|
|
|
|
সিপিএম-মাওবাদী-কংগ্রেসের সঙ্গী নাকি এবিপি-ও |
অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও সীমান্ত মৈত্র • দত্তপুকুর ও গাইঘাটা |
আগে তাঁর অভিযোগ ছিল, সিপিএম তাঁকে হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই হত্যার অভিযোগ দিয়েই বুধবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে আগের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে এ দিন গাইঘাটার জনসভায় তিনি জানালেন, সিপিএম -মাওবাদী ও কংগ্রেস একজোট হয়ে তাঁকে হত্যার চক্রান্ত করছে। সঙ্গে রয়েছে এবিপি। সোমবার কামদুনি এলাকায় তাঁকে হত্যার চক্রান্তও হয়েছিল বলে এ দিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গাইঘাটার চাঁদপাড়ায় নির্বাচনী সভায় এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাকে কাল পুলিশ থেকে বলা হল, ‘আপনি কি জানেন আপনাকে খুন করার একটা পরিকল্পনা চলছে?’ আমি জানি, সিপিএম, কংগ্রেস ও মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাকে খুন করার পরিকল্পনা চলছে এবং তাতে এবিপি -র প্ল্যান আছে। এই প্ল্যানে যে এবিপি আছে, তা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি।” তিনি আরও বলেন, “সিপিএমের লোকেরা জামাইষষ্ঠী খেতে গ্রামে এসেছিল, আর বেরোয়নি। ... আমি খুব সিরিয়াস, রাফ অ্যান্ড টাফ। আমি মরে গেলেও আমায় পুড়িয়ে দিলে হবে না। আমি কিন্তু রেকর্ড রেখে দিয়ে যাচ্ছি ! সব রেকর্ড। ইট ইজ রেকর্ডেড। কে কী করবে, কোথায় কী প্ল্যান হচ্ছে ...।”
কামদুনিতে যে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা বোঝাতে গিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেন বলছি এ কথা? আমি (কামদুনি থেকে) বেরিয়ে চলে এসেছি। আমার সিকিওরিটিরা আমাকে বলছে, ‘দিদি, আপনি কি জানেন, আপনার কাছে একটাও সিকিওরিটি ছিল না ! দু’ঘণ্টার জন্য আপনি একদম একা হয়ে গিয়েছিলেন ! আপনি যে কোনও সময় মার্ডার হয়ে যেতে পারতেন ! ’ আমি বললাম, দেখ, আমি তো ও সব কিছু ভাবিও না, বলিও না। ওরা বলল, ‘আপনাকে সেন্ট্রাল হোম মিনিস্ট্রি বলেছে, ইওর লাইফ ইজ ইন ডেঞ্জার। আর এরা এ সব করছে, আর আপনি করতে দিচ্ছেন ! ’ আমি বললাম, কী হয়েছে? ওরা বলল, ‘আপনি যে চলে এসেছেন, একটি কাগজের রিপোর্টার ... ’, আমি এখানে কাগজটার নাম আর ভদ্রতা করে বললাম না। নামটা তাঁর অরুণাক্ষ। খুঁজে নেবেন। তিনি চার জন সিপিএমের কমরেডকে বলছেন, আপনারা বসে পড়ুন, পুলিশগুলোকে আটকে দিন। তার মানে আপনি কী করলেন, জানেন? আপনি আমার সিকিওরিটিগুলোকে আটকে দিলেন ! আপনি আমার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। আপনার বোঝা উচিত, আপনি এক জন রিপোর্টার। ইউ ক্যান নট ডু দিস। আইন কিন্তু কাউকে ক্ষমা করে না। আপনি যে করেছেন, তার এভিডেন্স আছে আমাদের কাছে। প্রমাণও আছে। দেখুন, কেউ ভুল করলে আমি তাঁর বিরুদ্ধে কিছু করব না। এটা আমার নীতি নয়।” |
|
গাইঘাটা থেকে শুরু করলেন পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার। বুধবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
মাত্র চার জন মহিলাকে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ‘জেড -প্লাস’ নিরাপত্তায় মোতায়েন অফিসারদের দু’ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ করেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘটনা দেখানোর জন্য এবিপি -আনন্দের উপরেও তিনি যে ক্রুদ্ধ, তা বুঝিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বেশি বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়। যিনি বসে বসে এ সব আলোচনা করছেন, জিজ্ঞেস করুন, আপনি কী করেছেন? দেব? ভাতের হাঁড়ি খুলে দেব? ফাঁস করব? কোর্টে তো কেস হয়ে আছে, কোর্টের অর্ডারে। বলব? বড় বড় জ্ঞান দিচ্ছেন সবাইকে .... জ্ঞানদাতা !....সবাইকে জ্ঞান দিচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী নাকি সব কিছু, ধর্ষণ করেছে। .... আমি নাকি ধর্ষণ করতে গেছি, বুঝুন ! তা -ও যদি আমি একটা ছেলে হতাম ! এ তো মহা মুশকিল ভাই। মানে এঁরা কারা? এঁরা সমাজের কারা? এঁদের না আছে লাজ, না আছে লজ্জা ! যেটা খারাপ, সেটাকে খারাপ বলো, আমি নিজে আগে বলব খারাপ। কে সাপোর্ট করে? কোন তৃণমূল করেছে? ওগুলো সব ক’টা মজিদ মাস্টারের বাহিনী ছিল। সব ক’টা শাসনে অত্যাচার করেছে। বড় বড় ভাষণ আর কথা? তার নিজের নামে কত অভিযোগ ! বলে দেব কোনও দিন লাইভ -এ, বলে দিলাম। নাম জানি, কাগজ দেখিয়ে দেব। কোর্টের কাগজ, থানার কাগজ। বলছি না, ভদ্রতা আমি করব শুধু? আর তোমরা অভদ্রামি করে আমাকে খুন করার প্ল্যান করবে, দু’টো হয় না। হয় ভদ্রতা, সৌজন্যতা ....ভদ্রতা আমার দুর্বলতা নয়। আমি আপনার সব কিছু জানি। প্লিজ ডোন্ট টেল মি দ্যাট আমি শুড হ্যাভ ওপেন্ড মাই মাউথ। আমি খুলছি না, এখনও খুলছি না। এখন আমি বন্ধ করে রেখে দিয়েছি। কিন্তু আপনি দয়া করে যেটা সত্য সেটা বলুন, আমার কোনও অভিযোগ নেই। দশটা গালাগালি দিন আমায়, কিন্তু মনে রাখবেন, আপনারাও যদি কোনও মেয়ের উপর অত্যাচার করেন, সেটাও অত্যাচার। গ্রামে -গঞ্জে হলে অত্যাচার, আপনারা যদি কেউ করেন, তা হলে সেটাও কিন্তু অত্যাচার। খেয়াল রাখবেন।”
সোমবার কামদুনির ধর্ষিতা ও নিহত তরুণীর বাড়ি গিয়েছিলেন মমতা। সেখানে মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে সামান্য বাক্য বিনিময় হয় তাঁর। পরে এলাকারই কিছু মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্থানীয় সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মমতা উত্তেজিত হয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। এমনকী, এর পিছনে সিপিএম -মাওবাদীদের চক্রান্তও আছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। কেন তিনি তাঁদের মাওবাদী বলেছেন, এ দিন গাইঘাটার জনসভায় তার ব্যাখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, পোশাক -পরিচ্ছদ দেখেই তিনি মাওবাদীদের চিনতে পারেন। তাঁর দাবি : তিনি কামদুনি না -গেলে জানাই যেত না, ওখানে মাওবাদীরা আছে ! সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারাই ওঁকে খুন করার চেষ্টা করেছিল বলে মমতার অভিযোগ। |
আমি জানি, সিপিএম, কংগ্রেস ও মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাকে খুন করার পরিকল্পনা চলছে এবং এই প্ল্যানে যে এবিপি আছে, তা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
কামদুনিতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের গায়ে মুখ্যমন্ত্রী সিপিএম ও মাওবাদী তকমা এঁটে দেওয়ায় এলাকাবাসীর একাংশ বিস্মিত ও ব্যথিত হয়েছিলেন। এ বার মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বিরুদ্ধে তাঁকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ তোলার পরে কার্যত তাঁরা যে হতবাক, ওঁদের অনেকের কথায় তার ইঙ্গিত মিলেছে।
বস্তুত ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানা ঘটনায় মমতা সহিষ্ণুতা হারিয়েছেন বলে নানা মহলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি মানসিক ভাবে সুস্থ কিনা, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। এ দিন কামদুনিতে ‘সিপিএমের চক্রান্ত’ প্রসঙ্গে মমতার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “ওঁকে খুনের চক্রান্ত বাজে কথা। বারবার রাজনীতিতে বাজে কথা, মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস উনি কী করে ত্যাগ করবেন?” মুখ্যমন্ত্রীর কামদুনি সফর সম্পর্কে পুলিশও যে আগাম কিছু জানত না, তার উল্লেখ করে বিমানবাবুর মন্তব্য, “পুলিশ, সাংবাদিক কেউ জানত না। কাকপক্ষীও আগাম জানত না। সিপিএম কী করে জানবে, উনি কামদুনি যাবেন? খালি সিপিএমের নামে কুৎসা করা ! ” বিমানবাবু বলেন, “ওখানে লাল পতাকা কোথায়? মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময়ে ৩২টা তৃণমূলের পতাকা ছিল। কিন্তু একটাও লাল পতাকা ছিল না। সকল গ্রামেই ওঁরা জিতেছেন। উনি খালি লাল -আতঙ্ক, সিপিএম -আতঙ্কে ভুগছেন। আর সিপিএম -সিপিএম করছেন ! ” সংবাদমাধ্যমের একাংশের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর বিষোদ্গারের প্রতিবাদে এ দিন সন্ধ্যায় বারাসতে বিক্ষোভ -মিছিল করে ফব। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিনের সভায় বলেছেন, “আমাকে অনেকে ফোন করে। আমি বলি, নাটক -যাত্রা, ফিল্ম দেখুন। অন্য চ্যানেল দেখুন। মাথা গরম করবেন না।” এবং এই সূত্রেই সংবাদমাধ্যমের একটি অংশের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, “কে কোথায় কী করছে, সব নজরে রাখছি। আমার লড়াই ইঞ্চিতে -ইঞ্চিতে।”
|
পুরনো খবর: কামদুনিতে রোষের মুখে পড়ে মমতা দুষলেন সিপিএম -কেই |
|
|
|
|
|