|
|
|
|
|
বিধিকে বুড়ো আঙুল, স্নাতক হয়েও
ছাত্রনেতা ফের ভর্তি একই কলেজে
ঋজু বসু • কলকাতা |
|
নিউ ব্যারাকপুরের একটি কলেজ থেকে গত বছরই স্নাতক হয়েছিলেন তিনি। এ বার ঠিক সেখানেই বিএ (অনার্স) পড়ার জন্য তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে! বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ওই ছাত্রকে স্নাতক স্তরে দু’বার ভর্তি করানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটি বা পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র কলেজের। আর ছাত্রটির নাম মনোজ সরকার। শাসক দলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর নেতা মনোজ ওই কলেজেরই প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক। মাসখানেক আগেই কলেজের নৃতত্ত্ব বিভাগের এক শিক্ষককে হুমকি দেওয়া এবং অভব্য আচরণের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় তৃণমূলের অন্য এক ছাত্রনেতার নামও জড়িয়ে যায়। ওই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান। তদন্ত কমিশন গড়ে বিশ্ববিদ্যালয়। সেই তদন্ত চলতে চলতেই মনোজকে ফের কলেজে ভর্তি করানোয় বিতর্ক শুরু হয়েছে।
২০০৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে এপিসি কলেজে বিএ পড়তে ঢুকেছিলেন মনোজ। অনার্স ছাড়াই তিনি পাশ করেন ২০১২ সালে। তার এক বছরের মধ্যেই ফের স্নাতক স্তরে সাংবাদিকতায় অনার্স পড়তে আবেদন করেন মনোজ। সেই আবেদন গৃহীতও হয়েছে। বুধবার ফের বিএ প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন ওই ছাত্রনেতা। তাঁর দাবি, “এই কলেজ থেকে স্নাতক হলেও আমার অনার্স ছিল না। ভাল নম্বরও পাইনি। সাংবাদিকতা পড়ার শখ অনেক দিনের। তাই বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের সম্মতিক্রমেই ফের কলেজে ভর্তি হয়েছি।” এই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে, জানেন কি? তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “এক জন ছাত্র হিসেবে আমি কি এটুকু সুযোগ পেতে পারি না?” কলেজের অধ্যক্ষ শক্তিব্রত ভৌমিক দায় নিতে চাননি। তাঁর কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ তাঁকে অনুমতি দিয়েছেন। কলেজের কিছু করার নেই।”
কী বলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম?
উচ্চ মাধ্যমিক বা সমপর্যায়ের কোনও পরীক্ষায় পাশ করার তিন বছরের মধ্যে এক জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক স্তরে ভর্তি হতে হয়। এ রাজ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাই নিয়ম। সেই নিয়মে কিন্তু স্নাতক স্তরে পরপর দু’বার ভর্তির কোনও সুযোগ নেই। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কলেজকে এমন অনুরোধ করার অধিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই বলেই মনে করছেন উচ্চশিক্ষার সঙ্গে
যুক্ত আধিকারিকেরা। যেমন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বাসব চৌধুরী যেমন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এ ভাবে কাউকে ভর্তি করা যায় না।”
মনোজ অবশ্য দাবি করছেন, “বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ভর্তিতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আমি সাংবাদিকতায় অনার্স নিয়ে পাশ করে গেলে আগের বিএ ডিগ্রিটা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তা হলেই আর কোনও সমস্যা থাকবে না!”
কী বলছেন পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা? মনোজকে লিখিত অনুমতি দেওয়ার কথা মনে করতে পারছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কৌশিক গুপ্ত বা রেজিস্ট্রার রামপদ বেরা। কৌশিকবাবু বলেন, “সইয়ের জন্য আমার কাছে অনেক চিঠি আসে। সব তো খেয়াল থাকে না। তবে সব পড়ুয়ার ভর্তিই এখনও পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষ (প্রভিশনাল)। পরে সবই খতিয়ে দেখা হবে। বেআইনি কিছু ঘটে থাকলে ছেলেটির ভর্তি বাতিল হবে।” নিয়ম ভাঙা হচ্ছে জেনেও ওই ছাত্রনেতাকে ফের স্নাতক স্তরে ভর্তি করা হল কী ভাবে? ওই কলেজের ছাত্র-শিক্ষক মহলের একাংশের ধারণা, শাসক দলের ছাত্রনেতা হওয়ার সুবাদেই মনোজকে বেআইনি ভাবে ভর্তি করা হয়েছে। এর ফলে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা একটি ছাত্র বা ছাত্রী কলেজে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন। কলেজের ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক তপতী ভট্টাচার্যের (তৃণমূলের শিক্ষা সেলের সদস্যা) দাবি, “মনোজের ভর্তি নিয়ে অহেতুক বিতর্ক বাধানো হচ্ছে।” শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে অভিযোগ এলে অবশ্যই খতিয়ে দেখব।” |
|
|
|
|
|