সামনে বসেই ফিসফাস, দুই মহিলাকে ধমক
দুই মহিলাই মনে করছেন, বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী শুধু ধমকেছেন। কোনও তকমা পেতে হয়নি।
এক জন নীলমণি সর্দার। অন্য জন সতিনা পিয়াদা। হাত খানেক দূরে মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটানা তিনি দিয়ে চলেছেন উন্নয়নের নানা ফিরিস্তি। মঞ্চের সামনের ব্যারিকেডের ঠিক পিছনেই বসে ছিলেন দরিদ্র পরিবারের ওই দুই মহিলা। তাঁরা চাইছিলেন এক ফাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে নিজেদের সমস্যার কথা জানাবেন। কাজ চাইবেন। তাই চলছিল ফিসফাস।
আচমকা মুখ্যমন্ত্রীর ধমক, “আপনারা ওখানে কী করছেন? এ সব কেন করছেন? আমি মিটিংটা করতে চাই। মিটিং করার সময় ডিসটার্ব করছেন কেন? আমার খুব অসুবিধা হচ্ছে। আপানাদের কী বলার আছে? এগুলো সিপিএম করে, সিপিএম করায়।”
কুলপি মোড়ের মাঠে নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সুদীপ আচার্য
এমন ধমকের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না নীলমণি-সতিনা। দু’জনেই তৃণমূল সমর্থক। আগে একাধিকবার জেলার নানা প্রান্তে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় হাজির থেকেছেন। কিন্তু এমন কখনও ঘটেনি। ধমক খেয়ে কিছুটা চুপসেই গিয়েছিলেন দু’জনে। সভা শেষে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী দু’জনকেই ডেকে কথা বলেন। কিন্তু দু’জনেই তখনও তটস্থ।
সোমবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী সভা ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি মোড়ের মাঠে। প্রায় দশ হাজার মানুষ এসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী আচমকা ধমকে ওঠায় একটু চমকে যান সকলেই। এর আগেও অবশ্য কয়েকটি সভায় অনেকের মাঝখানে কয়েক জন প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করেছেন। বেলপাহাড়িতে সভায় সারের দাম বাড়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করায় বিপাকে পড়তে হয়েছিল স্থানীয় কৃষিজীবী যুবক শিলাদিত্য চৌধুরীকে। ক’দিন আগেই কামদুনিতে হাতের কাছে পেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে নিজেদের দুরবস্থার কথা জানাতে চেয়েছিলেন কিছু গ্রামবাসী। তাঁদের উদ্দেশেও মমতা বলেন, “ওরা সিপিএম। ওরা মাওবাদী।”
সেই দুই মহিলা। নীলমণি সর্দার এবং সতিনা পিয়াদা। —নিজস্ব চিত্র
কুলপিতে অবশ্য ধমকের পরেই মুখ্যমন্ত্রী কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের নির্দেশ দেন, “ওদের কাছে যে কাগজপত্র আছে, সেগুলো নিয়ে নিন। আমি সেগুলো নিয়ে নেব।” তারপর নিজেই স্বগতোক্তি করেন, “পুরো মিটিংটার তাল কেটে দিল।” সভা শেষে দুই মহিলার সঙ্গে তিনি কথাও বলেন, মঞ্চেও ডেকে নেন। সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “ওঁরা নিজেদের পরিবারের লোকেদের কাজের আর্জি নিয়ে এসেছিলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি।”
নীলমণি-সতিনার বাড়ি কুলপিতেই। দু’জনেরই স্বামী ভ্যান চালান। নুন আনতে তাঁদের পান্তা ফুরোয়। নীলমণির কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী যদি একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেন, তা হলে অনেক উপকার হয়। সে কথাই তাঁকে বলব বলে দু’জনে কথা বলছিলাম। হঠাৎ এমন ধমক খেতে হবে ভাবিনি। যাক, শেষ পর্যন্ত যে বেশি কিছু হয়নি, এটাই ঢের। মুখ্যমন্ত্রী ১০০ দিনের কাজে ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।” সতিনাও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ রেগে যাবেন বুঝব কী করে?”
জেলার নানা উন্নয়নের ফিরিস্তি দেওয়া ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী এ দিনের সভায় ফের নারী নির্যাতনের বিষয়টি উত্থাপন করেন। ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’ এ রাজ্য নারী নির্যাতনে প্রথম বলে যে তথ্য প্রকাশ করেছে, এ দিন তা ফের নস্যাৎ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, “ওগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের নয়, কংগ্রেসের পরিসংখ্যান। আমরা আমাদের রাজ্যের পরিসংখ্যান কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছি।” কামদুনির উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “ধর্ষণের ঘটনা খুবই খারাপ। আমরা দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করেছি। এক মাসে চার্জশিট দেব।” যদিও কামদুনি গিয়ে তিনি ১৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেই সময়সীমা ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমকে কটাক্ষ করতে এ দিনও ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী। নীলমণি ও সতিনার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী যখন কথা বলছিলেন, তখন সেখানে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ভিড় জমে যায়। তিনটি টিভি চ্যানেলের নাম করে তিনি বলে ওঠেন, “একদম শকুন। কিছু একটা পেলেই হল। কী রকম ঝাঁপিয়ে পড়েছে দেখেছেন?” কুলপির পরে মগরাহাটেও এ দিন নির্বাচনী জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.