মা খালে ফেলে দিলেন সন্তানকে
দু’মাস আগে একটি বেসরকারি মানসিক হোমে ১৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সদ্য বাড়ি ফিরেছিলেন রজনীকুমারী সিংহ। এর পরই মঙ্গলবার দুপুরে প্লাস্টিকে মুড়ে টালি নালায় নিজের ৭ মাসের শিশুকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ওই মহিলার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবারের এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ওই শিশুটির।
পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, এ দিন দুপুরে বছর ৩২-এর ওই মহিলা প্লাস্টিকে মোড়া একটি প্যাকেট টালিনালা পারাপারের ব্রিজের উপর থেকে নীচে ফেলেন। জলে কিছু পড়ার শব্দ পেয়ে আশপাশের দোকান থেকে লোকজন ছুটে আসে। তাঁদের দেখে ওই মহিলা পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় মানুষ তাঁকে ধরে ফেলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, ওই সময় মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, তিনি বিড়বিড় করতে থাকেন। কী ফেললেন জানতে চাওয়া হলে বলেন, “নিজের বাচ্চাকে ফেলেছি, তাতে তোমাদের কী?” ভদ্রমহিলার কথা শুনে খবর পাঠানো হয় বাঁশদ্রোণী থানায়। পুলিশ এসে মহিলাকে থানায় নিয়ে যায়। খবর পাঠানো হয় রজনীদেবীর স্বামী অশোক সিংহকে। এলাকায় পৌঁছয় দমকল ও কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দল। শিশুটির খোঁজে টালি নালায় নামানো হয় ডুবুরিদের। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।
শিশুটির খোঁজ চালাচ্ছে ডুবুরি। মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র
মহিলার পরিবার সূত্রের খবর, তাঁদের বাড়ি কলকাতা পুরসভার ১১২ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া রাজপুর-সোনারপুরের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের রজনীদেবীর স্বামী, তিন মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে সংসার। স্বামী অশোক সিংহ বড়বাজারের একটি বেসরকারি ক্যুরিয়র সংস্থায় কাজ করেন। মাসিক ৬ হাজার টাকার চাকরি করলেও, অশোকবাবুর বক্তব্য, তেমন কোনও আর্থিক অনটন বা অভাব তাঁদের ছিল না। তবে দু’মাস আগে মানসিক সমস্যা হওয়ায় রজনীদেবীকে বেসরকারি একটি হোমে ভর্তি করাতে হয়। পরে যদিও তিনি ভাল হয়ে যান বলেই পরিবার থেকে জানানো হয়েছে।
এ দিন দুপুরে রাজপুর-সোনারপুরের রামকৃষ্ণ সরণির বাড়ি থেকে ৭ মাসের ছেলে আরিয়ানকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন রজনীদেবী। বাড়িতে তখন তাঁর দুই মেয়ে ১৫ বছরের মেধা এবং ৯ বছরের মেঘনা স্কুল থেকে সবেমাত্র ফিরেছে। মেধা ক্লাস নাইনের আর মেঘনা ক্লাস ওয়ানের ছাত্রী। মহিলার আর এক মেয়ে সনিয়ার বয়স ৬। সে নার্সারিতে পড়ে। সে বাড়িতেই ছিল। তিন বোন এর পর ঘুমিয়ে পড়ে। বাবা তখন ক্যুরিয়ার সংস্থায় কাজে গিয়েছেন। পরে পুলিশ এসে বাবার খোঁজ করলে, মেয়েরাই ফোন করে বাবাকে বাড়ি আসতে বলে।
অশোকবাবুর কথায়, “বড় দুই মেয়েকে স্কুল থেকে এনে আমি আড়াইটে নাগাদ ফের কাজে যাই। ঘণ্টা খানেক পরে বড় মেয়ে মেধা ফোন করে বলে, পুলিশ এসেছে বাড়িতে। আমাকে খুঁজছে। তখনও বুঝতে পারিনি যে ছেলেকে আমার স্ত্রী টালিনালায় ফেলে দিয়েছে!” অশোকবাবু আরও বলেন, “আমার স্ত্রী-র প্রথম দিকে কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু দু’মাস আগে হঠাৎ করে পাগলামি শুরু করে। ডাক্তার দেখাই। হোমে ১৫ দিন চিকিৎসাও হয়। তার পর হোম থেকেই বলে, রজনী ভাল হয়ে গিয়েছে। তাই বাড়ি ফিরিয়ে আনি।”
ফোনে কথা বলতে গিয়ে বার বার একটি কথাই বলছিলেন, “বুঝে উঠতে পারছি না কী করে কী হয়ে গেল।” বিকেলের পর থেকে থানায় পুলিশের জেরায়-জেরায় তিনি ক্লান্ত। রাতে স্ত্রী আর পুলিশকে নিয়ে আবার যেতে হয়েছে বেসরকারি মানসিক হোমে। আর দুই মেয়ে রয়েছে পাড়ার লোকজনের সঙ্গে বাঙুর হাসপাতালে। সেখানে তাদের ছোট্ট ভাইয়ের দেহের ময়নাতদন্ত হবে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.