় কী হবে, সে সব খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ জানাবে রাজ্য।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন কী বলবে শীর্ষ আদালতকে?
কমিশন-সূত্রের বক্তব্য: পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পেশের সময় থেকে শুরু করে এখনকার প্রচারপর্ব ইস্তক পশ্চিমবঙ্গে কত হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে, কত লোকের মৃত্যু হয়েছে, সেই সব সেই তালিকা কাল সুপ্রিম কোর্টে জমা দেবেন তাদের কৌঁসুলিরা। উল্লেখ্য, রাজ্যে অতি স্পর্শকাতর ও স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা ও সেগুলোয় কত বাহিনী মোতায়েন প্রয়োজন, কলকাতা হাইকোর্ট তা স্থির করে দিয়েছে।
আর কমিশন আজ ফের জানিয়েছে, সেই পরিমাণ বাহিনী না-পেলে রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু পঞ্চায়েত ভোট আয়োজন সম্ভব নয়। কাল সুপ্রিম কোর্টেও তারা সেটাই বলবে বলে কমিশন-সূত্রের দাবি।
মামলার সূত্রে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে আজ দিল্লি গিয়েছেন। কমিশনের সচিব তাপস রায় অবশ্য গত সপ্তাহ থেকে দিল্লিতে। কমিশন যে ভাবে মামলাটিকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে গিয়েছে, রাজ্য সরকার তার সমালোচনা করলেও রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন কিন্তু এ বিষয়ে কমিশনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আজ কলকাতায় তাঁর মন্তব্য, “ভোট করানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক। ভোট করতেই হবে। কী ভাবে ভোট হবে, তার উপায় খুঁজতে হবে। সে জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী দরকার।”
পাশাপাশি কমিশন তাদের কাজে নাক গলানোর অভিযোগ তুলেছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। রাজ্য যাতে সংবিধান মেনে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনের নির্দেশ মানতে বাধ্য হয়, তার স্বার্থে সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়েছে তারা। চন্দ্রিমাদেবীর অবশ্য দাবি, রাজ্য সরকার কখনওই নিজের গণ্ডি পেরোয়নি। “বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আমরা আশাবাদী যে, কালই ফয়সালা হয়ে যাবে। আমরা সুবিচার পাব।” আজ বলেন আইনমন্ত্রী।
কিন্তু প্রথম দফার ভোটগ্রহণ যেখানে ২ জুলাই নির্ধারিত, সেখানে কাল যে ফয়সালাই হোক না কেন, ভোট-প্রক্রিয়ায় সমস্যা হবে না?
প্রশ্নটা স্বাভাবিক ভাবেই মাথা চাড়া দিচ্ছে। যার জবাবে চন্দ্রিমাদেবী বলছেন, “নিরাপত্তাবাহিনী তো দু’দিন আগেই মোতায়েন করা হয়! কাজেই কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।” কলকাতায় রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও আজ বলেন, “কাল সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত জানিয়ে
দেওয়ার পরেও দরকারে ২ জুলাই ভোট করাতে সমস্যা হবে না।”
যদিও কমিশনের মতে, তা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।
পঞ্চায়েতমন্ত্রী এ দিনও দাবি করেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর না-থাকাটা সুষ্ঠু ভাবে পঞ্চায়েত ভোট আয়োজনের পথে কোনও প্রতিবন্ধক হতে পারে না। সুব্রতবাবুর প্রশ্ন, “আগে কবে, কোন রাজ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আধা সামরিক বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে? তিন মাস ধরে তো এ কথাই বলে আসছি!” হাইকোর্টের প্রস্তাব মেনে ভোটের নির্ঘণ্ট ভেঙে দফা বাড়াতেও যে রাজ্য সরকার রাজি হয়েছিল, সুব্রতবাবু আজ তারও উল্লেখ করেছেন।
অর্থাৎ পঞ্চায়েত-জটিলতার দায় প্রকারান্তরে নির্বাচন কমিশনের ঘাড়েই ফের চাপিয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী।
|