সেচ ব্যবস্থা ও মাছ চাষে উন্নতির জন্য বছর দেড়েক আগে দু’টি বাঁধ বা চেকড্যাম্প তৈরি হয়েছিল সালানপুরে। কিন্তু কারিগরি দক্ষতার অভাবে দু’টি প্রকল্পই মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। এলাকাবীসারা জানান, ৩২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি বাঁধ দু’টি কোনও উপকার তো লাগেইনি উপরন্তু ভরা বর্ষায় বাঁধের দুকূল ছাপিয়ে জলমগ্ন হচ্ছে এলাকা। ভেসে যাচ্ছে ঘরদুয়ার। তাঁদের দাবি, আবার সঠিক পদ্ধতিতে বানানো হোক বাঁধ দু’টি।
সালানপুরে ব্লকের আছড়া পঞ্চায়েতের জোড়বাড়ি এলাকার এই খালটিতে বছরভরই জল থাকে। বর্ষায় খালটি একটি নদীর আকার ধারণ করে। আশপাশের জোরবাড়ি, নয়াবস্তি, অরবিন্দনগর, কুণ্ডনপাড়া এলাকার প্রায় শতাধিক বাসিন্দারা এই জলেই ধান, গম, মরসুমি সব্জি চাষ করেন। পঞ্চায়েত সমিতির কাছে বাসিন্দারা আবেদন করেন, একটি বাঁধ নির্মাণ করে বর্ষায় স্ফীত হয়ে যাওয়া খালের জল সংরক্ষণ করা হোক। তাহলে সারা বছরই পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা হবে। একইসঙ্গে এই বাঁধের জলে মৎস্যজীবীরা মাছ চাষও করতে পারবেন। একই আবেদন জানিয়েছিলেন বাসুদেবপুর-জেমারি পঞ্চায়েতের আমঝড়িয়া অঞ্চলের বাসিন্দারাও। আমঝড়িয়ার শ্মশান লাগোয়া এলাকায় একটি খালে বাঁধ বা চেকড্যাম্প নির্মাণের আর্জি জানান তাঁরা। তাঁদের দাবি, এলাকার একাধিক কৃষক পরিবার এই খালের জলে নিয়মিত ধান ও সব্জি চাষ করেন। ফলে বাঁধ তৈরি হলে জল সংরক্ষণ করে সারা বছর চাষের জল মিলবে।
|
রূপনারায়ণপুরের জোড় বাঁধ প্রকল্পের বেহাল দশা। ছবি: শৈলেন সরকার। |
এলাকাবাসীদের আবেদনে সাড়া দিয়ে সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির তরফে ২০১২ সালের গোড়ার দিকে ওই দুই এলাকাতেই বাঁধ নির্মাণ করা হয়। দু’টি প্রকল্পে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা খরচও হয়। নির্মাণের সময় বাঁধ দুটিতে কোনও ত্রুটি ধরা না পড়লেও বর্ষা আসতেই খামতিগুলো দেখা দেয়। গত বর্ষায় জলের তোড় সামাল দিতে না পারায় দুই এলাকাতেই খালের দু’পাড় ভেঙে যায়। কূল ছাপিয়ে জলমগ্ন হয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা। জল ঢুকে যায় বাসিন্দাদের ঘরেও। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, বাঁধ তৈরি করে লাভ তো হলই না, বরং জলে বাড়িঘর ভেসে গেল। কিন্তু নতুন বাঁধের এই দশা কেন? পঞ্চায়েতের বাস্তুকারেরা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে বুঝেছেন, কারিগরি দক্ষতার অভাবেই এই অবস্থা। তাঁরা জানিয়েছেন, বাঁধ সংলগ্ন খালের দুই প্রান্তে বেশকিছুটা অংশের পাড় বড়বড় বোল্ডার দিয়ে উঁচু করে বাঁধিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। তা না করে শুধু আলগা মাটি দিয়ে পাড় উঁচু করায় জলের তোড়ে তা ভেঙে গিয়েছে।
ফলে প্রশ্ন উঠেছে, বাঁধ নির্মাণের আগে আরও ভাল করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা বা অভিজ্ঞ বাস্তুকার দিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়নি কেন? তাহলে হয়তো এই কারিগরি ত্রুটি এড়ানো সম্ভব হত। প্রচুর সরকারি অর্থও জলে পড়ত না। এলাকার বাসিন্দা তথা সিপিএমের কৃষক নেতা নুরুল ইসলাম ও তৃণমূলের ব্লক নেতা পাপ্পু উপাধ্যায় উভয়েই অবশ্য পঞ্চায়েত সমিতির স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের কথায়, “পছন্দের ঠিকাদারকে আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দিতেই তড়িঘড়ি এই কাজটি করিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতি কর্তৃপক্ষ।” যদিও বিরোধী দলগুলির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কংগ্রেসের শ্যামল মজুমদার। তিনি বলেন, “কিছু কারিগরি ত্রুটি হয়েছে। তবে জোরবাড়ি এলাকার বাঁধটি আরও নীচের দিকে নির্মিত হলে এই সমস্যা দেখা দিত না।” তাঁর অভিযোগ, “এলাকার বাসিন্দাদের বাধাতেই তা বানানো যায়নি।” তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, এ বার ক্ষমতায় আসলে তাঁরা এই দুটি প্রকল্পের খোলনলচে বদলে সেগুলি সফল করে তুলবেন। |