ভোটের পালে বেকার টানতে নয়া ভাতা
যুব উৎসাহ প্রকল্প। এ বারের রাজ্য বাজেটে বেকার ভাতা দেওয়ার নতুন প্রকল্প ঘোষণা করলেন অথর্মন্ত্রী অমিত মিত্র। ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সি এবং অষ্টম মান পাশ করা বেকাররা রাজ্য সরকারের এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম তোলালেই পাবেন মাসিক দেড় হাজার টাকা। তবে সকলেই নয়, রাজ্যের নথিভুক্ত এক কোটি বেকারের মধ্যে ১ লক্ষ জনকে বেছে নিয়ে এই প্রকল্প চলবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। এর ফলে সরকারের মাসে ১৫ কোটি অর্থাৎ বছরে ১৮০ কোটি টাকা খরচ হবে। যা দান-খয়রাতির তালিকায় নবতম সংযোজন।
এই বেকার ভাতা প্রাপকের সংখ্যা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই এক লক্ষ বেকার বাছাইয়ের মাপকাঠি কী, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অর্থমমন্ত্রী অবশ্য কোনও ব্যাখ্যাই দেননি। আরও একটি প্রশ্ন থাকছে। তা হল, যে এক লক্ষ বেকার এই ভাতা পাবেন, ধরা যাক তাঁদের একটা অংশ চাকরি পেয়ে গেলেন। প্রশ্ন উঠছে, তখন কি ভাতা প্রাপকের সংখ্যা এক লক্ষের কম হবে? সরকারের একটি সূত্রের বক্তব্য, ভাতা প্রাপকের সংখ্যাটা এক লক্ষই থাকবে। যাঁরা চাকরি পেয়ে যাবেন, তাঁদের নাম ভাতা প্রাপকের তালিকা থেকে বাদ গিয়ে সেখানে নতুন বেকারের নাম ঢুকবে। এ ভাবেই চলবে পুরো প্রক্রিয়া। সরকারের এক কর্তার সরস মন্তব্য, “এ পুরো ওয়াটার অফ ইন্ডিয়া!”
চলতি আর্থিক বছরেই খয়রাতির একগুচ্ছ প্রকল্প চালু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ইমাম-মোয়াজ্জিনদের ভাতা দেওয়ার যে নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে, তাতে সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। শিল্পী-গায়ক-গায়িকাদের নানাবিধ পুরস্কারে গলেছে কয়েক কোটি। বিধায়কদের সুপারিশ মেনে প্রায় ১৬০০ ক্লাবের জন্য সরকার পরিকল্পনা খাত থেকেই খরচ করেছে ৪০ কোটি টাকা। সম্প্রতি রাজ্যের সবক’টি ব্লকের অসংখ্য ক্লাবের ক্যারম বোর্ড, ক্রিকেট ব্যাট-সহ নানা ক্রীড়া সরঞ্জাম কেনার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া উৎসব অনুষ্ঠানের লাগামছাড়া খরচ তো রয়েইছে। তারই সূত্র ধরে পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে বেকারদের জন্য খয়রাতির নতুন প্রকল্প ঘোষণা করলেন অমিত মিত্র। এতেই স্পষ্ট, সরকারের আয় বাড়লেও স্থায়ী সম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর নেই মহাকরণের।

ভাতার হালখাতা
কাদের জন্য কত*
ইমাম ২৫০০
মোয়াজ্জিন ১৫০০
বেকার ১৫০০
আইনজীবী ১৫০০
নাট্য ব্যক্তিত্ব ৫০০০
গায়ক-গায়িকা ১০,০০০
*মাসিক পরিমাণ টাকায়
২০১২-১৩ সালের বাজেট প্রস্তাবে সরকার ১৬ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা মূলধন খাতে অর্থাৎ স্থায়ী সম্পদ তৈরিতে বরাদ্দ করেছিল। পরবর্তী কালে সংশোধিত ব্যয় বরাদ্দে সেই টাকার পরিমাণ কমিয়ে ১৫ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা করা হয়। কারণ, এই খাতের খরচ কমিয়েই করা হয়েছে দান-খয়রাতি! ২০১৩-১৪ সালের বাজেটে সরকার মূলধন খাতে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও অর্থ দফতরের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এ বারেও বছর শেষে বরাদ্দ কমবে।
সরকারি কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, চলতি আর্থিক বছরে পরিকল্পনা খাতে ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল। বাস্তবে খরচ হয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ! এ বারেও বাজেটে পরিকল্পনা খাতে ২৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু অর্থ দফতরের কর্তারাই বলছেন, এটা আসলে লোক দেখানো বরাদ্দ। শেষ পর্যন্ত অনেক দফতরই অর্ধেক টাকাও খরচ করতে পারবে না। স্থায়ী সম্পদ তৈরির প্রশ্নে সরকারের যখন এমন মনোভাব, তখন পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে চলতি আর্থিক বছরে যে টাকা ধরা হয়েছিল, তার থেকে অন্তত ৪০০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ সরকারের খরচের অভিমুখ দান-খয়রাতির দিকেই!
অর্থ দফতরের কর্তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, এ বারও বাজেটে যে সব প্রকল্প ঘোষণা হয়েছে, তাতে পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে খরচ আরও বাড়বে। ফলে সরকারকে এক দিকে যেমন নিজস্ব কর আদায়ের উপর জোর দিতে হবে, তেমনই বাজার থেকে নেওয়া ঋণের উপরও ভরসা বাড়াতে হবে। সেই কারণেই বাজার থেকে ২১ হাজার ২২৯ কোটি টাকা ধার নেওয়ার কথাও এ বারের বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে বলে দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন। এই পুরো অর্থ বাজার থেকে তোলা হলে রাজ্যের ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ২ লক্ষ ৪৭ হাজার কোটি টাকা।
সীমাহীন খরচের কারণেই ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রোজগারের পরেও সরকারের রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “সে তো হবেই! মুখ্যমন্ত্রীর যা মনে হচ্ছে, খয়রাতির ঘোষণা করে দিচ্ছেন। তার পর অর্থমন্ত্রীর কাজ হচ্ছে টাকা জোটানো। ফলে রাজস্ব ঘাটতি বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।” অর্থনীতিবিদদের অভিযোগও একই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.