বিশ্ব ফুটবলে উরুগুয়ে একটা বড় শক্তি। তাই ওদের কাছ থেকে আরও ভাল ফুটবল আশা করেছিলাম। কিন্তু সে দিকে না গিয়ে ওরা কিছুটা ধ্বংসাত্মক ফুটবল খেলল। দৃষ্টিকটু ফাউল। এরিয়াল বল-এ নির্ভরশীল থাকল। সুয়ারেজের মতো ফুটবলার, লিভারপুলের হয়ে যার পায়ে গোলের ফোয়ারা ছোটে, সে-ও এমন কিছু দেখাতে পারল না যাতে ম্যাচটা উপভোগ্য হয়।
একই গোলার্ধের দু’টো টিমের যুদ্ধ। তাই ব্রাজিলও মনে হল আগের তিনটে ম্যাচের তুলনায় বেশি সতর্ক ছিল। উরুগুয়ে কোচ তাবারেজের সৌভাগ্য তাঁর দুই সেন্ট্রাল ব্যাক গদিন আর লুগানো দুর্দান্ত খেলেছে। না হলে ব্রাজিল আরও বেশি গোলে জিতত। কাভানির যে গোলে উরুগুয়ে ১-১ করেছিল সেটা পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা। থিয়াগো সিলভার মিস পাস থেকে গোলটা খেল ব্রাজিল। এ রকম মিস পাস এই পর্যায়ের ফুটবলে ভাবা যায় না।
ম্যাচটার আসল ইউএসপি নেইমার প্রসঙ্গে ইচ্ছে করেই ম্যাচ রিপোর্টের অনেক পরে ঢুকছি। ব্রাজিলের নতুন তারকাকে দেখে আমার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর কথা মনে পড়ছে। রোনাল্ডোর মতো অভিজ্ঞ নয়। পরিণতও হয়নি। সবে একুশে পড়েছে। তবে ছেলেটা ব্রিলিয়ান্ট ভলি শুটার। আমার মনে হয়, মেসির পাসে ওকে বার্সেলোনা নিয়েছে মূলত ঝুড়ি ঝুড়ি গোল পাওয়ার জন্য। আমার চোখে নেইমার আদতে একজন স্কোরার।
|
আটকে গেল ফোরলানের পেনাল্টি। ছবি: রয়টার্স |
ব্রাজিলের প্রথম গোলটা তো ফ্রেডের বদলে নেইমারেরই পাওয়ার কথা। ওর বড় গুণ, মাঠের যে কোনও জায়গা থেকে দুর্ধর্ষ শটে গোল করতে পারে। দু’পায়েই প্রচণ্ড জোর শট আছে। তবে ভাল ড্রিবলার নয়। বল পেলেই ডান দিকে সরে যাচ্ছে। সেটাও সরলরেখায়। বাঁ দিকে ড্রিবল করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা দেখলাম না। সে জন্য নেইমারের কিন্তু মেসি বা মারাদোনা হয়ে ওঠা কঠিন। বড়জোর রোনাল্ডো হবে ও।
নেইমারের পাশে ব্রাজিলের অন্য দু’টো ছেলেকেও খুব ভাল লাগছে। অস্কার আর পওলিনহো। আমার ধারণা ব্রাজিলের মাঝমাঠের এই ‘ফ্রি-ম্যান’ (অস্কার) আর ‘ডাবল পিভট’-এর অন্যতম (পওলিনহো) ফুটবলার দেশের মাটিতে ঠিক এক বছর পর বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলের নায়ক হবে। অস্কারকে দেখে আমার কাকার কথা মনে পড়ছে। একই রকম স্টাইল। আর পওলিনহো মাঝমাঠে পেন্ডুলামের মতো দোলে। ভাল স্কিমার। অনেকখানি জায়গা জুড়ে খেলাটা তৈরি করে। ম্যাচ শেষ হওয়ার মাত্র চার মিনিট আগে নেইমারের কর্নার থেকে ঠান্ডা মাথায় যে গোলটা করে পউলিনহো ব্রাজিলকে জেতাল, সেটাই এই ম্যাচের সেরা প্রাপ্তি। নিখুঁত হেড। |
ফাইনালে উঠে ব্রাজিল ড্রেসিংরুমে সাম্বা দাঁতে-আলভেজদের। ছবি: ফেসবুক |
ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় সমস্যা ডিফেন্স। স্কোলারি বিশ্বকাপ জেতা কোচ। জানেন কী ভাবে টিমকে ধীরে ধীরে পিক-এ নিয়ে যেতে হয়। হাতে আরও এক বছর আছে তাঁর। বিশ্বকাপের আগে নিশ্চয়ই ডিফেন্সটাও মেরামত করে নেবেন। স্কোলারির ব্রাজিল মূলত পজেশনাল ফুটবল খেলছে। তবে ঘরের সমর্থকদের প্রবল প্রত্যাশার চাপ সামলে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখতে গেলে স্কোলারির টিমকে আক্রমণে আরও বৈচিত্র আনতে হবে। নেইমার যতই প্রতিভাবান হোক, পওলিনহো-মার্সেলো-অস্কার আর ওর বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণ কিন্তু সময়-সময় একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপের ঝানু কোচেরা কিন্তু ধরে ফেলবে।
তার আগে রবিবার বিশ্বকাপ-মহড়ার টুর্নামেন্টের ফাইনালে কী জিতবে ব্রাজিল? স্পেনের সঙ্গে যদি ফাইনাল হয়, তা হলে স্কোলারির দলকে কিন্তু পিছিয়ে রাখব।
|
পেনাল্টি ফস্কে ইতিহাসে |
• জিকো (ব্রাজিল) বনাম ফ্রান্স- ১৯৮৬ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল। টাইব্রেকারে ফ্রান্স জেতে ৪-৩।
• রবের্তো বাজ্জো (ইতালি) বনাম ব্রাজিল- ১৯৯৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল। টাইব্রেকারে ব্রাজিল জেতে ৩-২।
• রোনাল্ডিনহো (ব্রাজিল) বনাম ইংল্যান্ড- ২০১৩ আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি । ইংল্যান্ড জেতে ২-১।
• ডেভিড বেকহ্যাম (ইংল্যান্ড) বনাম তুরস্ক- ইউরো ২০০৪ যোগ্যতা অর্জন। ফলাফল ০-০।
• গ্যারি লিনেকার (ইংল্যান্ড) বনাম ব্রাজিল- ১৯৯২ আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি। ফলাফল ১-১। |
|