চার্জশিট না হওয়ায় হতাশা
পাশে আছে কলকাতা, দেখে ভরসা পেল ব্যথিত কামদুনি
মুখ্যমন্ত্রীর ধমকে খানিকটা হলেও ধাক্কা খেয়েছিল কামদুনি। কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে মুখর কয়েক জন মহিলাকে সিপিএমের লোক বলে চিহ্নিত করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনের তরফে কামদুনিতে মাওবাদীদের উপস্থিতির কথাও বলা হয়েছিল। এই ঘটনায় মুষড়ে পড়েছিল ব্যথিত কামদুনি। শুক্রবার কলকাতার মিছিলে মানুষের ঢল দেখে তার ভরসা ফিরেছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিমতো ১৫ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও পুলিশ অভিযুক্তদের চার্জশিট না-দেওয়ায় হতাশা পুরোপুরি কাটছে না কামদুনিবাসীর।
কলকাতায় বিশিষ্ট জনদের ডাকা মিছিলে যোগ না-দেওয়ার জন্য পরোক্ষে চাপ ছিল কামদুনির উপরে। সেই চাপ উপেক্ষা করেই অনেকে পা মিলিয়েছিলেন মিছিলে। যাঁরা যেতে পারেননি, শুক্রবার দিনভর তাঁদেরও চোখ ছিল টিভি-র পর্দায়। শনিবার সকাল থেকেই কামদুনির স্কুলমাঠ থেকে শুরু করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে জটলায় একটাই আলোচ্য বিষয় ছিল কলকাতার মিছিল। গ্রামের যুবক ক্ষুদিরাম ঘোষের কথায়, “৮ জুন রাতে আমরা ওই ছাত্রীর মৃতদেহ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। কিন্তু উল্টোডাঙা মোড় থেকে আমাদের জবরদস্তি নিমতলা শ্মশানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময়ে আমরা কলকাতার কাউকে পাশে পাইনি। কিন্তু শুক্রবার কলকাতার মিছিল দেখে মনে হয়েছে, আমরা একা নই। এই লড়াইটা আমাদের একার লড়াই নয়।”
বারাসত আদালতে মূল অভিযুক্ত আনসার আলি। ছবি: সুদীপ ঘোষ
কিন্তু সেই লড়াইয়ের বহু পথ চলা যে এখনও বাকি, তা বিলক্ষণ জানে কামদুনি। আপাতত তারা অভিযুক্তদের চার্জশিট হওয়ার প্রতীক্ষায়। মুখ্যমন্ত্রী নিজে একাধিক বার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ১৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হবে। সেই মতো ৭ জুনের ঘটনার পর ১৫ দিনের মেয়াদ পেরিয়েছে শনিবার। কিন্তু সিআইডি চার্জশিট দেয়নি। মূল অভিযুক্ত আনসার আলিকে এ দিন বারাসতে দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের আদালতে তোলা হলে তাকে দু’সপ্তাহের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানো হয়।
কামদুনির বাসিন্দাদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার করে এক মাসের মধ্যে যাতে ধর্ষক ও খুনিদের ফাঁসি হয়, সেটা সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু আনসারকে দু’সপ্তাহের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানোর অর্থ, সে দোষী প্রমাণিত হলেও এক মাসের মধ্যে কোনও অবস্থাতেই তার শাস্তি হচ্ছে না। ফলে তারা কিছুটা হতাশ।
সিআইডি চার্জশিট দেবে, এই আশায় এ দিন মৃত ছাত্রীর ছোট ভাই-সহ কামদুনির জনা তিরিশ বাসিন্দা একটা ম্যাটাডোরে করে সকাল ১০টাতেই পৌঁছে যান বারাসত আদালতে। সকাল থেকেই পুলিশ ও র্যাফে ছয়লাপ ছিল আদালত চত্বর। বেলা ১২টা নাগাদ আনসারকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। তার গায়ে ছিল ডোরাকাটা টি-শার্ট ও শর্টস। খানিকটা বেপরোয়া ভাব নিয়েই আদালতে ঢুকে যায় সে। তার পর কোর্ট লক-আপেও সে ছিল ভাবলেশহীন।
সল্টলেকে প্রতিবাদ মিছিল। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র
বেলা তিনটে নাগাদ বিচারক যখন আনসারকে দু’সপ্তাহের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন, তখন মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন গ্রামবাসীরা। তাঁদের প্রশ্ন, সিআইডি কেন চার্জশিট দিতে পারল না? তাঁদের কথায়, “ওই ছাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করার পর আনসারকে হাতেনাতে ধরেও আমরা কিন্তু আইন নিজেদের হাতে তুলে নিইনি। বরং, এলাকার মানুষকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে শান্ত করে তাকে পুলিশের হাতে দিয়েছি। আমরা সুবিচার চেয়েছি। কিন্তু সেটা এখনও পেলাম কোথায়? দিদি কত কী বলে গিয়েছিলেন! আজ পর্যন্ত পুলিশ ক্যাম্প হল না, রাস্তায় আলো এল না, নিরাপত্তার বন্দোবস্ত হল না। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দোষীদের এক মাসের মধ্যে ফাঁসি হবে। কোথায় কী হল?”
এ দিকে, মুখ্যমন্ত্রী যাঁদের মাওবাদী তকমা দিয়েছিলেন, সেই টুম্পা কয়াল, মৌসুমী কয়ালদের জন্য রাজ্য মানবাধিকার কমিশন পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করার কথা বললেও এখনও সেটা হয়নি। সেই সঙ্গে গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এ দিন সকাল থেকে প্রচুর পুলিশ এলাকায় টহল দিলেও দুপুরের পর থেকে অধিকাংশ জায়গাতেই টহলদারি বন্ধ হয়ে যায়। এ দিন বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা নিহত ছাত্রীর পরিবার ও গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.