কর্মীদের স্বেচ্ছাবসরের শর্ত বহাল রেখেই মুমূর্ষু পরিবহণ নিগমগুলোর হাল ফেরাতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (এডিবি)-এর কাছে ঋণ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
কোন কোন শর্তে এডিবি’র ঋণ চাওয়া হবে, সে সংক্রান্ত পরিকল্পনা তৈরির জন্য রাজ্য সরকার আপাতত একটি উপদেষ্টা সংস্থার সাহায্য চেয়েছে। এবং তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পরিবহণ নিগমে অতিরিক্ত কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর-প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে সরকারের কোনও ‘ছুৎমার্গ’ নেই।
পূর্বতন বামফ্রন্ট জমানাতেও সরকারি পরিবহণ নিগমগুলোকে বাঁচাতে রাজ্য একটি পরামর্শদাতা সংস্থার শরণাপন্ন হয়েছিল। তারাও স্বেচ্ছাবসরের দাওয়াই দিয়েছিল। কিন্তু বাম সরকার সে পথে হাঁটতে পারেনি। ফলে বাড়তি কর্মী ও লোকসানের ভারে ন্যূব্জ পরিবহণ নিগমগুলোকে ভর্তুকি দিয়েই এত দিন টেনে নিয়ে যেতে হয়েছে। ভর্তুকির অঙ্কটা বছরে ৬০০ কোটি টাকা!
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় এসেই রুগ্ণ সরকারি পরিবহণ থেকে ভর্তুকির ‘খুঁটি’ সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে জানিয়ে দেয়, প্রয়োজনাতিরিক্ত কর্মী কমিয়ে ও দক্ষতা বাড়িয়ে নিগমগুলোকে এ বার নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সেই লক্ষ্যে কিছু দিন
আগে সরকারি কয়েকটি পরিবহণ নিগমে বেতনের টাকা জোগানোও বন্ধ করে দিয়েছিল পরিবহণ দফতর।
এখন দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, নিগমগুলোর বিভিন্ন কর্মী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে রাজ্য সরকার স্বেচ্ছাবসরের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তার প্রাথমিক উদ্যোগও শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিবহণ দফতরের বিশেষ সচিব তারাপদ মাঝি বলেন, “সম্প্রতি একটি উপদেষ্টা সংস্থার কর্তারা মহাকরণে এসে পরিবহণ-অফিসারদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছেন। ওঁদের বলা হয়েছে বিভিন্ন নিগম-কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে।” পরামর্শদাতার রিপোর্ট পেলে তা এডিবি-তে পাঠানো হবে। সংস্থাটিকে কী কী তথ্য জোগাড় করতে বলা হয়েছে?
সরকারি সূত্রের খবর: বিভিন্ন পরিবহণ নিগম সম্পর্কে যে সব তথ্য রাজ্য জানতে চেয়েছে, সেগুলো হল: ১) ৪৫ বছরের বেশি বয়সী কর্মীর সংখ্যা কত ২) তাঁদের গড় বেতন কত ৩) স্বেচ্ছাবসরে ইচ্ছুক কত জন ৪) ইচ্ছুকদের অবসর দিতে কত টাকা লাগতে পারে ৫) নিগমে অনুমোদিত পদ ও স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা কত ৬) চুক্তিতে কাজ করছেন কত জন ৭) পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের রূপরেখা কী হতে পারে, ইত্যাদি। দফতরের খবর: স্বেচ্ছাবসরে কর্মীদের একাংশের আগ্রহ থাকলেও তাঁদের সংখ্যার হিসেব নিগমগুলো এখনও কষে উঠতে পারেনি। কেন?
একটি নিগমের এক কর্তার ব্যাখ্যা, “স্বেচ্ছাবসর নিলে ঠিক কত টাকা পাওয়া যাবে, তা সরকারি ভাবে না-জানলে কর্মীদের পক্ষে মতামত জানাতে অসুবিধে হচ্ছে।” তাই এডিবি-র কাছ থেকে কত টাকা মিলবে, সেটা চূড়ান্ত না-হওয়া পর্যন্ত দেনা-পাওনার বিষয়টিও তাঁরা চূড়ান্ত করতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেন ওই অফিসার। |
