|
|
|
|
চারদিকে মেয়েদের এত নির্যাতন মানতে
পারছি না,
শুনলেন জ্যোতিপ্রিয় |
সীমান্ত মৈত্র • হাবরা |
কামদুনিতে কলেজ-ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের দিনই এলাকায় গিয়ে মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়ে ফিরতে হয়েছিল রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র হাবরায় শ্লীলতাহানির শিকার এক কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে অবশ্য তাঁকে তত অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হল না।
উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা থানার ওসি-কে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিড়ার রবীন্দ্রপল্লিতে মেয়েটির বাড়িতে যান মন্ত্রী। দোষীরা যাতে কড়া সাদা পায়, তার নির্দেশও দিতে থাকেন ওসি-কে। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে থেকে এক মহিলা হঠাৎই কেঁদে বলে ওঠেন, “এই ভাবে চারদিকে মেয়েদের উপরে অত্যাচার আমরা মানতে পারছি না। নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। আতঙ্কের মধ্যে আছি। আপনারা ব্যবস্থা নিন।”
মহিলার কথা শুনে এক মুহূতের্র জন্য থমকে গিয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। ইতিমধ্যে মহিলা মন্ত্রীর কাছে আসার চেষ্টা করায় আশপাশের কয়েক জন মহিলা তাঁকে টেনে ধরেন। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “ওঁকে কাছে আসতে দিন।” তাঁর পরিচয়ও জানতে চান। মহিলা বলেন, তিনি ওই কিশোরীর মামি। তাঁর কথা শোনার পরে মন্ত্রী মেয়েটির বাবার কাছে জানতে চান, পুলিশের পদক্ষেপে তাঁরা সন্তুষ্ট কি না। মেয়ের বাবা মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানান।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে। সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর বাড়িতে ঢুকে সঞ্জয় ব্যাপারী নামে এলাকারই এক যুবক তার শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। মেয়েটির ভাই বাধা দিতে গেলে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। প্রতিবেশীদের হাতে ধরা পড়ে সঞ্জয় আপাতত জেল হাজতে। তার বাড়ির লোকজন পলাতক। ছাত্রীর ভাইয়ের চিকিৎসা হয়েছে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে।
|
|
বাইকে চেপে কিশোরীর বাড়ির পথে খাদ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র। |
এ দিনই বারাসত আদালতে গোপন জবানবন্দি দেয় ভাই-বোন। বারাসতে একের পর এক নারী নিগ্রহের প্রতিবাদে এ দিন জেলা কংগ্রেসের তরফে বারাসত মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সিপিএম এলাকায় প্রতিবাদ সভা করে। দুপুর ৩টে নাগাদ যশোহর রোড থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পুলিশের মোটরবাইকে চেপে মেয়েটির বাড়িতে পৌঁছন মন্ত্রী। বাড়ির লোকজনকে বলেন, “এই মামলা সরকার চালাবে। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন।” দোষী যুবকের কঠোর শাস্তি দাবি করেন স্থানীয় মানুষজন। হাবরা থানার আইসি অনিল রায় ছিলেন মন্ত্রীর সঙ্গে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু তাঁকে বলেন, “খুব তাড়াতাড়ি মামলার চার্জশিট দেবেন। চার্জশিট দেওয়ার আগে বারাসত জেলা আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী মহেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে নেবেন, যাতে আইনের দিকটা ঠিক থাকে। মামলার অগ্রগতি আমায় নিয়মিত জানাবেন।” এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানোরও নির্দেশ দেন তিনি।
কিশোরীর দিদি মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন, কিছু দিন আগে এলাকায় বছর ছ’য়েকের একটি মেয়ের উপরেও নির্যাতন চালিয়েছিল সঞ্জয়। লোকজন তাকে তাড়িয়ে দেয়। এ বার সঞ্জয়ের পরিবারকেও এলাকাছাড়া করার জন্য তিনি মন্ত্রীর কাছে আর্জি জানান। তাঁর কথায়, “কিছু দিন আগেই ৪৫ হাজার টাকা খরচা করে বোনের হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। সেই অবস্থাতেই ওর উপরে অত্যাচার করা হয়েছে।” জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “এই ধরনের ঘটনা একটা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আমার নিজেরই লজ্জা লাগছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে ‘প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন্স ফ্রম সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স অ্যাক্ট, ২০১২’-সহ মোট চারটি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। বিশেষ আদালতে এই মামলার বিচার শুরু হবে। মেয়েটির বাড়িতে বসেই হাবরা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার সাত্যকি হালদারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। ছেলেটির স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ-খবর করেন। ছেলেটির গলায় কোপ লেগেছে। কয়েকটি সেলাই পড়ায় খাওয়া-দাওয়া কার্যত বন্ধ। মন্ত্রী সুপারকে বলেন, “ছেলেটি আবার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাবে। আপনি উপযুক্ত ব্যবস্থা করবেন।”
কিশোরীর দিদি মন্ত্রীকে বলেন, বাড়িতে ঢোকার রাস্তা কাঁচা। বিদ্যুৎ সংযোগও নেই। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানকে এ ব্যাপারে খরচের হিসাব জমা দিতে বলেন মন্ত্রী। বিধায়ক তহবিলের টাকায় রাস্তা তৈরির আশ্বাস দেন, বিদ্যুৎ দফতরে টেলিফোনে করে সংযোগ দেওয়ারও নির্দেশ দেন। ঘটনার পর থেকে বাড়ির লোকেরা সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে গেলেও এ দিন মন্ত্রীকে জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হয়েও সঞ্জয়কে ছাড়েনি বছর চোদ্দোর কিশোর। সঞ্জয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করেও ডোবায় পড়ে যায়। তখনও তাকে জাপটে ধরে রেখেছিল মেয়েটির ভাই। যা নিয়ে গ্রামবাসীরা বিস্মিত, গর্বিতও বটে। কিশোরীর বাবা বলেন, “ছেলে আমার সঙ্গে দমদমে থাকে। মঙ্গলবারই বাড়ি ফিরেছিল। ও যদি না থাকত, কী যে ঘটত তা ভাবতে পারছি না।” |
পুরনো খবর: দিদির শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে জখম |
|
|
|
|
|