পঞ্চায়েত ভোট আসছে। অথচ পথ ডুবেছে জলে।
নতুন কিছু নয়। প্রতি বার সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তা ডোবে। দুর্গম হয়ে যায় চেনা এলাকা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই জল-কাদাই প্রশাসনের বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে গোটা কালনা মহকুমায়।
জমা জল আর প্যাচপ্যাচে কাদা ডিঙিয়ে কত জন মানুষ বুথে আসবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের। নিরাপত্তারক্ষী এবং ভোটকর্মীরা কী ভাবে বুথে পৌঁছবেন, তা নিয়েও চিন্তায় রয়েছে প্রশাসন। কালনার মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠি বলেন, ‘‘পাঁচ ব্লকের কোন বুথে কী সমস্যা রয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিডিও-দের তা দেখতে বলা হয়েছে।”
কালনা মহকুমায় ভাগীরথী, খড়ি, গুরজোয়ানি, বাঁকা, বেহুলার মতো কিছু নদীতে বছরের পর বছর পলি জমে জলধারণ ক্ষমতা কমে গিয়েছে। একটু বৃষ্টিতেই নদীর জল উপচে আশপাশের গ্রামে ঢুকতে পড়ছে। যেমন, পূর্বস্থলী ২ ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সাতটির বহু গ্রামই নিচু এলাকায়। টানা বৃষ্টিতে নাকাদহ, হরিশপুর, হাটসিউড়ি, সাতপোতা, হালদিপাড়া, ঘুনি, লহনা, তামাঘাটা, কোমলনগরের মতো কিছু গ্রামে জল জমে যায়। মাজিদা গ্রামের রতন দেবনাথের কথায়, “তখন স্কুল-কলেজ, বাজারে যেতেই প্রাণান্ত। বেশি বৃষ্টি হলে কত জন বুথে ভোট দিতে যাবেন, সন্দেহ আছে।” |
ওই ব্লকের ঝাউডাঙা পঞ্চায়েতের অবস্থা আরও খারাপ। ভাগীরথীর পাড় থেকে দেড় কিলোমিটার গেলে ওই এলাকা। ভারী বৃষ্টির পরে ঝাউডাঙা, কাশীপুর, রুদ্রডাঙা, হালতেচরা এবং গঙ্গাপুরের পাঁচ বুথে যাওয়া রীতিমতো কঠিন। নদী পেরিয়ে মেড়তলা পঞ্চায়েতের দেবনগর চর, পাটুলি পঞ্চায়েতের পাখির চর এলাকাগুলিতে ঢোকা-বেরোনোও দুষ্কর। পূর্বস্থলীর তৃণমূল নেতা তাপস দে-র আশঙ্কা, “ভোটের সময়ে দুর্যোগময় পরিস্থিতি চলতে থাকলে ব্লকের বহু গ্রামে যেতে গিয়ে ভোটকর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের নাজেহাল হতে হবে। বহু মানুষের ভোট দিতে আসার ব্যাপারেও উৎসাহ থাকবে না।”
ভাগীরথী পেরিয়ে ঢুকতে হয় কালনা ১ ব্লকের কালীনগর, নতুনচর, ঘুঘুডাঙার মত এলাকাগুলিতেও। কালীনগরের বুথে যেতে নদীর পাড় থেকে কিলোমিটার খানেক কাদা ভর্তি রাস্তা ভাঙতে হয়। নান্দাই পঞ্চায়েতের ঘুঘুডাঙা গ্রামে যেতে হয় গুরজোয়ানি নদীর বাঁশের সেতু পেরিয়ে। বেশি বৃষ্টির সময়ে মাঝে-মধ্যে তা ভেঙেও যায়। নান্দাই পঞ্চায়েতের প্রধান ঈদের আলি মোল্লা বলেন, “তেমন বৃষ্টি হলে ঘুঘুডাঙা গ্রামে ঠিক মতো ভোট করানো অসম্ভব। যে কোনও সময়ে ওই এলাকা প্লাবিত হতে পারে।”
পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বগপুর ও নাদনঘাট পঞ্চায়েতে রাস্তায় আবার এঁটেল মাটির চিটচিটে কাদা। বগপুরের বাসিন্দা আকবর শেখের মতে, “ভোটের দিন টানা বৃষ্টি হলে বেশির ভাগ মানুষেরই বুথে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহা থাকবে।” ওই ব্লকের শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতেরও দশা এক। কালনা ২ ব্লকের পিণ্ডিরা পঞ্চায়েত এবং মন্তেশ্বর ব্লকের জামনা পঞ্চায়েতেও জলকাদায় ভোট পণ্ড হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কালনা মহকুমা কৃষি খামার সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও তেমন ভারী বৃষ্টি না হলেও মহকুমার পাঁচটি ব্লকে প্রায় প্রতি দিনই হচ্ছে বৃষ্টি। দফতরের এক কর্তার কথায়, “এখন যে ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে হয়তো দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু ভোটের সময়ে টানা বৃষ্টি চলতে থাকলে বহু জায়গাতেই ভোট প্রক্রিয়া ঠিকঠাক হওয়া শক্ত। আশা করি, প্রশাসন যা করার করবে।”
|