আইনশৃঙ্খলার সমালোচনা
বাম ও কংগ্রেস ‘বঞ্চিত’ স্বনির্ভর প্রকল্প-সহায়ক নিয়োগে, বিতর্ক
কার্যত ক্লাব-কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি!
বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের ঋণ-সংক্রান্ত খুঁটিনাটি ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য ৫০০ জন ‘প্রকল্প-সহায়ক’ নিয়োগ করবে রাজ্য সরকার। তার জন্য ইতিমধ্যে আবেদনও জমা পড়েছে। কিন্তু দু’টি করে নাম সুপারিশ করে সেই সব আবেদন জমা পড়েছে শুধুমাত্র প্রধান শাসক দল তৃণমূলের বিধায়কদের তরফে। শরিক কংগ্রেস বা বিরোধী বামফ্রন্টের কোনও বিধায়কের সুপারিশ জমা পড়েনি। কংগ্রেস ও বিরোধী দলের ‘অজ্ঞাতসারে’ শুধু তৃণমূল বিধায়কদের কাছ থেকে আবেদন নেওয়া হয়েছে বলেই প্রশাসনিক সূত্রের খবর। তাঁদের ‘অন্ধকারে’ রেখে সরকারি কাজের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘দলতন্ত্রে’র অভিযোগ করছেন কংগ্রেস ও বিরোধী বিধায়কেরা।
প্রায় একই ঘটনা ঘটেছিল এলাকার বিধায়কদের সুপারিশ নিয়ে রাজ্যের প্রায় ৭০০ ক্লাবকে সরকারি আর্থিক সাহায্য দেওয়ার সময়। অভিযোগ উঠেছিল, শুধুমাত্র তৃণমূল বিধায়কদের থেকেই ‘সুপারিশ’ চাওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে তখনও সরব হয়েছিলেন সরকারের জোট শরিক কংগ্রেস ও বিরোধী বিধায়করা। সাম্প্রতিক এই ঘটনাতেও তাঁরা সেই ‘ছায়া’ই দেখতে পাচ্ছেন।
স্বনির্ভর দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো অবশ্য দাবি করেছেন, গোটা বিষয়টির মধ্যে আদৌ কোনও ‘গোপনীয়তা’ নেই। তিনি বলেন, “মার্চ মাসে দু’টি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে আবেদন চাওয়া হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই আবেদনপত্র জমা পড়ে। শুধু তৃণমূল বিধায়করা তাঁদের এলাকার লোকের নাম দেবেন কেন?” কিন্তু ‘বাস্তব’টা যে পৃথক, তা স্পষ্ট তৃণমূল বিধায়কদের একাংশের বক্তব্যেই। তৃণমূল পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দলীয় বিধায়কদের বিষয়টি জানাতে উদ্যোগী হন বিধানসভায় সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনিও বলেছেন, “মাস দুয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা হয়। বিধায়করা যাতে নাম পাঠান, সে ব্যাপারে উনি আমায় উদ্যোগী হতে বলেন। তার পরেই দলীয় বিধায়কদের জানাই।” পাশাপাশিই তাঁর বক্তব্য, “কংগ্রেস বা সিপিএমের বিধায়কদের জানানোটা আমার দায়িত্ব নয়।”
তাঁদের বিধায়কদের সরকারের তরফে কিছু জানানো হয়নি বলে জানিয়ে কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব বলেন, “কোনও ঘোষণাও তো শুনিনি! ক্লাবের অনুদানের ক্ষেত্রেও আমাদের জানানো হয়নি। এটাও জানতাম না!” এমন প্রকল্পে লোক নেওয়া হচ্ছে শুনে ‘হতচকিত’ বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও। তাঁর কথায়, “জানতামই না!” কংগ্রেসের এক বিধায়কের অভিযোগ, “বাম আমলেও এমনই একটি প্রকল্পে লোক নেওয়া হয়েছিল। গোপনে বামফ্রন্টের পরিচিত লোককেই নেওয়া হত। এই সরকারও একই দলতন্ত্র চালাচ্ছে!” শাসক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, “বিজ্ঞাপন দেখে যদি তৃণমূল বিধায়করা আবেদন করতেন, তা-ও যুক্তি ছিল। কিন্তু দলের বিধায়কদের ধরে ধরে জানানোর পরেই তো আবেদনপত্র জমা পড়েছে!”
স্বনির্ভর দফতরের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা কোনও ব্যক্তিকে প্রকল্পের জন্য ঋণের হদিশ, ঋণ পেতে সাহায্য বা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণ শোধ করানো-সহ আর্থিক বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার কাজ করবেন ওই প্রকল্প সহায়কেরা। অর্থাৎ ব্যাঙ্কের সঙ্গে ‘যোগসূত্র’ হিসেবে কাজ করবেন তাঁরা। ন্যূনতম উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ বেকার প্রার্থীদেরই এ কাজে নিয়োগ করবে সরকার। মাসিক ১ হাজার টাকা ‘ভ্রমণ ভাতা’ পাবেন তাঁরা। যে স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা ব্যক্তির হয়ে তাঁরা ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, সেই গোষ্ঠী বা ব্যক্তি ঋণ পেলে, ঋণের সুদ জমা দিলে এবং আসল-সহ সুদ ফেরত দিলে ‘কমিশন’ও পাবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুরো ঋণ শোধ হয়ে গেলে অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা করে পাবেন।
মন্ত্রী শান্তিরামবাবুর কথায়, “ভাল ভাবে কাজ করতে পারলে মাসে ন্যূনতম ৫-৬ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন এঁরা। টাকাটা দেবে সরকার।”
রাজ্যের ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত কর্মহীন যুবক-যুবতীদের এ ভাবে সরকারি ‘সাহায্য’ দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের তরফে একটি আবেদনপত্রও ছাপানো হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। তা অবশ্য সরকারি নয়। বাংলা ও ইংরেজিতে ছাপানো সেই আবেদনপত্রে ছবি-সহ দু’জন করে প্রার্থীর নাম সুপারিশ করে ৭৬ জন তৃণমূল বিধায়ক ৫ এপ্রিলের মধ্যে জমা দেন বিধানসভার সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেববাবু দফতরে। সেখান থেকে সেগুলি পাঠানো হয়েছে স্বনির্ভর দফতরে। এরপর ওই আবেদনের ভিত্তিতেই মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে প্রার্থী বাছাই হবে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.