মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্র থেকে মুকুল রায়, রবিবার রাজ্য জুড়ে তুঙ্গে প্রচার। কিন্তু আগামী ২ জুলাই থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে কি না, সেই অনিশ্চয়তা এখনও থেকেই গিয়েছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং মুকুল রায়ের বক্তব্যেও অনিশ্চয়তার কথা ধরা পড়েছে।
সকলের নজর তাই এখন কলকাতা হাইকোর্টের দিকে। আজ, সোমবার হাইকোর্ট কী বলে, তার উপরেই নির্ভর করছে পঞ্চায়েত ভোটের ভবিষ্যৎ।
সোমবার প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দায়ের করা মামলাটির শুনানি রয়েছে। ওই শুনানির সময়েই পরিষ্কার হয়ে যাবে, কেন্দ্রীয় সরকার বাহিনী দিতে পারবে কি না, কিংবা রাজ্য সরকার কী ভাবে কমিশনের চাহিদামাফিক সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবস্থা করবে। কেন্দ্র এবং রাজ্য দু’পক্ষই তাদের অবস্থান জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চকে লিখিত রিপোর্ট দিয়েছে। তা নিয়ে সোমবার শুনানি হবে হাইকোর্টে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন এ দিন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, হাইকোর্ট যে বাহিনী দেওয়ার কথা বলেছে, তা তাদের চাই। না হলে প্রথম দফার পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, আজ বাহিনী নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে কি কমিশন নির্দিষ্ট দিনে ভোট করবে?
কমিশন সূত্রে রবিবার বলা হয়, ২ জুলাই প্রথম দফায় ন’টি জেলায় ভোট হওয়ার কথা। সেখানে পুলিশি ব্যবস্থা কী হবে, তা অন্তত ১৫ দিন আগেই চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। তা হয়নি। সোমবার যদি চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়ও, তাতেও হাতে থাকছে মোটে সাত দিন। পর্যাপ্ত বাহিনী পেলেও, এত কম সময়ের মধ্যে পুলিশি ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা সম্ভব নয় বলেই মনে করে কমিশন। এই পরিস্থিতিতে প্রথম দফার ভোট পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবও উঠেছে কমিশনের মধ্য থেকে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে অবশ্য বলেছেন, “আমরা এখনই এই বিষয়ে কিছুই বলছি না। গোটা বিষয়টি নির্ভর করছে আদালত কী বলে তার উপরে।”
বাহিনী আদৌ মিলবে কি না, তা নিয়েও সংশয় বিস্তর। মহাকরণ সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত বাহিনী নিয়ে দিল্লি কোনও সবুজ সঙ্কেত দেয়নি। যে সব রাজ্যের কাছে পশ্চিমবঙ্গ বাহিনী চেয়েছিল, তারাও সম্মতির চিঠি পাঠায়নি। রাজ্য তাদের রিপোর্টে ডিভিশন বেঞ্চকে এই কথাই জানিয়েছে। তারা কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে দ্বিতীয় যে চিঠিটি লিখেছে দিল্লিকে, রিপোর্টের সঙ্গে তা-ও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। উল্টো দিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, তারা যে এই মুহূর্তে বাহিনী দিতে পারবে না, তা তারা হাইকোর্টকে জানাবে। এমতাবস্থায় কী ভাবে পঞ্চায়েত ভোট করা সম্ভব, সেটাই হাইকোর্টের কাছে জানতে চাইবে কমিশন।
এর পাশাপাশি আগামিকাল, মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলিকে এক বৈঠকে ডেকেছেন মীরা পাণ্ডে। পঞ্চায়েত ভোট করতে গিয়ে তারা কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, বৈঠকে সেই কথাই জানাবে কমিশন। নির্বাচন নিয়ে নিজেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হাইকোর্টকে জানানোর আগে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সব দলের মত যাচাই করে নিতে চাইছেন বলে কমিশন সূত্রে খবর।
রবিবারে অবশ্য কমিশন জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন ছাড়া ভোটের অন্য সব প্রশাসনিক প্রস্তুতি তারা সেরে রেখেছে। কিন্তু মনোনয়ন থেকে প্রচার পর্বে যে হারে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটছে, তাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভোটারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার উপরেই সার্বাধিক জোর দিচ্ছে কমিশন। তাই সশস্ত্র বাহিনীর প্রশ্নে কোনও আপস করতে চায় না তারা। তাই কমিশন স্পষ্ট করে দিয়েছে, প্রথম দফার যে ন’টি জেলায় ভোট হবে, তার জন্য ১ লক্ষ ৪৯ হাজার পুলিশ না পেলে তাদের পক্ষে অবাধ নির্বাচন করানো সম্ভব নয়।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে যে অনিশ্চয়তা রয়েই গিয়েছে, তা এ দিন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং মুকুল রায়, দু’জনের বক্তৃতাতেও ধরা পড়েছে। বর্ধমানে বুদ্ধদেববাবুর মন্তব্য, “নির্বাচন হবে কি না জানি না। কমিশনও জানে না। তারা তো সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে।” মুকুলবাবু অবশ্য পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে এখনও আশাবাদী। তবে ভোটে ভেস্তে গেলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী তৃণমূল প্রার্থীরা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন বলে রবিবার ইঙ্গিত দিলেন ওই তৃণমূল নেতা। তাঁর কথায়, “দেড় লক্ষ মানুষ প্রার্থী হয়েছেন। প্রচার, নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এ অবস্থায় ভোট না হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা প্রার্থীরা আদালতে যেতে পারেন।”
শেষ পর্যন্ত ভোট ২ জুলাই শুরু না হলে তার দায় রাজ্য সরকারকেই নিতে হবে বলে দাবি করেছে সিপিএম। এই প্রসঙ্গে বর্ধমানের জনসভায় তৃণমূল নেত্রীর নাম না-করেই বুদ্ধবাবুর কটাক্ষ, “নির্বাচনের ব্যাপারে শেষ কথা বলবেন একমাত্র তিনি! তিনি-ই ঠিক করবেন ভোট হবে কী হবে না! জ্যোতিবাবুর আমলে পাঁচ বার, আমার সময়ে দু’বার পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। কোনও দিনই এমন পরিস্থিতি হয়নি!” সিপিএম নেতা রবীন দেবেরও বক্তব্য, “আদালতে জল গড়ানোয় এমনিতেই নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে। যদি সোমবারের পরে দেখা যায়, ভোট হতে আরও দেরি হবে, তা হলে তার দায় রাজ্য সরকারেরই।” |