উধাও নির্যাতিতার পরিবার
গ্রামে থাকার সাহস পাচ্ছেন না কৈজুড়ির মানুষ
গ্রাম ছাড়ছেন কৈজুড়ির বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার কৈজুড়ি গ্রামে গরু পাচারকারীদের এক মহিলাকে ধর্ষণ ও খুনের চেষ্টা ও অন্য এক মহিলাকে অপহরণের চেষ্টার পর কৈজুড়িকে আর নিরাপদ ভাবছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় সূত্রে খবর, গত দু’দিনে প্রায় দশটি পরিবার গ্রাম ছেড়েছেন।
শুক্রবার কৈজুড়ি গ্রাম পরিদর্শনে গিয়েছিল সিপিএমের এক প্রতিনিধি দল। কিন্তু নির্যাতিতা বা তাঁর পরিবারের সদস্যকারওই দেখা পাননি তাঁরা। সূত্রের খবর, গ্রাম ছেড়েছেন নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবার।
ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যাওয়া মানুষের দলে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা দিবাকর সরকার, খগেন গাইন, রমেশ মণ্ডলেরা। গ্রাম ছাড়লেন কেন? সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে দিবাকরবাবুর গলায় দলা পাকিয়ে আসে ভয়“কার ভরসায় কী ভাবে গ্রামে থাকব বলতে পারেন? সন্ধ্যা নামতেই এখানে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব শুরু হয়ে যায়। ফসলের খেতের উপর দিয়ে গরু নিয়ে যায় গরু পাচারকারীর দল। গোয়ালঘর থেকে গরু চুরি তো সামান্য ঘটনা, এখন ধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে।” গ্রাম ছাড়া রমেশবাবুর কথায়, “পরিবারের শিশু, মহিলাদের উপর হামলা হচ্ছে। সম্মান বাঁচাতে গ্রাম ছেড়েছি। এলাকায় নিজের কিছু জমি আছে। সকালে গিয়ে চাষ করব। কিন্তু রাতে ওই গ্রামে আর থাকব না।”
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “কৈজুড়ির ঘটনায় দোষীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় অনেক সমস্যা রয়েছে। তবে কৈজুড়ির ঘটনার পর গ্রামবাসীরা এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন এমন খবর পাইনি।” তবে সমস্যার কথা মানছেন স্বরূপনগরের তৃণমূল বিধায়ক বীণা মণ্ডল। তিনি বলেন, “সীমান্ত এলাকায় মহিলাদের উপর অত্যাচার ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু সীমান্তে বিএসএফের গুলি চালানোর নির্দেশ নেই। কেন্দ্রের উচিত বিএসএফকে সীমান্ত এলাকায় গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার।”
কেন কৈজুড়িকে নিরাপদ ভাবছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা? কৈজুড়ি হল ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তের গ্রাম। বেশিরভাগ জায়গায় কাঁটাতার নেই। অন্ধকার নামলে সীমান্তে আলো জ্বলে বটে, কিন্তু তাতে চোরাচালান আটকায় না। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যা নামলেই কৈজুড়ি ও তার আশাপাশের এলাকায় চলে আসে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা। আশ্রয় নেয় গ্রামে। চলে শাসানি ও অত্যাচার। স্থানীয় বাসিন্দা ৭২ বছরের বৃদ্ধা সুবলা গাইন বলেন, ‘‘এখানে মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপন্ন। প্রায় প্রতিদিনই মহিলাদের উপর অত্যাচার চলে। কিন্তু অর্ধেকের বেশি ঘটনার কথা কেউ জানতেও পারে না।” এলাকারই বাসিন্দা রত্না মণ্ডলের কথায়, “দুষ্কৃতীদের অত্যাচার এতই বেড়েছে যে সন্ধ্যার পরেই ঘরে ঢুকে পড়তে হয়।” স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সীমান্তবর্তী গ্রামে তাঁদের অনেক অত্যাচার সহ্য করে থাকতে হয়। পুলিশে অভিযোগ করলে দুষ্কৃতীরা অত্যাচারের মাত্রা বাড়ায়।
স্থানীয় বাসিন্দা রমেন গাইনের অভিযোগ, “বিএসএফকে ডাকলে আসে না। স্থানীয় থানা গ্রাম থেকে দশ কিলোমিটার দূরে। কোনও ঘটনা ঘটলে পুলিশ আসার আগেই পালায় দুষ্কৃতীরা।” স্বরূপনগর থানার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “কৈজুড়ি গ্রাম ছেড়ে বাংলাদেশী দুষ্কৃতীর ভয়ে কিছু মানুষ অন্যত্র চলে যাচ্ছেন বলে শুনেছি। কিন্তু পুলিশের তেমন কিছু করার থাকে না। বিষয়টি বিএসএফের দেখার কথা।” সীমান্ত পাহারায় থাকা এক বিএসএফ কর্তা বলেন, “ওপার থেকে বাংলাদেশিরা দল বেঁধে আসে। ওদের কাছে অস্ত্র থাকে। কিন্তু গুলি চালানোর নির্দেশ নেই।”
অপরাধীর শাস্তি, ঘরের ছেলেদের আবার ঘরে ফেরাআপাতত অপেক্ষায় কৈজুড়ি।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.