ভুট ভুট ভুট... মিছিল চলেছে
সামনে পুলিশের গাড়ি। শেষেও তাই। মাঝে প্রায় আটশো মোটরবাইক।
তৃণমূলের ‘মোটরবাইক বাহিনী’ সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে বারবার অভিযোগ তুলছেন সিপিএম নেতারা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অভিযোগ করেছেন, নানা অর্থলগ্নি সংস্থার মাধ্যমে মানুষের টাকা লুঠ করে এই বাহিনী নামিয়েছে তৃণমূল। রবিবার বর্ধমানে সিপিএমের জনসভায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও প্রশ্ন তোলেন, “চারদিকে মোটরবাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এরা কারা? কে এদের টাকা, তেল, খাওয়াদাওয়া দিচ্ছে?” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টা কাটার আগে বর্ধমান জেলাতেই দেখা গেল তৃণমূলের এমন মিছিল। সকালে কেতুগ্রামে শুরু হওয়া এই মিছিল বিকেলে যখন কাটোয়ায় গিয়ে শেষ হয়, ততক্ষণে অবশ্য মিছিল ছেড়ে গিয়েছে অধিকাংশ মোটরবাইক।
সিপিএম রোজই নালিশ করে, তৃণমূলের ‘বাইকবাহিনী’ নানা তল্লাটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
সোমবার সকালে কেতুগ্রাম থেকে বেরোল প্রায় ৮০০ মোটরবাইক। তবে হানাদার ‘বাহিনী’ নয়, ‘মিছিল’।
সামনে-পিছনে পুলিশের গাড়ি। তৃণমূল জানিয়েছে, শান্তিতেই সব মিটেছে। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেতুগ্রাম ১ ও ২ ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েত ও কাটোয়া ১ ব্লকের দু’টি পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত কেতুগ্রাম বিধানসভা। কেতুগ্রাম ১ ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যে এ বার বেরুগ্রাম ও আনখোনা বাদ দিয়ে কোনওটিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। কেতুগ্রাম ২ ব্লকে ও কাটোয়ার দু’টি পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ আসনেই লড়াই হবে ত্রিমুখী। কেতুগ্রাম ২-এ নিরোল ও কেতুগ্রাম রয়েছে কংগ্রেসের এবং সীতাহাটি ও মৌগ্রাম তৃণমূলের দখলে রয়েছে। বাকি তিনটি পঞ্চায়েত নবগ্রাম, গঙ্গাটিকুরি ও বিল্লেশ্বর রয়েছে সিপিএমের হাতে। কাটোয়ার শ্রীখণ্ড ও কোশিগ্রাম, দু’টি পঞ্চায়েতেই ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস।
বিরোধীদের অভিযোগ, কেতুগ্রাম ১-এর দু’টি পঞ্চায়েত-সহ বিধানসভা এলাকার বাকি পঞ্চায়েতগুলিতে মানুষকে ভয় দেখাতেই মোটরবাইক মিছিল করেছে তৃণমূল। সোমবার সকাল ৯টা নাগাদ নানুর লাগোয়া কেতুগ্রামের ফুটিসাঁকো মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়। সেটি কেতুগ্রাম, চেঁচুড়ি, আমগোড়িয়া, কোমরপুর হয়ে দুপুরে পাঁচুন্দি পৌঁছয়। ততক্ষণে মিছিলে মোটরবাইকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে তিনশোটি। পাঁচুন্দি থেকে গঙ্গাটিকুরি, সীতাহাটি হয়ে শিবলুন দিয়ে ভুলকুড়ি মোড়ে পৌঁছয় মিছিলটি। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা ধরে যায় রসুই গ্রামে। তার পরে অজয়ের বাঁধ ধরে বিল্লেশ্বর গ্রামের ভিতরে চড়খি মোড়ে। কাশীরামদাস সেতু পেরিয়ে কোশিগ্রামের চুড়পুনির মধ্যে দিয়ে শ্রীখণ্ড গ্রামে যায় মিছিলটি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মিছিলের সঙ্গে থাকা এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “আটশো মোটরবাইক নিয়ে মিছিল শুরু হয়েছিল। যখন শেষ হয় তখন তাতে মোটরবাইকে সংখ্যা দাঁড়ায় পঞ্চাশটি।”
ভোটের প্রচার চলছে। কেতুগ্রামের পাচুন্দি গ্রামে। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
বেশ কয়েক মাস আগে চড়খিতে সিপিএমের অফিসে ভাঙচুর হয়। অভিযোগের আঙুল উঠেছিল তৃণমূলের দিকে। এ দিন যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য কেতুগ্রাম ও কাটোয়ার নানা মোড়ে পুলিশি প্রহরা ছিল। মিছিলের শেষে পুলিশের গাড়িতে ছিলেন কাটোয়ার সার্কেল ইনস্পেক্টর শচীন্দ্রনাথ পড়িয়া। কাশীরাম দাস সেতুতে কেতুগ্রামের আইসি আব্দুল গফ্ফর ও কাটোয়ার ওসি সনৎ দাস বাহিনী নিয়ে হাজির ছিলেন।
তবে মিছিলের অনুমতি ছিল কি না, সে নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। কাটোয়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট (ইলেকশন ওসি) সুরেশ রানো জানান, মিছিলের অনুমতি পুলিশ দেবে বলে নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, “মিছিলের অনুমতি দিয়েছেন বিডিও।” যে সব এলাকা দিয়ে মিছিল গিয়েছে সেগুলি কেতুগ্রাম ১ ও ২ এবং কাটোয়া ১ ব্লকের মধ্যে পড়ে। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কেতুগ্রামের দুই ব্লক প্রশাসন মিছিলের অনুমতি দেয়নি। যদিও মিছিলের নেতৃত্বে থাকা তৃণমূল নেতা জাহের শেখের দাবি, “প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই মিছিল করেছি।”
নির্বাচনী জনসভা করতে বর্ধমানের চুরুলিয়ায় গিয়ে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করলেন, “আমরা ভোট চাই।
যাঁরা তা চান না, তাঁরাই কোর্টে যাচ্ছেন।” কামদুনি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী মেয়েটির বাড়িতে গিয়েছিলেন।
অভিযুক্তদের শাস্তির ব্যবস্থাও করেছেন। তার পরেও মিছিলের উদ্দেশ্য কী?” ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল সদস্য প্রবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এ ধরনের মিছিল আগে দেখিনি। শান্ত এলাকায় আচমকা এমন মিছিল মানুষের উদ্বেগ বাড়াবে।” প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ভোটের আগে ভীতি সঞ্চারের জন্যই তৃণমূলের এই মিছিল। প্রশাসন এই মিছিলের অনুমতি দিয়েছে কি না, তা-ও জানা দরকার।” কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের অবশ্য দাবি, “উদ্বেগ, ভীতিএ সব অমূলক ভাবনা। স্রেফ ভোটের প্রচারের জন্য মোটরবাইক মিছিল করা হয়। নানা প্ররোচনা সত্ত্বেও আমাদের কর্মীরা শান্ত ভাবেই মিছিল শেষ করেছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.