দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর
ভূগর্ভস্থ পথ কবে
প্রাণ হাতে পারাপার
দু’বছরেও শেষ হল না যাদবপুর রেলগেট সংলগ্ন ছোট্ট একটা ভূগর্ভস্থ পথ নির্মাণ। এই বিলম্বের মাসুল দিতে হচ্ছে বাসিন্দা এবং পথচারীদের। তাঁদের অভিযোগ, অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে জমে রয়েছে প্রায় এক মানুষ সমান জল। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিভিন্ন মহলে বার বার আবেদন জানিয়েও সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি।
প্রতি দিন প্রায় কয়েক হাজার মানুষ এই রেলগেট দিয়ে যাতায়াত করেন। গড়ফা, ঝিল রোড, পালবাজার, বিবেকনগরের বাসিন্দারাও রাজা সুবোধ মল্লিক রোডে যাওয়ার জন্য এই রেলগেট ব্যবহার করেন। এ পথেই নিয়মিত যাতায়াত করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু পড়ুয়া, অধ্যাপক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের একাংশ, কুমুদশঙ্কর রায় এবং কেপিসি হাসপাতালের অনেক কর্মচারী ও চিকিৎসক। আবার এই রেলগেটটিই কেএস রায় রোড এবং গড়ফা ও ঝিল রোডের সংযোগস্থল।
সপ্তাহখানেক আগে এই জায়গাতেই ক্যানিং লোকালের ধাক্কায় গুরুতর জখম হয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক। স্থানীয় বাসিন্দা রীতা মৈত্রের কথায়: ‘‘জায়গাটা এমন বিপজ্জনক ভাবে এবড়োখেবড়ো হয়ে রয়েছে যে প্রায় দিনই কোনও না কোনও পথচারী হোঁচট খেয়ে পড়ে যান।”
পূর্ব রেলের এক আধিকারিক জানান, যাদবপুরে একটা রেলওয়ে উড়ালপুল রয়েছে। স্টেশনে ওভারব্রিজ রয়েছে। তাই রেললাইনের উপর দিয়ে চলাচল বেআইনি কাজ।
রেল কর্তৃপক্ষের এই যুক্তির বিরোধিতা করে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন যদি বেআইনি কাজ হবে তা হলে দ্রুত ভূগর্ভস্থ পথ নির্মাণ শেষ করে রেল গেটটি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে না কেন?
পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, উড়ালপুল চালু হওয়ার পরেই রেল কর্তৃপক্ষ ওই গেট বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপেই গেটটি বন্ধ করা যায়নি। এর পরেই সিদ্ধান্ত হয় যাদবপুর রেলগেটে পথচারীদের জন্য একটি ভূগর্ভস্থ পথ নির্মাণ করার পরেই রেললাইনের উপর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যাদবপুরের রেলওয়ে উড়ালপুল হচ্ছে সুকান্ত সেতু। যার একটা মুখ যাদবপুর পালবাজার সংলগ্ন এলাকায় এসে মিশেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই সেতু দিয়ে রাজা সুবোধ মল্লিক রোডে যেতে হলে অনেকটা ঘুরে যেতে হয় এবং সময় বেশি লাগে। তাই আমরা একটি ভূগর্ভস্থ পথ নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলাম।
১১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তৃণমূলের তারকেশ্বর চক্রবর্তী বলেন, “বাসিন্দাদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে এই ভুগর্ভস্থ পথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। প্রথম দিকে কাজটা খুব দ্রুত গতিতে হচ্ছিল তার পরে কোনও অজানা কারণে কাজ থমকে যায়। রেলের আধিকারিকদের অনেক বার দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তাঁরা কথা কানে তোলেননি।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, অর্ধেক তৈরি ভূগর্ভস্থ পথের মধ্যে জল এবং আবর্জনা জমে এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে। ওই জমা জল মশার আঁতুড় হয়ে উঠেছে। কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরো কর্তৃপক্ষের যুক্তি, জায়গাটি রেলওয়ের অধীনে রয়েছে। ওখানে আমরা কোনও কাজ করতে চাইলে রেলওয়ের অনুমতি লাগবে। পূর্ব রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবীন মহাপাত্র বলেন, “সবিস্তার খোঁজ নেব। তার পরে কাজ যাতে দ্রুত শেষ হয় সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

ছবি: সুব্রত রায়




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.