ব্লকগুলিতে কার্যত জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব কাজই করতে হয় বিডিও-দের। বিপিএল কার্ড বা জব কার্ড বিলি, পুকুরে মাছের মৃত্যু বা মুরগির মড়ক, প্রায় সব সমস্যাতেই গ্রামের মানুষ ছুটে যান বিডিও অফিসে। অথচ এই সব বিষয় দেখভাল করার দায়িত্ব যাঁদের, বিভিন্ন দফতরের সেই ব্লক স্তরের অফিসারদের উপরে বিডিও-দের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই! এমনকী এ ব্যাপারে সরকারি নির্দেশও নেই!
ডব্লিউবিসিএস (একজিকিউটিভ) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, উন্নয়নের স্বার্থে বিডিও-কে সংশ্লিষ্ট ব্লকের ‘প্রিন্সিপাল কো-অর্ডিনেটিং অফিসার’ হিসেবে ঘোষণা করুক সরকার। আজ, শনিবার টাউন হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে এই আর্জি-ই জানাবেন বিসিএস অফিসারেরা। ক্ষমতায় আসার পরে এই প্রথম বিসিএস অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিসিএস অফিসারদের এই দাবি অবশ্য নতুন নয়। অ্যাসোসিয়েশনের আগের কমিটিও বছর দুয়েক আগে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছে এই দাবি জানিয়েছিল। একাধিক বিসিএস অফিসার বলেন, “সরকারি নির্দেশ না থাকায় অন্য দফতরের ব্লক অফিসারদের অনুনয়-বিনয় করে কাজ করাতে হয় বিডিও-দের।
বিডিও হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়ে অধিকাংশ বিসিএস (একজিকিউটিভ) অফিসার যুগ্ম-সচিব হিসেবে অবসর নেন। খুব কম অফিসারই বিশেষ সচিব বা সচিব হন এবং হলেও এক বছরও ওই পদে কাজ করার সময় পান না। অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, যুগ্ম-সচিবের পদ পেতে এক জন বিসিএসের ২৪-২৫ বছর লেগে যায়। চাকরিতে যাতে বেশি উন্নতির সুযোগ মেলে, সেই কারণে যুগ্ম-সচিবের পদ বৃদ্ধির দাবি জানানো হবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে। বর্তমানে ১৪৫টি যুগ্ম-সচিব ও ১৮টি বিশেষ সচিবের পদ আছে। সেই সংখ্যা বাড়িয়ে যথাক্রমে ২০০ এবং ৪০ করার প্রস্তাব দেওয়া হবে মমতার কাছে।
বাম আমলে সর্বোচ্চ তিন জন বিসিএস অফিসারকে জেলাশাসক হিসেবে নিয়োগ করেছিল তৎকালীন সরকার। বর্তমানে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে দুই-এ। অ্যাসেসিয়েশনের বক্তব্য, ওড়িশা, অসম ও মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে ‘স্টেট ক্যাডার’ অফিসারদের অনেক বেশি সংখ্যায় জেলাশাসক এবং ডেপুটি কমিশনার পদে নিয়োগ করা হয়। এ রাজ্যে অন্তত পাঁচটি জেলায় বিসিএস অফিসারদের জেলাশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হোক। একই সঙ্গে আইএএস পদের অর্ধেক বিসিএস থেকে পূরণ করার দাবিও জানাবেন অফিসারেরা। তাঁদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অন্য রাজ্যের ‘স্টেট ক্যাডার’ অফিসারদের চাকরিতে অনেক তাড়াতাড়ি পদোন্নতি হয়। এখানে তা না হওয়ায় অফিসারদের মধ্যে হতাশা দানা বাঁধছে। মহাকরণ সূত্রের খবর, এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী পদক্ষেপ করেছেন। |