|
|
|
|
বিয়েতে আপত্তি, পাশে গ্রামবাসী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
এত সচেতনতা প্রচার, এত আলোচনাসবই বৃথা। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে দিয়ে পরিবারের দায় ঝেড়ে ফেলার অভ্যাস যায়নি এখনও। রবিবার বিকেলেই পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থানার রঘুনাথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পূর্ব সুকুটিয়া গ্রামে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে বাবা-মা’র বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা রুখেছে এক নাবালিকা। রেশমা খাতুন নামে বছর তেরোর ওই কিশোরীর বাবা-মা পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়েছেন, সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দেবেন না তাঁরা। |
|
রেশমা খাতুন। —নিজস্ব চিত্র। |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকার মা প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর পূর্ব সুকুটিয়া গ্রামের শেখ রাজুকে বিয়ে করেছিলেন। রাজু কলকাতায় রিকশা চালান। কাজের সূত্রে হাওড়ার শিবপুরে থাকেন। স্ত্রী-মেয়েকেও নিয়ে গিয়েছিলেন সেখানে। কিন্তু সৎ বাবার সঙ্গে একেবারেই বনিবনা হচ্ছিল না রেশমার। তাই মাস কয়েক আগে রেশমাকে পাঁশকুড়ায় গ্রামের বাড়িতে বাবার কাছে রেখে যান রাজু। সেখানে ক্রমেই মানিয়ে নিচ্ছিল রেশমা। রবিবার বিকেলে আচমকাই তার বাবা-মা পাঁশকুড়ার বাড়িতে এসে তাকে নিয়ে যেতে চান। রেশমা বুঝতে পারে, তার বিয়ে দিয়ে দায়ভার ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন সৎ বাবা। স্কুলে পড়া বন্ধ হয়ে গেলেও এত অল্প বয়সে সংসার পাততে চায়নি রেশমা। তীব্র আপত্তি জানায় সে। জোর করলে চিৎকার করতে থাকে। তাই শুনে পড়শিরা ছুটে আসেন। গ্রামবাসীদের কাছে রেশমা বলেন, “বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিতে চাইছে। আপত্তি করায় মারধর করছে।” এরপরেই গ্রামবাসীরা ওই নাবালিকার পাশে এসে দাঁড়ান। স্থানীয় বাসিন্দা অতীশ মাজী বলেন, “রেশমার কথা শুনে গ্রামবাসীরা ওর বাবা-মাকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন।” পুলিশ গ্রামে গিয়ে রেশমার বাবা-মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পরে পুলিশের কাছে মুচলেকা লিখে ছাড়া পান তাঁরা। রেশমাকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী দাদুর কাছেই রাখা হয়েছে। দাদু পেশায় দিনমজুর নুর আলি বলেন, “ওর বাবা-মা কেন নিয়ে যেতে চাইছিল, তা আমাকে জানায়নি। তবে, আমিও চাই না এখনই রেশমার বিয়ে হোক। ও এখানে ভালই আছে।”
বিয়ে না হয় রুখল। কিন্তু রেশমার পড়াশোনার কি হবে? স্থানীয় রঘুনাথবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান কবিতা ঘড়া বলেন, “রেশমা যদি পড়াশোনা করতে চায় আমরা সাধ্যমতো সাহায্য করব। মঙ্গলবার পঞ্চায়েত অফিসে ডেকে আমি নিজে ওর সঙ্গে কথা বলব। প্রয়োজনে ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্য করব।” |
|
|
|
|
|