শিবির কমায় সঙ্কট
রক্ত না পেয়ে ফিরছে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তও
ক্তের চরম সঙ্কট চলছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরিস্থিতি এমন যে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তরাও রক্ত পাচ্ছেন না। এক বোতল রক্তের জন্য তাঁদের পরিজনেরা হন্যে হয়ে ঘুরছেন। সমস্যার কথা মানছেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার যুগল করও। তাঁর কথায়, “সে ভাবে শিবির হচ্ছে না। ফলে, সমস্যা হচ্ছে। ক’দিন আগে একটি শিবিরে মাত্র ৩ জন রক্ত দেন।” তিনি বলেন, “শিবির সংখ্যা বাড়লে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।”
মঙ্গলবার মেদিনীপুর ব্লাড ব্যাঙ্কে এসেছিলেন সুবল হাঁসদা। বাড়ি ডেবরার ভরতপুরে। তাঁর ছোট ছেলে ৫ বছরের ভীম থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। ১৫ দিন অন্তর রক্ত দিতে হয়। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েই সুবলবাবুর দুই ছেলে খোকন ও সনাতনের মৃত্যু হয়েছে। খোকন যখন মারা যায়, তখন বয়স ছিল ৭ বছর। আর সনাতনের মৃত্যু হয় ৩ বছর বয়সে। নিজের জমি নেই। অন্যের জমি চষেই সংসার চলে। স্ত্রী বাসন্তীদেবীও মজুর খাটেন। সুবলবাবু বলছিলেন, “কষ্টের সংসার। সময় মতো রক্ত না পেলে সমস্যায় পড়ব। ছোট ছেলের জন্য বি-পজিটিভ রক্ত লাগবে। হাসপাতালে এসে শুনলাম রক্তের সঙ্কট চলছে।” তাঁর কথায়, “১৫ দিন অন্তর রক্ত দিতে হয়। তাই রক্তের খোঁজে মাঝেমধ্যে হলদিয়া, খড়্গপুর, সাঁতরাগাছিও যাই।”
দুর্ভোগের অপেক্ষা। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে তোলা নিজস্ব চিত্র।
ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা রাহুল দিগারও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। তার বয়স সাত। সেই শিশুটি ভর্তি রয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে।
এ দিন ব্লাড ব্যাঙ্কে এসেছিলেন রাহুলের বাবা কাঞ্চন দিগার। তিনি বলেন, “আগে এক মাস অন্তর রক্ত দিতে হত। এখন ১৫ দিন অন্তর দিতে হয়। চলতি মাসের ১০ তারিখ ছেলেকে রক্ত দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, এখনই এক বোতল বি-পজিটিভ রক্তের দরকার।”
মঙ্গলবার সকাল থেকেই মেদিনীপুর মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে রোগীর পরিবারের লোকেদের ভিড় জমে। এই ভিড়েই মিশে ছিলেন সুভাষ মাহাতো, গঙ্গেশ মাহাতো’রা। গঙ্গেশ এসেছিলেন ঝাড়গ্রাম থেকে। তাঁর দাদা জয়ন্ত মাহাতো ভর্তি রয়েছেন মেডিক্যালে। রক্তাল্পতায় ভুগছেন। ও-পজিটিভ রক্ত লাগবে। গঙ্গেশের কথায়, “দেখি কী হয়। মেদিনীপুরে রক্ত না পেলে অন্যত্র যাব।” মানিকপাড়া থেকে এসেছিলেন সুভাষ। প্রমিশা মাহাতো নামে তাঁর এক পরিচিত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। মানিকপাড়ার ওই যুবকের কথায়, “এবি-পজিটিভ রক্ত লাগবে। না পেলে কী করব, কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।”
গরম পড়তে না পড়তেই মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্ক রক্তশূন্য। মঙ্গলবার দুপুরে ব্লাড ব্যাঙ্কে সব মিলিয়ে ১৬ বোতল রক্ত ছিল। এর মধ্যে এ নেগেটিভ ৩ বোতল, এবি-নেগেটিভ ৩ বোতল, বি-পজিটিভ ২ বোতল, বি-নেগেটিভ ২ বোতল, ও-পজিটিভ ৫ বোতল এবং ও-নেগেটিভ এক বোতল। এ-পজিটিভ এবং এবি-পজিটিভ গ্রুপের এক বোতলও রক্ত ছিল না। এই অবস্থায় অস্ত্রোপচারেও সমস্যা হচ্ছে। প্রতিবারই গরমে ঝাড়গ্রাম, ঘাটাল, মেদিনীপুর, খড়্গপুর-সহ জেলার প্রায় সব হাসপাতালেই রক্তের আকাল চলে। চাপ এসে পড়ে মেডিক্যালেও। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এক দিকে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমছে, অন্য দিকে শিবিরে রক্তদাতাদের সংখ্যাও কমছে। এই সব মিলিয়ে রক্ত সংগ্রহ কম হচ্ছে।
প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন, এই তিন মাস জেলা জুড়ে রক্তের সঙ্কট চলে। হাসপাতালের এক আধিকারিকের কথায়, “শিবির প্রতি গড়ে ৫০ জন রক্ত দিলে সমস্যা হত না। দু’-তিন বছর আগেও শিবির প্রতি গড়ে ৫৫-৬০ জন রক্ত দিতেন। এখন তা চল্লিশে এসে ঠেকছে।” তাঁর মতে, “পরিস্থিতি যা তাতে একটি বড় শিবির দরকার। যে শিবির থেকে অন্তত ৩০০ বোতল রক্ত সংগ্রহ হতে পারে।” ওই আধিকারিকের উদ্বেগ, “যদি এমন শিবির না হয়, তাহলে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.