দফা বদলের প্রস্তাবেও খুলল না জট, নির্দেশ আজ
হাইকোর্টে দিনভর দফায় দফায় নাটকীয় সওয়াল-জবাব। কখনও আবার ক্যালকুলেটর হাতে অঙ্ক কষা। মাঝে মহাকরণ এবং নির্বাচন কমিশনের দফতরে বৈঠক। এত কিছুর পরেও কিন্তু খুলল না পঞ্চায়েত ভোটে বাহিনী-জট। এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্ট আজ, বুধবার তাদের নির্দেশ জানাবে। কিন্তু সব পক্ষ সেই নির্দেশ মেনে নেবে, নাকি সুপ্রিম কোর্টে যাবে তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।
ফলে প্রথম দফা ভোটের ছ’দিন আগেও পঞ্চায়েত-ভাগ্য সেই অন্ধকার।
মঙ্গলবারই ৭৫% পঞ্চায়েতের মেয়াদ ফুরিয়েছে। আজ, বুধবার থেকে ওই পঞ্চায়েতগুলি কী ভাবে কাজ করবে, তা নিয়েও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলিতে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী
এ দিন কেন্দ্রের আইনজীবীর জানানোর কথা ছিল, পঞ্চায়েত ভোটে দিল্লি বাহিনী দিতে পারবে কি না। প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে সওয়াল শুরু হতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আইনজীবী জানিয়ে দেন, পঞ্চায়েত ভোটের জন্য কোনও বাহিনীই দিতে পারবে না কেন্দ্র। আর তখনই কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল জানিয়ে দেন, হাইকোর্ট যে বাহিনীর কথা বলে দিয়েছে, তা না পেলে পঞ্চায়েত ভোটও করা সম্ভব নয়। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বুঝতে পারে, এই অবস্থায় নির্দিষ্ট দিনে ভোট করা প্রায় অসম্ভব। তারা তখন বিকল্প প্রস্তাব দেয়।
হাইকোর্ট বলে, তিন দফার বদলে ভোট হোক পাঁচ দফায়। প্রথম দফায় যে ৯টি জেলায় ভোট হওয়ার কথা ছিল, তাকে তিন দফায় ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে নতুন তারিখও (২, ৪, ৬, ৮ এবং ৯ জুলাই) দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন, রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিব বিষয়টি নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসুন। তিনটের সময়ে অ্যাডভোকেট জেনারেল এবং কমিশনের আইনজীবী হাইকোর্টে ফিরে এসে তাঁদের সিদ্ধান্তের কথা জানান। তার ভিত্তিতে হাইকোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবে।
হাইকোর্টের এই নির্দেশ যায় মহাকরণে। তখন মুখ্যমন্ত্রী সেখানে উপস্থিত। তিনি পঞ্চায়েতমন্ত্রী এবং সরকারের শীর্ষকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিব যান কমিশনের অফিসে। সেখানে মিনিট ১৫ আলোচনা হয়। দুই সচিবই তার পরে মহাকরণে ফিরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এর পর দুপুর সাড়ে ৩টেয় আদালত বসলে অ্যাডভোকেট জেনারেল জানিয়ে দেন, আদালতের পাঁচ দফা প্রস্তাব রাজ্য সরকার মানছে না। তারা চার দফায় (২, ৪, ৬ এবং ৯ জুলাই) নির্বাচন চায়। প্রথম দফায় বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর। দ্বিতীয় দফায় উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান। তৃতীয় দফায় নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও বীরভূম জেলা। চতুর্থ তথা শেষ দফায় কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং দুই দিনাজপুর।
দফা বদলের প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন কোনও আপত্তি তোলেনি। কিন্তু তারা জানায়, প্রথম দফায় ৪৮ হাজার ৬০০ এবং দ্বিতীয় দফায় ১ লক্ষ ১ হাজার বাহিনী প্রয়োজন। তাদের এই কথার পরেই এক বিরল দৃশ্য দেখে হাইকোর্ট। রীতিমতো ক্যালকুলেটর নিয়ে অঙ্ক কষা শুরু হয়ে যায় তখন। এক সময় প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পালের হাতে একটি ক্যালকুলেটর তুলে দেন। অন্য দিকে, তখন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়ও আর একটি ক্যালকুলেটর নিয়ে হিসেব করতে ব্যস্ত। প্রধান বিচারপতির হাতেও তখন ক্যালকুলেটর। কোন জেলায়, কত বাহিনী লাগবে, সেই হিসেব করে চলেছেন তিনিও। এই দেখেশুনে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, “এটা আদালতের কাজ নয়, দায়িত্বও নয়। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ভোটটা যাতে করা যায়, আদালত সেই চেষ্টাই করছে।”
সেই অঙ্ক অবশ্য এ দিনও মেলানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে বলে, প্রতি জেলায় কত বাহিনী আছে, কোন দফায় কত বাহিনী দেওয়া যাবে এই সব পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বুধবার সকালেই আদালতকে জানাতে হবে। তার পরে আদালত প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবে।
এই ঘোর জটিলতায় বিরোধীরা স্বাভাবিক ভাবেই সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছে। আবার সরকার পক্ষ তার পাল্টা জবাবও দিয়েছে। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “লোকসভা ভোটের আগে ওরা পঞ্চায়েত ভোট করতে চায় না।” ফরওর্য়াড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাফিজ আলি সৈরানির অভিযোগ, “রাজ্য সরকারের ভূমিকা পরিষ্কার। তারা ভোট করতে চায় না। কিন্তু কমিশন আর আদালতের ভূমিকা এখনও স্পষ্ট নয়।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “বাহিনী যত কম হবে, তত তৃণমূলের জয় নিশ্চিত হবে।” অন্য দিকে, রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন পাল্টা দোষারোপ করে বলেন, “ভোট অনিবার্য। ভোট হবে বলেই আমরা মাঠেঘাটে ঘুরছি। আর যাঁরা ভোট চান না, তাঁরা আদালতের অলিন্দে ঘুরপাক খাচ্ছে। এর থেকেই স্পষ্ট যে ভোট নিয়ে কার কী ভূমিকা।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, তাঁরা নির্বাচন চান। এ দিন দুপুরে মহাকরণে তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন চাই। যারা চায় না, তাদের কথা আলাদা। আশা করি, পঞ্চায়েতে ভাল রায় হবে।” সন্ধ্যায় রাজ্যপালও বলেন, “আমি ভোট নিয়ে আশাবাদী। আদালত যা করেছে ভেবেচিন্তেই করেছে। সরকার ও কমিশন নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করি।” কিন্তু বাহিনী নিয়ে কী হবে? রাজ্যপাল এ দিনও বলেন, “বাহিনী পেতে আমি সাহায্য করব।”
এই চাপানউতোরের মধ্যে ভোট-প্রক্রিয়াও কিন্তু বন্ধ হয়নি। মনোনয়ন থেকে স্ক্রুটিনি, এই পর্বের পরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীরা শংসাপত্র পেয়ে গিয়েছেন। প্রচারও চলছে পুরোদমে। ভোট-কর্মীদের প্রশিক্ষণ পিছিয়ে দেওয়া হলেও এ দিন তাঁদের ভোটদান পর্ব শেষ হয়েছে। বাকি দুই পর্বের ভোটও নির্দিষ্ট সূচি মেনেই হবে বলে কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে।

পুরনো খবর:

বাহিনী কাহিনি



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.