ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামের ওঠা-পড়া এ বার প্রভাব ফেলবে বিদ্যুৎ মাসুলেও। ঠিক তেল-গ্যাসের মতোই।
কয়লা আমদানির বাড়তি খরচ গ্রাহকদের কাঁধে চাপানোর প্রস্তাবে শুক্রবার সায় দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আর্থিক বিষয়ক কমিটি। ফলে এ বার কয়লার অভাবে উৎপাদন বন্ধ না-রেখে তা সরাসরি (অথবা কোল ইন্ডিয়ার মাধ্যমে) বিদেশ থেকে আনতে পারবে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি। এবং তার জন্য হওয়া বাড়তি খরচ যোগ করতে পারবে বিদ্যুতের দামে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাড়বে অন্তত ১৫ থেকে ১৭ পয়সা। কোথাও কোথাও তা বাড়তে পারে ২০-২৫ পয়সা পর্যন্ত। বিদেশে কয়লার দাম চড়লে, বাড়তি মাসুল গুনতে তো হবেই। বিলে বেশি টাকা গচ্চা যেতে পারে ডলারে টাকার দর বেশ খানিকটা নেমে এলেও।
গোড়া থেকেই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্য। তাই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা স্বাভাবিক ভাবেই সুর চড়াবে বলে মনে করছেন অনেকে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মাঠে নেমেছে বিজেপি। প্রধান বিরোধী দলের অভিযোগ, দীর্ঘ মেয়াদে বাড়তি দাম দিয়ে কয়লা আমদানি করতে চাইবে না কোনও সংস্থাই। অথচ মাঝখান থেকে হয়তো মাসুল বেড়ে যাবে। বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভড়েকরের দাবি, “বাড়তি মাসুল গুনেও অন্ধকারে ডুববে সারা দেশ।” |
কেন্দ্রীয় সরকারের অবশ্য যুক্তি নেই-বিদ্যুতের থেকে দামি বিদ্যুৎ ভাল। এ দিন নিজেদের সিদ্ধান্তের পক্ষে জোরালো সওয়াল করে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, “মাসুল সামান্যই বাড়বে। কয়লা আমদানির খরচ, বন্দর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের দূরত্ব, তার উৎপাদন ক্ষমতা ইত্যাদির উপর নির্ভর করবে মাসুল বৃদ্ধির অঙ্ক। তবে একেবারে বিদ্যুৎহীন অবস্থার থেকে বিদ্যুতের জন্য বাড়তি দাম দেওয়া ভাল।” সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর জুলাইয়ের শেষ থেকেই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে।
অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, “প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গড় লগ্নির অঙ্ক ৫-৬ কোটি টাকা। তাই এত খরচ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির পর স্রেফ কয়লার অভাবে তা বন্ধ করে রাখা কোনও কাজের কথা নয়।”
উল্লেখ্য, অনেক দিন থেকেই কয়লার অভাবে নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না অধিকাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। ফলে বিদ্যুতের অভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শুধু যে অন্ধকার নেমে আসছে তা-ই নয়, সমস্যায় পড়ছে শিল্প সংস্থাগুলিও। বিদ্যুতের জোগান নিশ্চিত না-হলে অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পে টাকা ঢালতে রাজি হচ্ছে না লগ্নিকারীরাও। এই পরিস্থিতিতে বহু আগে থেকেই কয়লা আমদানির পক্ষে সওয়াল করছিলেন চিদম্বরম।
কয়লা মন্ত্রকেরও বক্তব্য, দেশে ৭৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরির জন্য যে পরিমাণ কয়লা প্রয়োজন, এ বছর তার ৬৫ শতাংশের জোগান নিশ্চিত করবে কোল ইন্ডিয়া। দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী যোজনার শেষে তা ধাপে ধাপে বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ৭৫ শতাংশে। ওই সময় (২০১৭ সালে) দেশে কয়লার চাহিদা পৌঁছবে অন্তত ৬৮ কোটি টনে। অথচ দেশে ৫০ কোটি টনের বেশি তোলা সম্ভব হবে না। সুতরাং বাকিটা আনতে হবে বিদেশ থেকেই।
প্রথমে প্রস্তাব ছিল, আপাতত দামি বিদেশি কয়লার সঙ্গে সস্তা দেশি কয়লা মিশিয়ে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিকে তা গড় দামে বিক্রি করুক কোল ইন্ডিয়া। কিন্তু তা নিয়ে টালবাহানা চলছিল গত এক বছর ধরে। তাই শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র কয়লা আমদানির পথ প্রশস্ত করায় স্বাভাবিক ভাবেই এ দিন খুশি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি।
নিয়ম অনুযায়ী, কতখানি বিদ্যুৎ মাসুল বাড়ানো হবে, তা ঠিক করতে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নিতে হবে সংস্থাগুলিকে। অনুমোদন প্রয়োজন হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারেরও। গ্রাহকের উপর দায় চাপাতে না-চাইলে ওই বাড়তি খরচ ভর্তুকি হিসেবে সংস্থাকে মিটিয়ে দিতে পারবে তারা। আগামী দিনে এ নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধিতা প্রবল হলে, কেন্দ্র যাকে ঢাল করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। |