পঞ্চায়েত ভোটের ভবিষ্যত ঝুলে রয়েছে সব্বোর্চ আদালাতের হাতে। এরই মধ্যে অবশ্য জমে উঠেছে ভোটের প্রচার। প্রতি দিনই খবর মিলছে রাজনৈতিক হানাহানির। ভোট-সংঘর্ষে ইতি পড়ার কোনও লক্ষণই নেই।
বুধবার রাতে ডোমকলের রায়পুর এলাকায় কংগ্রেসের একটি মিছিলকে ঘিরে গণ্ডগোল বাধে কংগ্রেস-সিপিএমের। সংঘর্ষে জখম হয়েছেন এক মহিলা-সহ অন্তত দশ জন। আহতদের মধ্যে সাত জনকে ভর্তি করানো হয়েছে বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে। সিপিএমের দাবি, জখমেরা সকলেই তাদের সমর্থক। ডোমকলের এসডিপিও দেবর্ষি দত্ত বলেন, “একটি মিছিলকে ঘিরে ঝামেলায় বেশ কয়েকজন জখম হয়েছেন। ওই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ রায়পুরের লক্ষ্মীতলা থেকে কংগ্রেসের একটি নির্বাচনী পথসভা শুরু হয়। ওই মিছিল সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ গ্রামেরই সর্দারপাড়ায় পৌঁছয়। সিপিএম প্রার্থী মকবুল সর্দারের বাড়ির কাছে মিছিল যেতেই দু’দলের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। কংগ্রেসের দাবি, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর ইট ছোড়ে সিপিএমের লোকজন। ইটের ঘায়ে বাবার হাত ধরে মিছিলে আসা বছর দশেকের কিশোর মিনারুল ইসলাম জখম হয়। এতেই চটে গিয়ে মিছিল ফেলে কংগ্রেস সমর্থকরা সিপিএম কর্মীদের বাড়ির সামনে হট্টগোল শুরু করে। অভিযোগ, কয়েকজন কংগ্রেস সমর্থককে পেটানো হয়। তারপর সংঘবদ্ধভাবে সিপিএম সমর্থকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কংগ্রেসীরা। জখম হন জনা দশেক সিপিএম সমর্থক। কংগ্রেসের দাবি, তাদেরও জনা চারেক সমর্থক আহত হয়েছেন। |
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নারায়ণ দাসের বক্তব্য, “কংগ্রেস মিছিল করে সংগঠিতভাবে আমাদের কর্মীদের বাড়িতে হানা দিয়েছে। আমাদের ১৪ জন সমর্থক জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭ জন বহরমপুর হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। মারধরের পাশাপাশি লুঠপাটও চালিয়েছে তারা।” যদিও হাঙ্গামার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ব্লক কংগ্রেস সভানেত্রী শাওনি সিংহরায় বলেন, “সিপিএম আমাদের মিছিলের উপর ইট ছোড়াতেই মারামারি বাধে। আমরা চাই ডোমকল শান্ত থাকুক।”
অন্য দিকে বৃহস্পতিবার সকালে কৃষ্ণনগর সংলগ্ন ভীমপুরে কংগ্রেস-তৃণমূলের সংঘর্ষে জখম হয়েছেন ৪ জন। আহত সকলেই তাদের সমর্থক বলে দাবি কংগ্রেসের। জখম সকলেই শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। ঘটনার পর উত্তেজনা ছড়ায়। বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ডিএসপি (সদর) দিব্যজ্যোতি দাস ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকালে স্থানীয় কংগ্রেস কর্মী ভক্ত বিশ্বাস ভীমপুর বাজারে পটল বেচতে যান। অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন তাঁকে জোর করে দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। এই খবর চাউর হতেই ভীমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রার্থী অঙ্কিতা মজুমদার দলবল নিয়ে তৃণমূলের পার্টি অফিস থেকে ভক্তবাবুকে উদ্ধার করে আনেন। ঘটনার প্রতিবাদে কংগ্রেস কর্মীরা কৃষ্ণনগর-মাজদিয়া রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন। ভীমপুর বাজারেও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। বেলা দশটা থেকে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক চলে রাস্তা অবরোধ। এরই মধ্যে স্থানীয় তৃণমূলের লোকজন অবরোধকারীদের হটাতে এলে দু’দলের
মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। |
প্রথমে কংগ্রেসের মহিলা সমর্থকদের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যায় তৃণমূল কর্মীরা। পরে দলবল জুটিয়ে তারা কংগ্রেস কর্মীদের উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। জখম হন এক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী সহ জনা চারেক কংগ্রেস কর্মী। অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুর্বৃত্তেরা শূন্যে গুলিও ছোড়ে। গন্ডগোলের মাঝে পড়ে তাঁদের এক কর্মীও জখম হয়েছেন বলে দাবি সিপিএম নেতৃত্বের। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, এলাকায় হঠাত্ শুরু ইটবৃষ্টি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। শুনশান হয়ে যায় গোটা বাজার চত্বর।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “যারা সন্ত্রাসের গল্প বলে নির্বাচন বানচাল করার পরিকল্পনা করছে, তারাই ভীমপুরে গন্ডগোল করেছে। আমাদের কোনও কর্মী এই ঘটনায় জড়িত নয়।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেসের জেলা সহ সভাপতি অসীম সাহা বলেন, “ভীমপুর আমাদের শক্ত ঘাঁটি। হার নিশ্চিত জেনে শাসক দল এলাকায় গোলমাল পাকাচ্ছে।” জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমন মিশ্র বলেন, “গুলি চলেছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দু’দলের মারামারিতে কয়েকজন জখম হয়েছেন। তবে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।”
|