শিক্ষার অধিকার আইন মানলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবে ঠিকই। কিন্তু সে-ক্ষেত্রে সংরক্ষণ-সহ বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধও মানতে হবে। এই অবস্থায় ওই আইনের আওতার বাইরে আসার জন্য রাজ্যের সংখ্যালঘু পরিচালিত বেশ কিছু ইংরেজি মাধ্যম স্কুল সরকারি অনুদানই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। শুক্রবার এ কথা জানিয়ে দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অফ হেডস অফ অ্যাংলো ইন্ডিয়ান স্কুলস (ওয়েস্ট বেঙ্গল)।
সংগঠনের দাবি, তাদের সদস্য যে-সব স্কুল সরকারি অনুদান নেয় না এবং যারা অনুদান ছেড়ে দেবে তারা নিজেদের মতো করে প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবে। ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণ-সহ শিক্ষার অধিকার আইনের বিধিনিষেধ তাদের মানতে হবে না। এর ফলে ওই সব স্কুলে পঠনপাঠনের মান বজায় থাকবে বলেও সংগঠনের পক্ষ থেকে এ দিন দাবি করা হয়েছে।
সংগঠনের দাবির সারবত্তা আছে বলে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন
মন্ত্রক সূত্রেও মেনে নেওয়া হয়েছে। ওই মন্ত্রক সূত্রে ব্যাখ্যা দেওয়া
হয়েছে, সংখ্যালঘু পরিচালিত সরকারি অনুদানহীন স্কুলগুলিতে শিক্ষার অধিকার আইনের শর্তাবলি মানার প্রায় কোনও বাধ্যবাধকতা থাকছে না।
সংগঠনের রাজ্য শাখার মুখপাত্র তথা মধ্য কলকাতার একটি স্কুলের অধ্যক্ষা জিলিয়ান রোজমেরি হার্ট এ দিন এক সংবাদিক বৈঠকে বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী স্কুলে ২৫ শতাংশ আসন দুর্বল শ্রেণির শিশুদের জন্য সংরক্ষিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এই ব্যাপারে আমরা ওয়াকিবহাল। কিন্তু আমাদের স্কুলগুলি ওই আইনের আওতায় আসছে না। ফলে ওই সব স্কুলে পাশ-ফেল ব্যবস্থা থাকবে।” ওই অধ্যক্ষার মতে, পাশ না-করলেও যদি পরের ক্লাসে উঠে যাওয়া যায়, তা হলে ভাল ফল করার তাগিদটাই তো চলে যাবে। এতে ভবিষ্যৎ জীবনে ওই সব পড়ুয়ারই সমস্যা হবে।
স্কুলে পড়ুয়াদের মারধর করা অনুচিত হলেও একটু-আধটু শাসনের প্রয়োজন হয় বলেও এ দিন সংগঠনের তরফে মন্তব্য করেন মধ্য কলকাতার অন্য একটি স্কুলের অধ্যক্ষ এফ গোমস। তিনি বলেন, “শিক্ষক-শিক্ষিকারা শুধু লেখাপড়া শেখান না, নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতা ইত্যাদিও শেখান। তার জন্য ছেলেমেয়েদের তো শাসন করতেই হয়। শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক আইন আছে। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষকাদের সুরক্ষায় কোনও আইন নেই।”
সংগঠন চায়, শিক্ষার অধিকার আইনটি পুনর্বিবেচনা করা হোক।
গোমস বলেন, “শিক্ষার আইন তৈরি করেন দেশের মন্ত্রী-আমলারা। কিন্তু
তাঁরা তো রোজ রোজ স্কুলে পড়ান না। তাই বাস্তব অবস্থা তাঁদের
অনেকটাই অজানা। শিক্ষার আইন তৈরি হওয়া উচিত শিক্ষক ও অভিভাবকদের অভিমত নিয়ে।” |