এমনিতেই হিমশিম, উদ্বেগ বাড়ল বিডিওদের
ঙ্কট যে ঘনাচ্ছে, তার পূর্বাভাস ছিল অনেক আগেই। আপৎকালে তবু দেখা গেল, প্রস্তুতি কিছুই নেই।
অষ্টম পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই শেষ হচ্ছে নির্বাচিত পঞ্চায়েতগুলির মেয়াদ, তা সকলেই জানতেন। তাই পঞ্চায়েতের কাজ সামলাতে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে, তাও জানা ছিল। তা সত্ত্বেও সাময়িক প্রশাসনিক ব্যবস্থা বিষয়ে পঞ্চায়েত দফতরের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্য জুড়ে বিভ্রান্তি তৈরি হল। পঞ্চায়েতের দায়িত্ব নেবেন যে প্রশাসনিক কর্তারা, ঠিক কী কী কাজ তাঁদের করতে হবে, তাঁদের অধিকারই বা কতখানি, সে বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে কিছুই বলা হয়নি। পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারাও স্পষ্ট কিছু জানাননি। ফলে কাজের নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দায়িত্ব নিতে চাইছেন না অনেক বিডিও। নানা জেলার প্রশাসনিক মহলে আশঙ্কা, এই বিভ্রান্তির ফলে উন্নয়নের কাজ থমকে যাবে রাজ্যে।
বুধবার পঞ্চায়েত দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, পঞ্চায়েতের নানা স্তরের হেফাজত নেবেন বিডিও, জেলাশাসক বা তাঁদের মনোনীত অফিসাররা। তাঁদের কাজ হবে পঞ্চায়েতের ‘ডে-টু-ডে’ (দৈনন্দিন) কাজ চালানো। সেই কাজের মধ্যে কেবলমাত্র কর্মীদের মাইনে দেওয়ার উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু তাঁদের আর কী কী এক্তিয়ার রয়েছে, তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে।
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
কী ধরনের ধন্দ? বিজ্ঞপ্তিতে কেবলমাত্র পঞ্চায়েতের নথিপত্র ও নগদ টাকার ‘হেফাজত’ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, ‘প্রশাসক’ (অ্যাডমিনিস্ট্রেটর) হিসেবে সরকারি অফিসারকে নিয়োগ করার কথা বলা হয়নি। প্রশাসকের আর্থিক ক্ষমতা পঞ্চায়েত কর্তাদের মতোই থাকে। কিন্তু হেফাজতকারীর স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কতটা, তা স্পষ্ট নয়। সুতরাং কোনও উন্নয়নের পরিকল্পনা বা প্রকল্প, যা আগেই অনুমোদিত হয়ে নেই, সেগুলির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অফিসারদের থাকবে কি না, তা ধোঁয়াশায়। নির্বাচন আসন্ন বলে রাজ্যের বহু গ্রাম পঞ্চায়েতে চলতি আর্থিক বছরের ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ বা বাজেট অনুমোদন করা হয়নি। সেখানে হেফাজতকারী অফিসার কী করে উন্নয়নের কাজ শুরু করবেন?
জন্ম-মৃত্যুর সার্টিফিকেট, জাতি-জনজাতি শংসাপত্র, বাসস্থানের শংসাপত্র কিংবা আয়ের শংসাপত্র দেন গ্রাম প্রধান। এইগুলি কি বিডিওরা দিতে পারবেন?
কৃষি কিংবা কারিগরি শিল্পের অনুদানের জন্য প্রাপক তালিকা তৈরি হয় পঞ্চায়েত থেকে। সেই তালিকা কি অফিসাররা অনুমোদন করতে পারবেন?
এ সব প্রশ্নে পঞ্চায়েত আইনে কী বলা হয়েছে, নানা সময়ে মামলায় আদালত কী রায় দিয়েছে, অন্য রাজ্যে কী দৃষ্টান্ত রয়েছে, এমন নানা বিষয় তুলে এ দিন জেলায় জেলায় বিতর্ক চলেছে সরকারি দফতরগুলোতে। বহু প্রশ্নও এসেছে পঞ্চায়েত দফতরে। পঞ্চায়েত দফতর অবশ্য কোনও লিখিত উত্তর দিতে পারেনি। জেলা স্তরে বলে দেওয়া হয়েছে, আপাতত নির্দিষ্ট অফিসাররা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির দায়িত্ব নিন, পরে ব্যাখ্যা দিয়ে দেওয়া হবে।
কিন্তু আইনের গলিঘুঁজি, বা প্রশাসনিক নিয়মের জটিলতার বাইরেও বারবার উঠে এসেছে একটা মস্ত প্রশ্ন। তা হল, কার্যক্ষেত্রে বিডিও-দের পক্ষে কী করে এতগুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের ‘হেফাজত’ নেওয়া সম্ভব? মেদিনীপুরের এক বিডিও বলেন, এক একটি ব্লকে ১৫ টি পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। ফলে ব্লকের এক একজন অফিসারকে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতেরও দায়িত্ব সামলাতে হবে। ব্লক অফিস থেকে কোনও কোনও গ্রাম পঞ্চায়েতের দুরত্ব ২০ কিলোমিটারও রয়েছে। ব্লক অফিসে হাজিরা দিয়ে তিনি কী ভাবে এতগুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের দায়িত্ব সামলাবেন! আবার গ্রাম পঞ্চায়েতের যাবতীয় নথি ব্লক অফিসে তুলে নিয়ে আসাও কঠিন। হঠাৎ কোনও কারণে সেই নথির প্রয়োজন হতে পারে। আর্থিক দায়ের কারণে নথিগুলিকে গুরুত্ব না দিয়েও উপায় নেই।
জঙ্গলমহলের দিকে তাকালে সমস্যার ব্যাপকতা আর জটিলতা আরও স্পষ্ট হয়। মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা বলে বিপুল কেন্দ্রীয় অনুদান আসে। ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান, বিআরজিএফ, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার টাকায় সারা বছর প্রচুর কাজ চলে। নয়াগ্রাম ব্লকের ১২ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট গ্রাম-সংসদের সংখ্যা ৯০টি। লালগড় ব্লকের দশটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১৫টি গ্রাম-সংসদ। বেলপাহাড়ি ব্লকের দশটি গ্রাম পঞ্চায়েতে গ্রাম-সংসদের সংখ্যা ১২৮টি। বিডিও বা তার মনোনীত আধিকারিকের পক্ষে এতগুলি গ্রাম-সংসদ এলাকায় উন্নয়ন বিপুল কাজ কতখানি নজরদারি করা সম্ভব?
উন্নয়নের কাজ করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে কি না, সেই সংশয়ও থাকছে। উন্নয়ন প্রকল্পের কোন কাজটি আগে হবে, কোন উপভোক্তা অগ্রাধিকার পাবে, তা গ্রামসভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য। নতুন কাজের ক্ষেত্রে সেই সিদ্ধান্ত সরকারি আধিকারিকরা নিলে এলাকায় সংঘাত দেখা দিতে পারে, সেই আশঙ্কাও রয়েছে।
ফলে বিডিও, জেলাশাসক বা অন্যান্য অফিসাররা যেটুকু কাজ না করলে নয় সেটুকুই করবেন, এমন সম্ভাবনাই দেখা দিচ্ছে। যদি পঞ্চায়েত নির্বাচন যথাসময়ে হয়ে গিয়ে নতুন জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত দায়িত্ব নেন, তা হলে হয়তো সঙ্কট ঘনাবে না। কিন্তু যত দেরি হবে, উন্নয়নের কাজ ততই শিথিল হয়ে আসবে, সেই আশঙ্কাই করছেন প্রশাসনের কর্তারা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.