রাজনৈতিক দলকে হটিয়ে প্রার্থী বাছলেন গ্রামবাসীই
নুন্নয়নের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে বীরভূমের এক প্রত্যন্ত গ্রাম। রাজ্যের বিগত পঞ্চায়েত ভোটগুলিতে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মুখে গ্রামবাসীরা শুনেছিলেন উন্নয়নের বুলি। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি গল্প হয়েই রয়ে গিয়েছে। মাড়গ্রাম থানার কালুহা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত তপন গ্রাম পায়নি উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও।
এ বার তারই প্রতিবাদে জোট বেঁধেছেন গ্রামের প্রায় সাড়ে চার হাজার বাসিন্দা। রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রত্যাখান করে সকলে মিলে মনোনীত করেছেন দুই নির্দল প্রার্থীকে। গ্রামবাসীর অনুরোধে গ্রামের দুই সংসদে প্রার্থী দেননি কোনও দলই। ফলে তপন গ্রামের দু’টি সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন তাঁদেরই ঠিক করা দুই প্রার্থী। আবির মেখে বিজয়োত্‌সবের পরে গ্রামবাসীর লক্ষ্য পঞ্চায়েত সমিতির আসনটিতেও তাঁদেরই মনোনীত প্রার্থীকে জেতানো। সেই প্রার্থীর জন্য এখন পাড়ায় পাড়ায় চলছে ঢ্যাড়া পেটানো। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা লালচাঁদ শেখের কথায়, “ঢের হয়েছে। কংগ্রেস-সিপিএম-তৃণমূল-বিজেপি আর নয়। এ বারে আমাদের প্রার্থীই আমাদের গ্রামের উন্নয়ন করবেন।”
ফলে ১০ নম্বর সংসদে গ্রামবাসীর প্রার্থী মোরশেদ আলির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক দল প্রার্থী দেননি। ১১ নম্বর সংসদেও জয়ী হয়েছেন তাঁদেরই প্রার্থী ফোকেন্নেশা বিবি। তাঁর বিরুদ্ধে প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেস ও তৃণমূল দু’ দলই প্রার্থী দিয়েছিল। পরে অবশ্য বাসিন্দাদের দাবি মেনে দুই প্রার্থীই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। দু’টি সংসদই আগে সিপিএমের দখলে ছিল। যার একটি তাদের দখলে ছিল টানা ২৫ বছর। এ বারে সিপিএম দু’টি সংসদেই কোনও প্রার্থীই দেয়নি। গ্রামের প্রাক্তন সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ আলাউদ্দিন খোলাখুলিই বলেন, “গত দশ বছর ধরে পঞ্চায়েত এই গ্রামে কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করেনি। রাস্তা সংস্কার বা পানীয় জলের জন্য নলকূপ বুনিয়াদি কোনও কাজই হয়নি।” যার জন্য কংগ্রেস পরিচালিত কালুহা পঞ্চায়েতের অসহযোগিতাকেই দায়ী করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, “পঞ্চায়েতের অসহযোগিতার জন্যই ১০০ দিন প্রকল্পে সংসদের ২৬০ জন জব কার্ডধারীর মধ্যে শুধু ৩৫ জন মাত্র ২৫ দিন কাজ পেয়েছেন।” আর এক প্রাক্তন সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য সোফিয়া বিবিও একই দাবি করেছেন।
গ্রামবাসীরাও অবশ্য সে কথা শুনতে নারাজ। তাঁরা মনে করছেন, রাজনীতির কূটকাচালির বলি হয়েছে এই গ্রাম। “রাজনীতির কারবারিরা ভোট মিটলেই এই গ্রামের দিকে আর ফিরে তাকাননি। তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষ চাপিয়েছেন। আমরা তাই আর তাঁদের সুযোগ দেব না।” জানাচ্ছেন গ্রামের যুবক সাবের আলি। গ্রামের দাবিদাওয়ার কথা তুলে ধরবেন, গ্রামেরই ঠিক করা কেউ এই নীতি নিয়েই এ বারে এগিয়েছেন তপনবাসী। তাঁদের সেই দাবিকে সমর্থন জানাতে কার্যত ‘বাধ্য’ হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিও। তৃণমূলের কালুহা অঞ্চল সহ-সভাপতি জেরবান আলি বলেন, “গ্রামবাসীদের কথা শুনেই তপনের একটি সংসদে আমাদের প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।” একই সংসদে কংগ্রেসের যিনি প্রার্থী হয়েছিলেন, সেই নাজেরা বিবি বলছেন, “সকলের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছি।” এ দিকে সিপিএমের রামপুরহাট ২ জোনাল সম্পাদক কালাম মোল্লারও দাবি, “ওখানকার নেতাদের অনুরোধেই এই প্রথম ওই দুই সংসদে আমরা কোনও প্রার্থী দিইনি।”
মোরশেদ আলি ও ফোকেন্নেশা বিবি জয়ের পর বলছেন, “গ্রামের রাস্তাঘাটের অবস্থা বেহাল। পানীয় জল নেই। কোনও রাজনৈতিক দলই এখানে উন্নয়ন করেনি। তাই গ্রামের মানুষ যখন আলোচনা করে আমাদের প্রার্থী হতে বললেন, না করতে পারলাম না।”
গোটা তপন এখন তাকিয়ে আছে তাঁদেরই দিকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.