বেকার ভাতা ঘিরে বহু প্রশ্ন
অমিতের দেড় হাজারি নিয়ে দিশাহারা দশা
মাসে দেড় হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা ওঁদের। মিলবে কবে, সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন!
গত মার্চে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ঘোষণা করেছিলেন, এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম লেখানো প্রথম এক লক্ষ বেকারকে ‘উৎসাহ ভাতা’ হিসেবে ওই টাকা দেবে রাজ্য সরকার। শুনে নাম তোলার ধুম পড়ে গিয়েছিল বেকারদের মধ্যে। শ্রম দফতরের হিসেবে, ১৯ জুন পর্যন্ত নয় নয় করে ৫ লক্ষ ৮২ হাজার ছেলেমেয়ে এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম লিখিয়েছেন।
কিন্তু ঘটনা হল, অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা রূপায়ণের পথে এক কদমও এগোতে পারেনি শ্রম দফতর। বেকারেরা ভাতাও পাননি। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর বক্তব্য, “ভাতা আমরা বিলি করব ঠিকই। তবে আগে তার রূপরেখা তৈরি করবে অর্থ দফতর।” সেই মতো অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যে শ্রম দফতর ‘নোট’ তৈরি করে অর্থকে পাঠিয়ে দিয়েছে। যা এখনও অর্থ দফতরে ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে বলে প্রশাসন-সূত্রের খবর।
অর্থাৎ উৎসাহ-ভাতা কার্যত বিশ বাঁও জলে। মহাকরণের কর্তারা নিশ্চিত বলতে পারছেন না, কবে থেকে বেকারেরা টাকা হাতে পাবেন। কেন এই অচলাবস্থা? এক অর্থ-আধিকারিকের ব্যাখ্যা, “সাধারণত প্রকল্প ঘোষণার আগে তা রূপায়ণের খসড়া পরিকল্পনা তৈরি হয়। সেই পথে প্রথমে প্রকল্পের আর্থিক দিকটা খতিয়ে দেখা জরুরি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উল্টোটা হয়েছে। প্রকল্প ঘোষণার পরে খোঁজা হচ্ছে তার রূপায়ণের পথ!”
বস্তুত এই মুহূর্তে প্রকল্পের ‘রূপরেখা’ তৈরি করতে গিয়েই গুচ্ছের প্রশ্নের মুখে প্রায় খাবি খাচ্ছে অর্থ দফতর। যেমন, যাঁরা প্রথম বার উৎসাহ ভাতা পাবেন, তাঁরাই কি বছরের পর বছর তা পেয়ে যাবেন? নাকি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অন্যদেরও সুযোগ দেওয়া হবে? যদি প্রথমটাই হয়, তা হলে টানা কত বছর এক জন ভাতা পাবেন? সেখানে কি দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে? আর্থিক মাপকাঠিতে তো সবাই বেকার, তা হলে কি আবেদনকারীর সম্মিলিত পারিবারিক আয়ও খতিয়ে দেখা হবে? এক লক্ষের বাইরেও যাঁদের নাম রয়েছে এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কের খাতায়, তাঁরাও কি ভাতা পাবেন?
অর্থ দফতরের এক কর্তা বলেন, “বামফ্রন্ট সরকার আশির দশকে পাঁচশো টাকার বেকার ভাতা চালু করেছিল। পরে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত বেকারের সংখ্যা হু-হু করে বাড়ছে দেখে ‘বেনোজল’ ঢোকার যুক্তিতে ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়।” সেটা ১৯৯৫ সাল। ভাতা বেড়ে তখন দাঁড়িয়েছে দেড় হাজার টাকায়। এ বার সেই জায়গা থেকেই শুরু করতে চাইছে মমতার সরকার। কিন্তু এখন সংশয়, নতুন প্রকল্পে আবেদনকারী মাত্রই যে বেকার, তা কী ভাবে যাচাই করা যাবে? “উপরন্তু কোনও আবেদনকারী সত্য গোপন করে আর্থিক সুবিধা ভোগ করলে কি কোনও শাস্তির বিধান থাকবে সরকারি নির্দেশিকায়? সে ক্ষেত্রে সরকার কি প্রতারণার মামলা দায়ের করবে?” প্রশ্ন অর্থ-অফিসারদের অনেকের।
এ সবের উত্তর খোঁজার পাশাপাশি কী ভাবে দীর্ঘ মেয়াদে প্রকল্পের অর্থের সংস্থান হবে, তা ভেবেও কুল-কিনারা পাচ্ছেন না আধিকারিকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এক লক্ষ বেকারকে দেড় হাজার টাকা করে দিতে মাসে দরকার ১৫ কোটি। বছরে ১৮০ কোটি। রাজকোষের দিন-আনি-দিন-খাই পরিস্থিতিতে কত দিন প্রকল্পটি চালু রাখা যাবে, তা নিয়ে ওঁরা সন্দিহান।
প্রসঙ্গত, চাকরির জন্য নাম নথিভুক্ত করতে রাজ্যে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ (কর্মসংস্থান কেন্দ্র) থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সরকার নতুন করে ‘এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক’ তৈরি করেছে, যার উদ্বোধন হয়েছে গত বছরের জুলাইয়ে। শ্রম দফতরের যুক্তি: কর্মসংস্থান কেন্দ্রগুলো যে পদ্ধতিতে চলছিল, তা নেহাতই সেকেলে। নিয়োগকর্তা এখন শুধু কর্মপ্রার্থীর নাম চান না, প্রার্থী বাছইয়েরও সুযোগ চান। সরকারের দাবি: এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক এমন একটি ওয়েব-নির্ভর মঞ্চ, যা কর্মপ্রার্থী, নিয়োগকর্তা এবং উভয়ের মধ্যে যোগাযোগকারী সংস্থাকে (প্লেসমেন্ট এজেন্সি) এক সূত্রে গাঁথবে। সেখানে যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতকের নাম পাওয়া যাবে, তেমন বিদ্যুৎ বা কাঠের মিস্ত্রি, এমনকী আয়ার ঠিকুজি-কোষ্ঠীও মিলবে। প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীদেরও বিশদ তথ্য থাকবে। অমিত মিত্রের উৎসাহ-ভাতার টানে এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার এখন উপচে পড়ছে। ভাতা কবে আসে, সেটাই দেখার।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.