ভোট নিয়ে যতই অনিশ্চয়তা থাকুক, প্রচারে মন দিয়েছে দুই প্রধান যুযুধান দলই। এবং তৃণমূল ও সিপিএমের মঞ্চ থেকে পরস্পরকে লাগাতার দোষারোপও অব্যাহত। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পূর্বসূরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও সেই লড়াই জারি রাখলেন। একই সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, মেরেধরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়ে যেখানে পঞ্চায়েত জিতে নিয়েছে শাসকদল, সে সব জায়গায় নতুন করে নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু করার দাবিতে বামেরা আন্দোলনে নামবে।
নির্বাচনী প্রচারে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয়। বুদ্ধবাবু বর্ধমানে। মিনাখাঁর বামনপুকুর কলেজ মাঠে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, “আমরা চাইছি পঞ্চায়েত নির্বাচন হোক। এক বার জেলা পরিষদে আমাদের ভোট দিয়ে দেখুন। তা হলে দেখবেন! দু’বছরে অনেক কাজ হয়েছে। বাকি তিন বছরে আরও কাজ হবে। বাংলা চিকচিক করবে!” |
মিনাখাঁয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: নির্মল বসু। |
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অবশ্য মনে করছেন, তৃণমূলের হাতে পড়ে গোটা রাজ্যেরই সর্বনাশ হচ্ছে! বর্ধমানের উৎসব ময়দানের সভা-মঞ্চ থেকে পঞ্চায়েত ভোট
নিয়ে অনিশ্চয়তার জন্য বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন প্রাক্তন। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল মেরেধরে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের দখল নিতে চাইছে। পরে সগর্বে দাবি করবে, তারাই পঞ্চায়েত ভোটে জিতেছে! বুদ্ধবাবুর কথায়, “আমাদের কাছে এই নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। তাই আমরা ময়দান ছাড়িনি। ঠিক মতো নির্বাচন হলে এই বধর্মানে তো বটেই, গোটা রাজ্যে এখনও আমরাই জিতব!” বামেদের এক সময়ের শক্ত ঘাঁটি বর্ধমানে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় এক হাজার এবং পঞ্চায়েত সমিতির প্রায় দেড়শো আসনে বামফ্রন্ট প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি বলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ।
এই পরিস্থিতির সূত্র ধরেই বুদ্ধবাবু বলেছেন, “আমরা এই মনোনয়নপত্র জমা না-দিতে পারা নিয়ে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে নামব। দাবি করা হবে,
যে সব জায়গায় মনোনয়ন জমা
দিতে পারা সম্ভব হয়নি, সেখানে
নতুন করে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা হোক।” পাশাপাশি, দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে প্রতিরোধ গড়ে তোলারও ডাক দিয়েছেন সিপিএমের এই পলিটব্যুরো সদস্য। ডাক
দিয়েছেন এমন জেলা থেকে, যেখানে গত বিধানসভা নির্বাচনের পরে সিপিএমের কর্মী-সমর্থক খুন হয়েছেন বেশি এবং যেখানে তা সত্ত্বেও তৃণমূলের সঙ্গে এখনও সমানে টক্কর দিয়ে চলেছে সিপিএম। |
বর্ধমানের উৎসব ময়দানে সিপিএমের সভায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: উদিত সিংহ। |
পক্ষান্তরে, মমতা এ দিন বলেছেন, “সিপিএম নির্বাচন বন্ধের গান করছে! এখানে জেলা পরিষদে থেকে ওরা কোনও কাজ করেনি। আমি ঠিক করেছি, জেলা পরিষদে প্রশিক্ষণ দেব। যাতে কেউ আর্থিক দুর্নীতি করতে না পারে। প্রয়োজনে পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।” তিনি ফের বলেছেন, “আমি ভোট চেয়েছিলাম শীত কালে। কিন্তু মাননীয় আদালত এবং নির্বাচন কমিশন এই বর্ষায় ভোট করেছে। ঝড়বৃষ্টি, বন্যা যাই হোক না কেন, ভোট দিতে যাবেন। অনেকে বলছে, আমরা নাকি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেক জায়গায় জিতে গিয়েছি। সিপিএম কী ভুলে গিয়েছে চমকাইতলা, শাসন, রাজারহাট, হাড়োয়া, মিনাখাঁর মতো জায়গায় তো ওরা ভোট করতেই দিত না! রাজ্যে এখন আইনশৃঙ্খলা সব চেয়ে ভাল।”
এই আইনশৃঙ্খলা নিয়েই আবার প্রশ্ন বুদ্ধবাবুর। বলেছেন, “বর্ধমানে প্রদীপ তা, বার্নপুরে দিলীপ সরকারের মতো আমাদের মোট ১৭ জন নেতা-কর্মী খুন হয়েছে এই জেলায়।” গত বিধানসভা ভোটের পরে এই প্রথম বর্ধমানে এলেন তিনি। বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, “আমাদের চাই আরও, আরও মানুষ। আরও বড় সভা, আরও বড় সমাবেশ করতে হবে। তা হলেই ওরা (তৃণমূল) বুঝতে পারবে, আমাদের বেশি দিন ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।” কর্মীদের প্রতি তাঁর বার্তা, “প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি পাড়া, প্রতিটি বাড়িতে যান। এই সর্বনাশের কথা মানুষকে বোঝান!”
প্রচণ্ড রোদের মধ্যে বর্ধমান শহর ও আশপাশের এলাকার মানুষ এ দিন বুদ্ধবাবুর বক্তৃতা শুনতে এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর মিনিট কুড়ির বক্তৃতার মাঝপথেই সভা ছড়ে চলে যেতে শুরু করেন অনেকে। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের দাবি, “সভায় অন্তত কুড়ি হাজার মানুষ যোগ দিয়েছেন।” জেলা পুলিশ অবশ্য বলছে, ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি লোক হয়নি। উল্টো দিকে, মিনাখাঁর বামুনপুকুর কলেজ মাঠে মমতার সভায় অন্তত ৫০ হাজার লোকের ভিড় হয়েছিল। মমতা এসে পৌঁছন
সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ। বৃষ্টি না-হলে ভিড় আরও জমত, দাবি করছেন এলাকার তৃণমূল নেতারা। |