সীমান্ত জেরবার মাদক কারবারে
স্কুলব্যাগে সাদা পাউডার, স্বরূপনগরে ধৃত ৩ ছাত্রী
ড়সড় প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরা সাদা গুঁড়ো। দেখতে সাধারণ পাউডারের মতো। স্কুলব্যাগে ভরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে দিতে পারলেই মেলে প্যাকেটপিছু ৩০ টাকা। এডিজি (বিএসএফ) বংশীধর শর্মা বলেন, “সোমবার স্বরূপনগরের হাকিমপুর সীমান্তে তিন স্কুল-ছাত্রীর ব্যাগ থেকে এমনই তিনটি প্যাকেট পাওয়া গিয়েছে। মোট ওজন ১৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। সন্দেহ করা হয়েছিল, সাদা গুঁড়োটি মাদক।” ওই তিন ছাত্রীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। খবর যায় কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন ‘নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো’ (এনসিবি)-তেও। এনসিবি সূত্রের খবর, পরীক্ষায় ধরা পড়ে, দু’ধরনের ওষুধ রয়েছে ওই প্যাকেটগুলিতে। একটি ‘অ্যাম্ফিটামাইন’, অন্যটি ‘মেথাকুয়েলন’। দু’টি রাসায়নিকই চিকিৎসার কাজে লাগে। আবার সেগুলিকে নেশার ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করে অনেকে।
প্রাথমিক জেরায় জানা গিয়েছে, স্কুলব্যাগে করে এমন প্যাকেট হাতবদলের কাজ বেশ কিছু দিন ধরেই করছে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীরা। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “ধৃত তিন জন সম্পর্কে খোঁজ করা হচ্ছে। অনেক সময়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় ছাত্রী সাজিয়ে স্কুল ব্যাগে ভরে নানা জিনিস পাচার করা হয়। তাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা কম থাকে।”
ছাত্রীদের কাছে পাওয়া সন্দেহজনক পাউডার। —নিজস্ব চিত্র
বিএসএফ ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তিন ছাত্রীর সঙ্গে আরও তিনটি মেয়ে ছিল। সোমবার সকাল ৭টা নাগাদ সকলেই বড় এবং ভারী ব্যাগ নিয়ে সাইকেলে যাচ্ছিল। সন্দেহের বশে বিএসএফ জওয়ানেরা চেকপোস্টের কাছে দাঁড় করান তাদের। তিন জন পালায়। ধরা পড়ে তিন জন। সোনাই নদীর ধারে শিক্ষকের কাছে পড়তে যাচ্ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জওয়ানদের জানায় ওই মেয়েরা। কিন্তু তল্লাশি চালিয়ে তাদের ব্যাগ ঘেঁটে সাদা গুঁড়ো-ভর্তি প্যাকেটগুলি মেলে।
জেরার মুখে ভেঙে পড়ে ওই মেয়েরা জানায়, কয়েক মাস ধরে রফিকুল সর্দার নামে স্বরূপনগর গ্রামের এক ব্যক্তি তাদের এই কাজ দিয়েছিল। কথা ছিল, পাউডার ভরা প্যাকেট চেকপোস্ট পেরিয়ে রফিকুলেরই অন্য একটি বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে। বিএসএফ তল্লাশি করবে না বলে বছর ষোলো-সতেরোর ওই মেয়েদের আশ্বাস দেয় রফিকুল। ছাত্রীরা জানায়, টানাটানির সংসার। প্যাকেটপিছু ৩০ টাকার লোভে তারা এই কাজ করত। আরও কিছু স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়ে এই কাজে জড়িত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। রফিকুলের বাড়িতে পুলিশ-বিএসএফ যৌথ তল্লাশি চালায়। তবে কাউকে ধরা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, স্বরূপনগরের বাসিন্দা ধৃত তিন কিশোরীর দু’জন একই হাইস্কুলের ছাত্রী। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “ছাত্রীরা যদি মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তবে তা সাঙ্ঘাতিক ঘটনা। এমন আগে শুনিনি।” তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পাচারের কাজে স্কুলপড়ুয়াদের ব্যবহার নতুন ঘটনা নয়। অনেক সময়ে স্কুলের পোশাকেই ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে পাচারের কাজ করানো হয় বলে অভিযোগ। পাচার-চক্রের চাঁইদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন তাঁরা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সীমান্তে বিএসএফের পাহারা খুবই ঢিলেঢালা। পাচারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগও থাকে জওয়ানদের একাংশের। পুলিশ ও বিএসএফের গাফিলতিতেই পাচার দিন দিন বেড়ে চলেছে বলে ক্ষোভ গ্রামের মানুষের। তবে পুলিশ ও বিএসএফ অভিযোগ মানেনি।
এনসিবি সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলব্যাগে করে ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে মাদক পাচারের উদাহরণ এর আগেও রয়েছে। পাচারের পরিমাণও ভয়াবহ। এনসিবি-রই একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০১০ সালে বনগাঁ সীমান্তে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে জানা গিয়েছিল, সে এক সময়ে দিনে ১০০ কিলোগ্রাম হেরোইন বাংলাদেশে পাচার করত।
ঘটনাচক্রে হেরোইন বিক্রি ও মাদকের নেশা বন্ধের দাবিতে এ দিনই পথে নামেন বনগাঁ শহরের জয়পুর-গাজিপাড়ার মহিলারা। মিছিল করে বনগাঁ-চাকদহ রোড অবরোধ করেন তাঁরা। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে থানায় স্মারকলিপি দেন। বিক্ষোভকারী মহিলাদের বক্তব্য, হেরোইনের কারবারের জন্য এলাকার বদনাম হচ্ছে। এলাকার ছেলেমেয়ের সঙ্গে অন্য জায়গার বাসিন্দারা বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরি করতে চান না। নেশার সূত্রেই সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। ওই মহিলারা বলেন, “স্বামী-ছেলেরা নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। অশান্তি বাড়ছে। এ ভাবে আর পারা যাচ্ছে না। তাই সকলে মিলে প্রতিবাদে নেমে পড়েছি।” জেলা পুলিশের কর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন হেরোইন তথা মাদকের কারবারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.