রক্তসঙ্কট চরমে উঠেছে মেডিক্যাল কলেজ-সহ জেলার একাধিক হাসপাতালগুলিতে। গরমের শুরু থেকেই চলছে এই সঙ্কট। সাধারণত, প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন, এই তিন মাস জেলা জুড়ে রক্তের সঙ্কট চলে। এ বার তা আরও বেড়েছে। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই সে ভাবে হচ্ছে না শিবিরও। এর জেরে প্রবল সমস্যায় পড়েছেন অস্ত্রোপচার প্রয়োজন এমন রোগী থেকে শুরু করে থ্যালাসেমিয়া রোগীর পরিজনেরা। সমস্যার কথা মানছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরাও। তাঁর আশ্বাস, “বিষয়টি দেখছি।” |
পরিস্থিতি ঠিক কেমন?
প্রসূতি মৃত্যু কমাতে জেলার দুটি হাসপাতালে রক্ত সংরক্ষণের জন্য বিএসএউ বা ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট তৈরি হয়। এগুলি হল গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতাল ও চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতাল। এর মধ্যে চন্দ্রকোনার বিএসইউ ইউনিট সচল থাকলেও গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালে এক বোতল রক্তও জমা নেই। এই হাসপাতালের বিএসইউতে রক্ত সরবরাহ করার কথা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। কিন্তু, মেডিক্যাল তা করছে না কেন? মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “মেডিক্যালেই চরম রক্তসঙ্কট চলছে। অন্য ইউনিটকে রক্ত দেব কী করে?” ফলত: নিরুপায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গড়বেতা থেকে রোগীকে মেদিনীপুরে স্থানান্তরিত করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ, এক-একটি বিএসইউতে পজিটিভ-নেগেটিভ মিলিয়ে দশ বোতল রক্ত থাকার কথা।
খাতায়কলমে চালু থাকলেও দীর্ঘ ক’বছর ধরে গড়বেতার বিএসইউ ইউনিট বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সেখানে নতুন করে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়। আসেন এক মেডিক্যাল অফিসার, দুই কর্মী। তৈরি হয় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘর। আসে ডিপ ফ্রিজ। কিন্তু, রক্ত না মেলায় সংস্কারই সার হয়েছে। জানা গিয়েছে, সমস্যা নিয়ে মঙ্গলবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার বাঁশরিমোহন মাইতির সঙ্গে কথা বলেছেন গড়বেতার বিএমওএইচ সৌম্যক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, ৬০ শয্যা বিশিষ্ট গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালে রক্ত কবে পৌঁছবে, তা নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা মেলেনি। বাঁশরিমোহনবাবুর কথায়, “বিএমওএইচের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওঁকে সমস্যার কথা বুঝিয়েছি।”
মঙ্গলবার দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, ব্লাড ব্যাঙ্ক পুরোপুরি রক্তশূন্য। এক বোতল রক্তও অবশিষ্ট নেই সেখানে। হাসপাতালের এক আধিকারিকের কথায়, পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিমে আরও চারটি বিএসইউ ইউনিট চালু হবে। এর মধ্যে রয়েছে ডেবরা, সবং গ্রামীণ হাসপাতালও। ডেবরায় ইতিমধ্যে ইউনিটের জন্য ঘর তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু, রক্তের সঙ্কট সেই সব ভাবনাকেই প্রশ্নের মুখে তুলে দিয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের অভিমত। |