এসপি’র মন্তব্যে উত্তাল খরজুনা
ধর্ষণের সম্ভাবনা দেখছেন ডাক্তাররা
র্ষণ নয় নিছকই খুন। বড়ঞার খরজুনা গ্রামে মাঝ বয়সী তরুণী খুনের ব্যাপারে এমনই দাবি করেছিলেন মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর। সোমবার ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অবশ্য পুলিশের এই একতরফা দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে চিকিত্‌সকেরা জানান, ওই মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়নি এ কথা জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে হাসপাতালের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গিয়েছে। রবিবার বড়ঞার ওই গ্রামে গিয়ে পুলিশ সুপার জানান, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে ওই মহিলাকে। তিনি বলেন, “পরিত্যক্ত যে ঘরে মহিলার দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল সেখানে জানলা-দরজা নেই। ও পথে সচরাচর কেউ চলাচল করেন না। মহিলাকে অন্যত্র খুন করে ওখানে ফেলে রেখে যাওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ ভোরেই এক পড়শি ওই মহিলাকে বাড়ির লাগোয়া রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখেছিলেন। অর্থাত্‌ অন্য কোথাও তাঁকে খুন করে দিনের বেলায় লাশ ঘাড়ে করে ওই ঘরে ফেলে রেখে যাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে প্রশ্ন ওই মহিলা কী নিজেই ওই ঘরে গিয়েছিলেন? তা ছাড়া ওঁর শরীরেও তেমন কোনও আঘাতের চিহ্ন দেখিনি।” পুলিশের দাবি ছিল, ধৃত প্রকাশ দাসও পুলিশের জেরায় জানিয়েছে ওই মহিলার সঙ্গে তার পুরনো সম্পর্ক ছিল।
বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন গ্রামের মহিলারা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
এসপি’র এই ‘তত্ত্বে’ই ক্ষেপে ওঠেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা দাবি করেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার আগেই ‘সরকারের মুখ রক্ষায়’ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে পুলিশ সুপার এমন ‘তত্ত্ব’ খাড়া করলেন কী করে? এ নিয়ে বিক্ষোভের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধও শুরু করেন তাঁরা। ক্রমেই উত্তাল হয়ে ওঠে খরজুনা। এ দিন সকাল থেকে ওই মহিলার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হয়ে ক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা।
বড়ঞার বিধায়ক কংগ্রেসের প্রতিমা রজক এ দিনও গিয়েছিলেন ওই গ্রামে। তিনি জানান, গ্রামের অনেকের সঙ্গেই কথা বলে তিনি জানতে পেরেছেন প্রকাশের সঙ্গে ওই মহিলার কোনও ‘সম্পর্ক’ই ছিল না। তিনি বলেন, “সরকারের এখন টালমাটাল অবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। রাজ্য জুড়ে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা। এ অবস্থায় পুলিশ ইচ্ছে করে এটিকে নিছকই খুনের ঘটনা এবং আততায়ীর সঙ্গে মহিলার সম্পর্ক ছিল বলে ঘটনাটি লঘু করতে চাইছে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রকাশের বদনামের লেখাজোখা নেই। এর আগেও একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে এবং গ্রামের এক মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে সে। দেড় বছর আগে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় জড়িয়েও বেশ কিছু দিন গ্রাম ছাড়া ছিল সে। এ নিয়ে পরে সালিশি সভাও বসে।
রবিবার বেশ ভোরেই উঠেছিলেন ওই মহিলার প্রতিবেশী অনাথ দে। তিনি বলেন, “আমি রবিবার পাঁচটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে গোয়াল ঘর থেকে গরু খুলছিলাম। তখন দেখি বৌমা উঠোন পরিস্কার করছে। আমি জানতে চাই, এত সকালে উঠেছ কেন? ও বলে, ‘বাপের বাড়ি ফউলশিখর যাব, সেখানে ধর্মরাজের পুজো আছে। তাই সকালে উঠেছি।’ তার পরে বৌমা মাঠের দিকে চলে যায়।”
এ দিন ওই মহিলার স্বামীও বলেন, “স্ত্রীকে ধর্ষণ করেই খুন করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সরকারের মুখ বাঁচাতে এখন ধর্ষণের ঘটনা চাপা দিতে চাইছেন। আমার স্ত্রীর সঙ্গে কারও কোনও সম্পর্ক ছিল না।” ওই মহিলার দেওর বলেন, “ধর্ষণের ঘটনা চাপা দিতে আমার বৌদির চরিত্রে কালি লেপার চেষ্টা করছে পুলিশ। পুলিশ সুপারকে এই অধিকার কে দিল?”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.