রাজারহাট থেকে হাওড়া রুটে প্রস্তাবিত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের আইনি জট খুলে গেল। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিল, ওই প্রকল্পের জন্য বৌবাজার ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের মোড়ে যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তা বৈধ। আগে বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য ওই অধিগ্রহণকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন। রাজ্য সরকার ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে অনেক টালবাহানার পরে আপিল মামলা করে। মূল মামলাটি করেন বৌবাজার এলাকার কিছু বাড়ির মালিক ও দোকানদারেরা।
এ দিন কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ আবার নতুন করে শুরু করা যাবে। এত দিন ওই কাজ বন্ধ থাকায় এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। দাবি ওঠে, ধর্মতলা হয়ে মেট্রোপথকে বি বা দী বাগে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু তার জন্য যে বাড়তি টাকা লাগবে, তা দেওয়া সম্ভব ছিল না। বৌবাজার-চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের মোড়ে সেন্ট্রাল স্টেশনটি হওয়ার কথা। অর্থাৎ, এখানেই কবি সুভাষ থেকে দমদম পর্যন্ত যে মেট্রো চলে, তার সঙ্গে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর একমাত্র সংযোগস্থল। এখান থেকেই মাটির নীচ দিয়ে বি বা দী বাগ ছুঁয়ে মেট্রো হাওড়ায় পৌঁছবে। এই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের কাজ বন্ধ হওয়ায় প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে। |
কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকার আপিল মামলা করেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। এই সময়েই কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তৃণমূল রেল মন্ত্রক-সহ অন্যান্য মন্ত্রকের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। তাই আপিল মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কিন্তু মামলা প্রত্যাহার করার কারণে সর্বস্তরে বিতর্ক দেখা দেওয়ায় রাজ্য সরকার আবার মামলা করে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জানতে চান, মামলা প্রত্যাহার করেও কেন আবার তা দায়ের করা হল। উত্তরে রাজ্য সরকার জানায়, আগের মামলাটি করেছিল পরিবহণ দফতর। এই মামলাটি সরাসরি রাজ্য সরকার করেছে। কিন্তু দেখা যায়, দ্বিতীয় বারের আপিল মামলাতেও সরকারপক্ষ গরহাজির থাকে। শেষ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, সরকার পক্ষ হাজির না হলে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এই মামলা চালাবে।
এ দিন বিকেলে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানাই। এই প্রকল্পের অনেকগুলি বাধার মধ্যে একটি দূর হল। তবে এখন মূল বাধা অর্থ। অবিলম্বে আটশো কোটি টাকা পাওয়া না গেলে কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।”
হাইকোর্টের এই রায়ে সর্বত্র স্বস্তির পরিবেশ। কারণ, এই মেট্রো চালু হলে তা যানবাহন সমস্যার অনেকটাই সমাধান করে দেবে। চলতি বছরের শেষেই প্রথম পর্যায়ে রাজারহাট থেকে কাঁকুড়গাছি পর্যন্ত মেট্রো চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ জানান, ঠিকঠাক কাজ হলে ২০১৪ সালের শেষাশেষি এই প্রথম পর্যায়ের মেট্রো চলার সম্ভাবনা রয়েছে।
|