খোরজুনা গ্রামে মহিলাকে ধর্ষণ করে খুনের প্রতিবাদে এ বার সামিল হল মৃতার বাপের বাড়ির গ্রাম ফুলশিখর গ্রামের বাসিন্দারাও। বৃহস্পতিবার ওই গ্রামের অন্তত শ’তিনেক মহিলা ঝাঁটা, লাঠি নিয়ে পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে মিছিল করে। ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবিও জানান তাঁরা।
|
প্রকাশ দাস। |
গত রবিবার ওই মহিলার দেহ মেলার পর প্রকাশ দাস নামে গ্রামের এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার আগেই জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, ধর্ষণ নয়, ঘটনাটি নিছকই খুনের। তিনি জানান, ধৃত যুবক জেরায় জানিয়েছে, ওই মহিলার সঙ্গে তার ‘পুরনো সম্পর্ক’ ছিল। ওই মহিলা স্বেচ্ছায় ওই যুবকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। পুলিশ সুপারের এই বক্তব্যেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা। বুধবার এর প্রতিবাদে এলাকায় বন্ধের ডাকও দিয়েছিল কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট।
বন্ধে সামিল হলেও তাঁদের আন্দোলন যে থমকে যাচ্ছে না এ দিন খোরজুনা গ্রামে গিয়েও তা বোঝা গিয়েছে। সেখানেও গ্রামবাসীরা বিভিন্ন জায়গায় সভা করেন। বৃহস্পতিবার পড়শি গ্রাম ফুলশিখরও তপ্ত হয়ে ওঠে ওই মিছিলের পরে। গ্রামের বাসিন্দা সবিতা দাস, পম্পা দাসেরা বলেন, “আমাদের গ্রামের মেয়ের নামে কোনও অপবাদ মানব না। পুলিশ সুপার এক দিন গ্রামে এসেই সহবাসের তত্ত্ব খাড়া করে চলে যাবেন আর গ্রামের মানুষ তা মেনে নেবেন, এ হতে পারে না।”
এ দিন খোরজুনায় অভিযুক্ত প্রকাশ দাসের বাবা বিপদতারণ দাসকেও বলতে শোনা যায়, “জানি না কেন পুলিশ সুপার ওই মহিলার নামে এমন কথা বলছেন। আমি তো বউমাকে চিনতাম। আমি মানি না আমার ছেলের সঙ্গে ওঁর কোনও সম্পর্ক ছিল বলে।” |
আজ, শুক্রবারও ওই মহিলা খুনের প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছেন গ্রামের বাসিন্দারা। খোরজুনার মহিলারা এ দিন বহরমপুরে পুলিশ সুপারের অফিসে বিক্ষোভ দেখাবেন। ওই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা ফুলশিখরের মহিলাদেরও। দুই গ্রামের মহিলারা সমস্বরে জানান, এসপি অফিসে গিয়ে এদিন তাঁরা এ ব্যাপারে ধর্না দেবেন।
নিছকই আটপৌরে ওই গ্রামীণ মহিলাদের পিছনে কি কোনও রাজনৈতিক দল রয়েছে? দুই গ্রামেই খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে কোনও রাজনৈতিক রং নয়, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই তাঁরা আন্দোলনে সামিল হয়েছেন বলে তাঁদের দাবি। গ্রামের পুষ্প দাস পম্পা দাসরা বলেন, “আমাদের গ্রামের একটা তরতাজা মেয়ে খুন হয়ে গেল, এখন সরকারের মুখ রাখতে পুলিশ তার নামে কুত্সা রটাচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।” তাঁরা জানান, ত্রমান্বয়ে নারী নির্যাতনের এই ঘটনায় ‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে’ গিয়েছে তাঁদের। পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁদের ক্ষোভ, ‘অক্ষমতা’ ঢাকতে পুলিশ ঘটনা লঘু করে থাকে। এ বার তা হতে দেবেন না তাঁরা।
|