হেরোইনের নেশা রুখতে পথে নামলেন মহিলারা
লাকায় হেরোইনের কারবার বন্ধ করার দাবিতে মিছিল করলেন গ্রামের মহিলারা। হল পথ অবরোধ। অবিলম্বে হেরোইন বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হল থানায়। বনগাঁ শহরের জয়পুর গাজিপাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে হেরোইনের কারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে সোমবার এ ভাবেই প্রতিবাদে সরব হলেন এলাকার মহিলারা। মিছিলে ছিল কচিকাঁচারাও। ছিলেন বনগাঁ পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের চন্দনা সাহা। তিনি বলেন, “হেরোইনের মতো মারণ নেশার বিরুদ্ধে স্থানীয় মহিলারা যে ভাবে প্রতিবাদে নেমেছেন, মহিলা হিসাবে আমিও তার একজন শরিক। যে ভাবে বনগাঁয় এই নেশা ছড়িয়েছে তাতে প্রত্যেকের এর বিরুদ্ধে এগিয়ে আসা উচিত।” এসডিপিও (বনগাঁ) রূপান্তর সেনগুপ্ত বলেন, “কয়েকজন হেরোইন বিক্রেতাকে ইতিমধ্যেই ধরা হয়েছে। বাকিদেরও শীঘ্রই ধরা হবে।”
বনগাঁর জয়পুরে গাজিপাড়ায় মহিলাদের মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।
বনগাঁর এই এলাকার বাসিন্দাদের বেশিরভাগই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ শুধু জয়পুর নয়, অদূরেই জামতলাতেও হেরোইনের রমরমা কারবার দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। পুলিশ-প্রশাসন সব জানে। কিন্তু তাতে হেরোইনের কারবারীদের কোনও অসুবিধা হয় না। গাজিপাড়ার বাসিন্দা ঝর্না মণ্ডল। স্বামী মোশিয়ার দিনমজুরি করে কোনওরকমে সংসার চালান। ছেলে মুন্নার বিয়ে দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন বিয়ের পরে ছেলেকে ওই মারণ নেশার হাত থেকে ফিরিয়ে আনা যাবে। কিন্তু তা হয়নি। মুন্নার আট মাসের একটি সন্তানও রয়েছে। সংসারের প্রয়োজন সত্ত্বেও কোনও কাজে মতি নেই তাঁর। তার উপর বাড়ি থেকে নেশা করার টাকা না দিলে চলে স্ত্রীর উপরে নির্যাতন, বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝামেলা। ছেলের এমন অত্যাচারে হাল ছেড়ে দেওয়া ঝর্নাদেবী তাঁর সংসারের এমন দশার জন্য দুষেছেন এলাকায় হেরোইনের কারবারকেই। শুধু ঝর্নাদেবীই নন, তাঁর সংসারের মতো অবস্থা আরও অনেকেরই। এমনকী বাড়িতে চেয়ে নেশা করার টাকা না পেয়ে বাড়ি থেকে চাল, আটা, বাসনপত্র বিক্রি করে দিচ্ছে স্বামী কিংবা ছেলে।
গ্রামবাসীরা জানান, কোনওরকম রাখঢাক নেই, চব্বিশ ঘণ্টাই এই এলাকায় হেরোইন বিক্রির কারবার চলে। কিছু মহিলা আছে, যারা স্থানীয় যুবকদের কাছে এ সব বিক্রি করে। এমনকী বাড়ির মধ্যেই হেরোইনের ব্যবসা ও খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে বহু জায়গায়। এখানে হেরোইনের এতটাই রমরমা যে এলাকার বাইরে থেকে, এমনকী কলকাতা থেকেও এখানে অনেকে হেরোইন কিনতে আসে।
দিনের পর দিন এই অবস্থা চলে এলেও এতদিন কেন তাঁরা এ ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা ভাবেননি? এলাকার মানুষের বক্তব্য, পুলিশ-প্রশাসন নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে এই আশা ছিল তাঁদের। কিন্তু ক্রমশ বেড়ে চলা হেরোইনের কারবারীদের দাপট তাঁদের এই আন্দোলনে নামতে বাধ্য করেছে। এ দিন সকালে কয়েকশো মহিলার সঙ্গে কচিকাঁচারাও প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হয়। অবরোধ করা হয় বনগাঁ-চাকদহ সড়ক। কিছুক্ষণ পরে বনগাঁ থানার পুলিশ গিয়ে হেরোইনের কারবারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। এ নিয়ে থানায় স্মারকলিপিও দেন তাঁরা। পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশেরই একাংশের প্রশ্রয়ে হেরোইনের কারবারীদের এতটা রমরমা। বনগাঁ থানা সূত্রের খূবর, গত দু’মাসে জয়পুর, জামতলা, জয়ন্তীপুর প্রভৃতি এলাকা থেকে হেরোইনের কারবারে যুক্ত এবং এই নেশায় আসক্ত ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই সব এলাকায় হেরোইনের রমরমা বন্ধে অভিযানও নিয়মিত চলছে।
পুলিশের এ হেন আশ্বাসে অবশ্য আশ্বস্ত হতে পারছেন না রুবিনা শেখ, ফতিমা মণ্ডল, সন্ধ্যা সরকার, নাজমার মতো মহিলারা। এঁদের বক্তব্য, “সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে এই এলাকায় ২৫-৩০ বছর ধরে এই কারবার চলে আসছে। এর আগে নানাজনে কখনও কখনও এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেও তা বন্ধ হয়নি। এর জন্য আমাদের এলাকার বদনাম রটেছে। হেরোইনের কারবারের জন্য সমাজবিরোধীদের দাপট বেড়েছে। মেয়েরা ভয়ে ভয়ে থাকে। এলাকার বদনামের জন্য কি ছেলে কি মেয়ে, বিয়ের সম্বন্ধ হলেও তা পরে ভেঙে যায়। তা ছানা বহু সংসারে স্বামী, ছেলের হেরোইনের নেশার কারণে অশান্তি লেগে রয়েছে। এ ভাবে আর পারা যাচ্ছে না। তাই শেষ পর্যন্ত কোমর বেঁধেই পথে নেমেছি। আমাদের ঘরের লোকদের এই নেশার কুফল রক্ষা করতে পারিনি। তাই প্রতিজ্ঞা করেছি এলাকায় সুস্থ পরিবেশ আমরা ফিরিয়ে আনবই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.