‘বিশৃঙ্খল’ আচরণের প্রতিবাদ করায় এক যুবককে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। এর জেরে রবিবার অশান্ত হয়ে উঠল নানুরের পাকুড়হাস গ্রাম। বেশ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের সঙ্গে নামাতে হয়েছে র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স। এসডিপিও (বোলপুর) প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, “ধর্মরাজ পুজোয় নাচাকে কেন্দ্র করে ওই ঘটনা ঘটেছে। দু’টি ঘটনায় জড়িত সন্দেহ ৩০ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”
|
নিহত দেবাশিস কোনাই। |
রবিবার গ্রামের ধর্মরাজ পুজোয় ‘ভাঁড়াল খেলা’ (বিভিন্ন ধরনের নাচ)-কে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন তিনেক আগে পাকুড়হাস গ্রামের পালপাড়ায় ধর্মরাজ পুজো শুরু হয়। রীতি মেনে অন্য বছরের মতো এ বারও ওই ভাঁড়াল খেলা-সহ রবিবার দুপুর থেকে গ্রাম ঘোরা শুরু করেন ভক্তেরা। কোনাই পাড়ায় পৌঁছলে চিত্রকর পাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে বিরোধ বাধে। ভক্তদের একাংশের অভিযোগ, “চিত্রকর পাড়ার লোকেরা মদ্যপ অবস্থায় বিশৃঙ্খল আচরণ করে। প্রতিবাদ করায় নাচের দল চিত্রকর পাড়ায় পৌঁছতেই চড়াও হয় ওই পাড়ার লোকেরা। দেবাশিস কোনাই, লালমোহন হাজরা, টোটন কোনাইয়ের উপরে চড়াও হয় তারা। লালমোহন ও টোটন সেখানে পালাতে সক্ষম হলেও ফেঁসে যায় দেবাশিস। তাকে লাঠি, রড ও কাটারি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারা হয়।” বর্ধমানে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় ২৫ বছরের যুবক দেবাশিসের। |
তখনও জ্বলছে বাড়ি। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি। |
মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছতেই ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একাংশ ওই দিন রাত ৭টা নাগাদ চিত্রকর পাড়ায় সাতটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। ধ্যাঁড়া পিটিয়ে সোমবার ফের গ্রামবাসীদের জড়ো করা হয় দেবাশিসের বাড়ির কাছে। তার পরে চিত্রকরপাড়া ও লাগোয়া মালপাড়ায় আরও ৩০টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। আগুন নেভাতে বোলপুর থেকে আসে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন। এসডিপিও প্রশান্ত চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ, র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স নামানো হয় গ্রামে। এ দিন, নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, কথা বলার মতো অবস্থায় নেই মা, স্ত্রী। মৃত দেবাশিসের সঙ্গী লালমোহন ও টোটনের অভিযোগ, “শুধু এ বারই নয়, গ্রামের প্রায় প্রতিটি পুজোতেই চিত্রকরপাড়ার লোকেরা মদ খেয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তার প্রতিবাদ করতেই ওরা এমন কাণ্ড করল।”
অন্য দিকে, পালপাড়া ও চিত্রকরপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, সোমবার আগুন লাগানো বাড়িগুলি জ্বলছে। রবিবারের ঘটনায় পোড়া বাড়িগুলি থেকে তখনও ধোঁয়া উঠছে। দমকলকর্মীরা আগুন নেভাতে ব্যস্ত। দু’টি পাড়া কার্যত পুরুষ শূন্য। যাঁরা আছেন তাঁরাও নিজেদের বহিরাহত বলে দাবি করে চলে যাচ্ছেন। তবে বিজয় চিত্রকরের কথায়, “কী থেকে কী হয়ে গেল জানি না। ওই দিন আমিও পথ-পরিক্রমায় যোগ দিয়েছিলাম। ফিরে দেখি আমার দাদার বাড়ি জ্বলছে!” ধর্মরাজ পুজোর প্রধান সেবাইত শ্যামল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুজো ঘিরে এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতে পারিনি। জানি না এর পরের বছর কী হবে!” |