দিনেদুপুরে অস্ত্র দেখিয়ে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগ উঠল বড়বাজারে। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার ওই ব্যক্তিকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। তবে প্রাথমিক তদন্তের পরে ঘটনাটি নিয়ে ধন্দে পুলিশ। কারণ, পুলিশ জেনেছে ‘অপহৃত’ ব্যবসায়ী নিজের মোবাইল থেকেই স্ত্রী ও বন্ধুকে ফোন করে অপহরণের খবর দেন। কিন্তু তখন তিনি যেখানে আছেন বলে জানিয়েছিলেন, তার সঙ্গে ওই সময়ে তাঁর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন মেলেনি। এ ছাড়াও জনবহুল রাস্তায় অপহরণের বিষয়টি কেউ টের পেল না কেন, তা-ও ভাবাচ্ছে পুলিশকে।
পুলিশ জানায়, প্রদীপ খান্ডেলওয়াল নামে ওই ব্যবসায়ীর বাড়ি গরফা থানার পূর্বাচল মেন রোডে। লেক এলাকায় তাঁর একটি মোবাইলের দোকান রয়েছে। প্রদীপবাবুর স্ত্রী নিলু খান্ডেলওয়াল এ দিন পুলিশের কাছে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছেলে, একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী অঙ্কিত খান্ডেলওয়াল। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (মধ্য) দেবেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে একটি অপহরণের মামলা শুরু হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত মুক্তিপণ চেয়ে কোনও ফোন আসেনি।” থানায় সাংবাদিকদের কিছু বলতে চাননি নিলুদেবী।
পুলিশ জানায়, এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ প্রদীপবাবু তাঁর এক বন্ধু মানিক নন্দীর সঙ্গে গরফার বাড়ি থেকে বেরোন। সেখান থেকে তাঁরা যান জোড়াসাঁকো থানা এলাকার মহাত্মা গাঁধী রোড ও রবীন্দ্র সরণির সংযোগস্থলে বাঙুর বিল্ডিং-এ। মানিকবাবুকে বাইরে দাঁড়াতে বলে ওই বাড়িতে ঢোকেন প্রদীপবাবু। তার পরে সেখান থেকে আর তাঁকে আর বেরোতে দেখেননি বলে পুলিশকে জানিয়েছেন মানিকবাবু। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, এর পরে ওই ব্যবসায়ী নিজের মোবাইল থেকে নিলুদেবী ও মানিকবাবুকে ফোন করে বলেন, ওই বিল্ডিং-এর সামনে থেকে অস্ত্র দেখিয়ে তিন যুবক তাঁকে অপহরণ করেছে। অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কাঁচরাপাড়ার দিকে। তার পর থেকেই বন্ধ প্রদীপবাবুর মোবাইল। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, এ দিন দুপুরে প্রদীপবাবুর শেষ মোবাইল টাওয়ার লোকেশন ছিল কলেজ স্ট্রিট এলাকা। ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজ দেখছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ফোন পেয়ে অপহৃতের স্ত্রী প্রথমে গরফা থানায় ফোন করে মৌখিক অভিযোগ জানান। পুলিশের দাবি, এর পরেই কলকাতার সব থানাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়। পরে বড়বাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নিলুদেবী। কিন্তু যে জায়গা থেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ, সেটি জোড়াসাঁকো থানা এলাকা হওয়ায় সেখানকার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। মানিকবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তবে, প্রাথমিক তদন্তের পরে এই অপহরণ নিয়ে ধন্দে রয়েছেন গোয়েন্দারা। পুলিশ জানতে পরেছে, এ দিন মানিকবাবুকে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ পাইয়ে দেবেন বলেছিলেন প্রদীপবাবু। সেই কারণেই দু’জন বাড়ি থেকে বেরোন। অপহরণ হওয়ার পরে কী ভাবে নিজের মোবাইল থেকে দু’বার ফোন করলেন অপহৃত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তদন্তকারীদের মধ্যে। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সাধারণত অপহৃতের হাতে মোবাইল দেওয়া হয় না। সেখানে কী করে দু’বার ফোন করলেন প্রদীপবাবু? এ ছাড়া তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, অপহরণের কিছুক্ষণ পরেই প্রদীপবাবু তাঁর স্ত্রীকে ফোনে বলেন তাঁকে অপহরণকারীরা কাঁচরাপাড়ার দিকে নিয়ে গিয়েছে। এত তাড়াতাড়ি কী ভাবে অত দূর পৌঁছে গেলেন তিনি, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এর সঙ্গে মিলছে না তাঁর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশনও। এর পাশাপাশি, রাত পর্যন্ত গোয়েন্দারা ঘটনাস্থলে কোনও প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধান পাননি। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, জনবহুল একটি রাস্তা থেকে কাউকে তিন জন জোর করে তুলে নিয়ে গেল, অথচ তা কেউ দেখতে পেল না কেন?
এক পুলিশকর্তা এ দিন জানান, মানিকবাবু-সহ বিভিন্ন লোকের কাছে ওই ব্যবসায়ীর কয়েক লক্ষ টাকা দেনা হয়েছিল। ওই টাকা আদায়ের জন্য প্রদীপবাবুকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছিল। সেই কারণে এই অপহরণ কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। |