অ-মাইক পিজি, রোগীর খবর পেতে নাজেহাল পরিজনেরা
চমকা এসএসকেএম পরিদর্শনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সমস্যার বোঝা দেখে এসেছিলেন। সেই বোঝার ভার পুরোপুরি লাঘব হওয়ার আগেই তার উপরে যোগ হল শাকের আঁটি!
যখন-তখন বিদ্যুৎ বিপর্যয়, মাঝেমধ্যেই ওয়ার্ডে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জল না থাকা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র থেকে আকছার শর্ট সার্কিট হয়ে আগুনের ফুলকি ছড়ানো, দেওয়ালের চাঙড় খসে পড়া, রোগীর পরিবারের লোকের জন্য ছাউনির ব্যবস্থা না থাকা তো ছিলই।
এ বার তার সঙ্গে যোগ হল রোগীর পরিবারের লোককে ডেকে পাঠানোর জন্য ‘পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম’ বিকল হওয়া।
গত তিন সপ্তাহ রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের এই জরুরি ব্যবস্থাটি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু কোনও তরফেই কারও বিকার নেই। নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং ওয়ার্ড মাস্টারদের বক্তব্য, তাঁরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেননি। অন্য দিকে কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা এ সবের কিছুই জানেন না।
আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালে এসে যে বিষয়গুলি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেগুলির কী হল? এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “জলের জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, ফেরুল বদলাতে হবে। ছাউনির ব্যাপারেও পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। বিদ্যুতের লাইন ঠিকঠাক করার প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে।” পূর্ত দফতরের কর্মীরা জানিয়েছেন, কাজের আনুমানিক ব্যয় বরাদ্দ আগে স্থির হবে, তার পরে সেই টাকা মঞ্জুর হবে। সে সব হলে তবে তো কাজ শুরুর প্রশ্ন।
সরকারি লাল ফিতের ফাঁস এড়িয়ে স্বাস্থ্যের মতো জরুরি পরিষেবাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু আদতে তাঁর পরবর্তী ধাপগুলিতে যে বহু সময়ে তা মানা হচ্ছে না, এসএসকেএমে সব ক্ষেত্রেই ‘হচ্ছে-হবে’ বুলি ফের তা প্রমাণ করে দিচ্ছে। এরই সঙ্গে যোগ হয়েছে দায়িত্বের চাপান-উতোর। পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও এক বার প্রকট হয়েছে।
কাকদ্বীপের তরণী শাসমলের অস্থায়ী আস্তানা হয়ে উঠেছিল এসএসকেএম হাসপাতাল। শ্বাসকষ্টের রোগী কাকাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকে টানা সাত দিন তরণীবাবু হাসপাতালেই থেকে গিয়েছিলেন। কখন কী প্রয়োজন হবে, শুধুমাত্র সে কথা ভেবেই। রোদে-বৃষ্টিতে হাসপাতালই ছিল তাঁর আশ্রয়। অথচ এক দিন মাঝরাতে তাঁর কাকার অবস্থা যখন আচমকাই বেশি খারাপ হল, জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন পড়ল একটি বিশেষ ইঞ্জেকশনের, তখন তিনি হাসপাতালে হাজির থেকেও সে কথা জানতে পারলেন না। কেন? কারণ হাসপাতালের প্রধান ব্লকের ‘সেন্ট্রাল পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম’ খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে গত তিন সপ্তাহ ধরে। ফলে রোগীর প্রয়োজনে বাড়ির লোকদের ডাকা বা অন্য কোনও তথ্য জানানোর কোনও ব্যবস্থাই নেই। প্রতি দিন শয়ে শয়ে রোগীর পরিবার এ জন্য দুর্ভোগ পোয়াচ্ছেন।
একই অবস্থা কার্জন ওয়ার্ডের অন্য এক রোগিণীর। সন্ধ্যায় ভিজিটিং আওয়ারে বাড়ির লোকেরা যাঁর অবস্থা ‘স্থিতিশীল’ বলে জেনে এসেছিলেন, সকালে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, রোগিণী মুমূর্ষু। কেন সে কথা তাঁদের আগে জানানো হয়নি? ওয়ার্ডের নার্সেরা জানিয়েছেন, খবর পাঠানোর কোনও উপায় নেই। “কী ভাবে খবর দেব? নীচে নেমে আমরা চেঁচিয়ে লোক ডাকব নাকি?” এক নার্সের প্রশ্ন।
কর্তৃপক্ষের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ওয়ার্ড মাস্টারেরাও। তাঁদেরও বক্তব্য, দিনের পর দিন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও কাজ হয়নি। এক ওয়ার্ড মাস্টারের কথায়, “রোগীর বাড়ির লোকেরা এসে আমাদের দোষারোপ করছেন। কিন্তু আমরাও নিরুপায়। আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাঁরা কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না।”
কেন নিচ্ছেন না ব্যবস্থা? প্রদীপ মিত্র জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁর জানাই ছিল না। তাঁর কথায়, “এটি তো অত্যন্ত জরুরি পরিষেবা। খারাপ পড়ে থাকার কথাই নয়। সঠিক জায়গায় জানানো হলে দ্রুত তা মেরামতি, এমনকী নতুন সরঞ্জাম কিনে ফেলা হত। পুরো ব্যবস্থাটাই যদি কোনও কারণে খারাপ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে তা বদলে ফেলার জন্যও পূর্ত দফতরকে আমরা খবর দিতে পারতাম।”
এখন বিষয়টি জানার পরে তিনি কী করবেন? প্রদীপবাবু বলেন, “এক সহকারি সুপারের উপরে মেন ব্লকের দায়িত্ব। তাঁকেই দ্রুত এটি মেরামতির ব্যবস্থা করতে হবে।”
বিষয়টি জানার পরে ওই সহকারি সুপারের বিরুদ্ধে কি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে? অধিকর্তার জবাব, “বিষয়টি খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.