কামদুনির তরুণীকে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে মিছিলে হেঁটেছিল স্থানীয় অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে পড়ুয়ারা। সেই ঘটনার জেরে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়কে শো-কজ করলেন উত্তর ২৪ পরগনা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মীনা ঘোষ।
মীনাদেবীর বক্তব্য, ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মিছিল করা যাবে না বলে হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে। তা-ও কী ভাবে প্রদীপবাবুর স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা মিছিল করল, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। তাঁর আরও প্রশ্ন, “প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জানাবে কেন, সেটাও বোঝা যাচ্ছে না।”
প্রদীপবাবু ইতিমধ্যেই শো-কজের জবাব পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেখানে তিনি পাল্টা কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। সোমবার বেলা তিনটের মধ্যে সেগুলির জবাব না-পেলে প্রতিবাদে নামার হুমকি দিয়েছেন তিনি। কামদুনির বাসিন্দাদেরও অনেকের দাবি, অবিলম্বে শো-কজ প্রত্যাহার করতে হবে। তা না-হলে সংসদ অফিস ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানাবেন তাঁরা।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, শো-কজের খবর তাঁর জানা নেই। তবে তিনি বলেন, “এমনটা হয়ে থাকলে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়নি। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে স্কুলপড়ুয়াদের যোগ দেওয়া রুখতে হাইকোর্টের যে রায় আছে, তা মাথায় রেখেই এমনটা করা হয়েছে বলে মনে হয়।” কী বলেছিল হাইকোর্ট? ২০১১-র সেপ্টেম্বরে বেহালার সাহাপুর মথুরানাথ বিদ্যাপীঠের কয়েক জন ছাত্রছাত্রী ডিএসও-র মিছিলে যোগ দেয়। স্কুল চলাকালীনই অভিভাবকদের অনুমতি না নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা রাজনৈতিক মিছিলে হাঁটার কারণে তৈরি হয় তীব্র বিতর্ক। এ ব্যাপারে দায়ের হওয়া একটি মামলায় স্কুলশিক্ষা দফতরের হলফনামা চায় হাইকোর্ট। সেই হলফনামার পরিপ্রেক্ষিতে তারা রায় দেয়, স্কুলপড়ুয়াদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদান ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
শো-কজের উত্তরে প্রদীপবাবু বলেছেন, তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে তাঁর স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মিছিল কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। ওই তরুণী এক সময় ওই স্কুলের ছাত্রী ছিল। তিনি নিজেও তাঁকে পড়িয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর পরে গোটা এলাকায় যে আবেগ তৈরি হয়, তা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদেরও স্পর্শ করেছিল। তারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই মিছিলে যোগদান করেছিল।
প্রদীপবাবুর কথায়, “হাইকোর্টের নির্দেশ মোটেই লঙ্ঘন করা হয়নি। শো-কজের চিঠিতে লেখা হয়েছে, মিছিল হয় ১২ জুন। কিন্তু মিছিলটি হয়েছিল ১৩ জুন। এবং তা-ও স্কুল ছুটির পরে, বেলা সাড়ে তিনটের সময়। তা ছাড়া, তাদের অভিভাবকেরাও বিষয়টি জানতেন।”
সংসদকে এক হাত নিয়ে ওই প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, “চিঠিতে লেখা হয়েছে, তদন্ত করে তাঁরা জেনেছেন, আমি নাকি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ওই মিছিল সংগঠিত করেছিলাম। কিন্তু এই তথ্য ওঁরা কোথা থেকে পেলেন? সংসদের তরফে কেউ ছাত্রছাত্রী বা গ্রামবাসীদের সঙ্গে একটিও কথা বলেননি।” রীতিমতো ক্ষোভের সুরে প্রদীপবাবু বলেন, “স্কুলের ছেলেমেয়েরা কী রকম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করছে, সে দিকে কারও খেয়াল নেই। অথচ শো-কজ করার বেলায় মুখিয়ে আছেন।” স্থানীয় বাসিন্দাদেরও বক্তব্য, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার জেরে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যে ক্ষোভ জমেছে, মিছিল তারই বহিঃপ্রকাশ। আর প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, প্রয়োজনে স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে ফের মিছিল করবেন তিনি। |