হাঁড়ির খবর
ফিনফিনে চিনে আমোদ
মোমো-টোমো মোটেও নয়। যেন কেউ মজফ্ফরপুরের সরস লিচু ছাড়িয়ে পাতে যত্ন করে সাজিয়ে দিয়েছে। কাঁটায় বিঁধে এক কামড়েই মধুর বিস্ময়! মসৃণ রসালো কমনীয়তা পেরিয়ে গভীরে যেতেই মুচমুচে চিংড়ির স্বাদ।
কঠিন-কোমলের এমন চমৎকার কম্বিনেশনের সঙ্গে কদাচিৎ মোলাকাত ঘটে। মেনল্যান্ড চায়না-য় এ বারের ডিমসাম-উৎসবের এটাই তুরুপের তাস। পোশাকি নাম চুং ফান (cheung fun)! কলকাতার জন্যও এ একটা নতুন ধরনের ডিমসাম-অভিজ্ঞতা বটে। বেজিং থেকে আসা মাস্টার শেফ গাও ফুলিয়াংয়ের কাছে নাড়া বেঁধে টিম মেনল্যান্ড চায়না যা এত দিনে দারুণ রপ্ত করে ফেলেছে।
শেফ ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য বলছিলেন, কত রকমের ময়দা মেশে এই ডিমসামে। রাইস ফ্লাওয়ারের সঙ্গে খাস চিনদেশের ডিমসাম ফ্লাওয়ার, আলুর স্টার্চ, কর্নফ্লাওয়ার। রাইস ফ্লাওয়ার নুড্ল রোল বলেও পরিচিত এই চুং ফান। ভাপানো নরম ডাম্পলিংয়ের গর্ভে চিংড়ির মুচমুচেত্ব বজায় রাখাই আসল চ্যালেঞ্জ শেফের। একটি স্পেশাল ব্যাটারে চিংড়িটা আগে ভাজা হয়। ফলে, রাইস ফ্লাওয়ারের প্যানকেকে মুড়ে তা ভাপানোর সময়েও ব্যাটার ভেদ করে বেশি আর্দ্রতা ঢুকতে পারে না। চিংড়ি ভাজাও এতটুকু নেতিয়ে যায় না। আর বাইরের ময়দার খোলটা ঠিক ছাড়ানো লিচুর মতোই দেখতে লাগে। একই কায়দায় সৃষ্টি চিকেনের চুং ফান ডিমসামও রেস্তোরাঁয় এখন মজুত।
কলকাতার ডিমসাম-অভিজ্ঞতা এ ভাবেই ক্রমশ পাল্টে পাল্টে যাচ্ছে। মেনল্যান্ড চায়না-র ইয়াম চা উৎসব ক্রমশ কলকাতার ক্যালেন্ডারে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিচ্ছে। যেখানেই মেনল্যান্ড চায়না, সেখানেই ইয়াম চা-র কদর। ইয়াম চা মানে চায়ের সঙ্গে টা। আরও সোজাসুজি বললে, চা ও ডিমসাম (কিংবা মোমো) ভোজের আসর।
প্রথম বার শব্দটা শুনতেই যেন মেঘছাওয়া দাজির্লিং নেমে এল বর্ষার কলকাতায়। ম্যালের পাশের সেই বিখ্যাত রাস্তাটা ধরে হাঁটতে হাঁটতে যখন বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে, রাজভবন থেকে ডাইনে ঢুকে একটু এগিয়ে সেই চিলতে ঠেকটার সঙ্গে তখন এক বার দেখা হবেই। এমনিতে পাহাড়ে উঠলেই মনটা কেমন পর্ক-পর্ক করে! আমেরিকান গায়কদের ছবিতে সাজানো সেই চা-ঘরটায় অবশ্য বরাবরই স্রেফ বাঁধাকপির মোমো পেয়েছি। কনকনে ঠান্ডায় গরমাগরম চায়ের সঙ্গে তা-ই অমৃত। চা-মোমো শুনলেই দার্জিলিংয়ের কত অবেলার স্মৃতি পলকে জ্যান্ত হয়ে ওঠে।
মেনল্যান্ড চায়না-র চিনে-আমোদে ঠিক এই দার্জিলিংয়ের আরাম মিলবে না। ডিমসাম খাওয়ার ফাঁকে ঘন ঘন জেসমিন চায়ে চুমুক মারা টাকরা মেজে নেওয়ার কাজ করে। এ সব ডিমসাম সঙ্গতের সসগুলোও অতি বিশিষ্ট। জাপানি কিকোমান সস-প্রভাবিত নোনতা কষাটে কালচে সসটা মেনুর সামগ্রিক ডিমসাম-সম্ভারের প্রায় পুরোটার সঙ্গেই জমবে। এ ছাড়া, ব্ল্যাক পেপার সসটাও বেশ। আর ছোট ছোট প্যাটির মতো দেখতে যে সব বেক্ড ডিমসাম পেশ করা হচ্ছে, তার সঙ্গে হাল্কা ঝাঁঝালো মাস্টার্ড সসটাও খারাপ যাবে না।
চিন-সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা বিচিত্র ময়দার মিশেলে এই যে স্টিম্ড ডাম্পলিংয়ের খোলটা তৈরি হচ্ছে, তা এতটাই স্বচ্ছ যে ভেতরে মাংস কি চিংড়ির পুর কখনও বা চোখে পড়ে। ল্যাম্বের ডাম্পলিংটি কিংবা ঈষৎ সব্জে আভার স্টিম্ড স্পিনাচ প্রন রোলটা ছেড়ে দেওয়া ঠিক কাজ হবে না। এই স্বচ্ছ ময়দার একটি গুণ হল, তা গ্লুটেনমুক্ত। গ্লুটেনে অ্যালার্জি আছে যাঁদের, তাঁরাও নির্ভয়ে এই ডাম্পলিং ফরমায়েশ করতে পারেন। পদ্মপাতায় মোড়া ভাপানো স্টিকি রাইসের মণ্ডে চিকেন-প্রন-সয়া সসে কাইয়ের মাখোমাখো ব্যাপারটাও জমপেশ।
নিরিমিষ ডাম্পলিংও বেশ কয়েকটি আছে। ওয়াটার চেস্টনাট (পানিফল), গাজর, ব্রকোলি-টোলি দিয়েও ভাল জমছে। বেক্ড ডিমসামগুলো প্যাটির মতো দেখতে। চিকেন ছাড়াও হাঁস-কুমড়ো, চিংড়ি-কাঠবাদামের পদ রয়েছে লিস্টিতে। পোচ্ড পিকিং চিকেন ডাম্পলিংয়ের একটি মজার কথা বলতেই হয়। এই ডাম্পলিংয়ের খোলটা স্বচ্ছ নয়। কিন্তু আর্দ্রতায় ভরপুর। কামড়ালে মালুম হবে, ভেতরটা রীতিমতো রসালো। সি-বাসের ডাম্পলিংও মেনুতে রয়েছে।
এলগিন রোডের মোমো-পাড়া বা সাত-সকালে টেরিটিবাজারের পুরনো চিনে পাড়ায় মাংসঠাসা বানরুটির (পাও বা বাও) ডিমসাম যুগ পেরিয়ে কলকাতা সত্যিই এখন একুশ শতকের। মাস্টার্ড সসটাও খারাপ যাবে না।
চিন-সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা বিচিত্র ময়দার মিশেলে এই যে স্টিম্ড ডাম্পলিংয়ের খোলটা তৈরি হচ্ছে, তা এতটাই স্বচ্ছ যে ভেতরে মাংস কি চিংড়ির পুর কখনও বা চোখে পড়ে। ল্যাম্বের ডাম্পলিংটি কিংবা ঈষৎ সব্জে আভার স্টিম্ড স্পিনাচ প্রন রোলটা ছেড়ে দেওয়া ঠিক কাজ হবে না। এই স্বচ্ছ ময়দার একটি গুণ হল, তা গ্লুটেনমুক্ত। গ্লুটেনে অ্যালার্জি আছে যাঁদের, তাঁরাও নির্ভয়ে এই ডাম্পলিং ফরমায়েশ করতে পারেন। পদ্মপাতায় মোড়া ভাপানো স্টিকি রাইসের মণ্ডে চিকেন-প্রন-সয়া সসে কাইয়ের মাখোমাখো ব্যাপারটাও জমপেশ।
নিরিমিষ ডাম্পলিংও বেশ কয়েকটি আছে। ওয়াটার চেস্টনাট (পানিফল), গাজর, ব্রকোলি-টোলি দিয়েও ভাল জমছে। বেক্ড ডিমসামগুলো প্যাটির মতো দেখতে। চিকেন ছাড়াও হাঁস-কুমড়ো, চিংড়ি-কাঠবাদামের পদ রয়েছে লিস্টিতে। পোচ্ড পিকিং চিকেন ডাম্পলিংয়ের একটি মজার কথা বলতেই হয়। এই ডাম্পলিংয়ের খোলটা স্বচ্ছ নয়। কিন্তু আর্দ্রতায় ভরপুর। কামড়ালে মালুম হবে, ভেতরটা রীতিমতো রসালো। সি-বাসের ডাম্পলিংও মেনুতে রয়েছে। এলগিন রোডের মোমো-পাড়া বা সাত-সকালে টেরিটিবাজারের পুরনো চিনে পাড়ায় মাংসঠাসা বানরুটির (পাও বা বাও) ডিমসাম যুগ পেরিয়ে কলকাতা সত্যিই এখন একুশ শতকের।

ছবি: শুভেন্দু চাকী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.