এবিজি বিদায় গভীর দাগ কেটেছে ফরাসি লগ্নিকারীদের মনে। তাঁদের সামনে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন ঝুলিয়ে দিয়েছে এ রাজ্যে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে। ওই ঘটনার পর আইফেল টাওয়ারের দেশ থেকে নতুন করে লগ্নি তো আসেইনি, উপরন্তু তা টোল ফেলেছে রাজ্যের ভাবমূর্তিতে। খাস কলকাতার মাটিতে দাঁড়িয়েই শুক্রবার এ কথা জানালেন ফরাসি কনসাল জেনারেল ফাব্রিস এতিয়েন।
হিংসাত্মক আন্দোলনের জেরে গত বছরই হলদিয়া বন্দর থেকে পাততাড়ি গোটাতে হয় হলদিয়া বাল্ক টার্মিনালকে। যা ছিল ভারতের এবিজি এবং ফরাসি সংস্থা এলডিএ-র যৌথ উদ্যোগ। এ দিন সে প্রসঙ্গে এতিয়েন বলেন, “ওই ঘটনার কোনও প্রভাব পড়েনি, তা বললে মিথ্যে বলা হবে। ফরাসি সংস্থাগুলির উপর তা নেতিবাচক ছাপই ফেলেছিল। এ নিয়ে সেখানে আলোচনাও হয়েছিল বিস্তর। এ রাজ্যের ভাবমূর্তির পক্ষেও ওই ঘটনা নেতিবাচক।”
ফ্রান্সে বিনিয়োগ নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এ রাজ্যের শিল্পমহলের সঙ্গে আলোচনার জন্য কলকাতায় এসেছেন ভারতে ‘ইনভেস্ট ইন ফ্রান্স এজেন্সি’-র কর্তারা। তাঁদের নিয়ে এ দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি হন এতিয়েন। সেখানেই এবিজি প্রসঙ্গ ওঠায় ওই কথা জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, হিংসাত্মক আন্দোলনের জেরে নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্ন তুলে রাজ্য ছেড়েছিল হলদিয়া বাল্ক টার্মিনাল। পুরো ঘটনার জন্য শাসকদল ও রাজ্য প্রশাসনের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিল তারা। শিল্পায়নে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন স্থানীয় শিল্প-কর্তারাও। তাঁদের বক্তব্য, ছিল, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের ভূমিকা যদি এমন হয়, তা হলে স্রেফ রাজনৈতিক ঝুঁকির জন্যই নতুন করে কোনও লগ্নি আর পা দিতে চাইবে না পশ্চিমবঙ্গে। ঠিক যে ভাবে সিঙ্গুর কাণ্ডের পর রাজনৈতিক ঝুঁকিই এ রাজ্যে বিনিয়োগের অন্যতম প্রতিবন্ধক বলে জানিয়েছিলেন ফোর্ড ইন্ডিয়ার কর্তা মাইকেল বোনহ্যাম। সেই সমস্ত পর্যবেক্ষণ যে একেবারে ভুল ছিল না, এ দিন তা মনে করিয়ে দিয়েছেন একাধিক শিল্প কর্তা।
কূটনীতির স্বাভাবিক সতর্কতা মেনে এতিয়েন বলেছেন, হলদিয়ার রেশ মিটে গিয়ে আগামী দিনে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি আশাবাদী। জানিয়েছেন, ওই ঘটনার জন্য কোনও ফরাসি বিনিয়োগ প্রস্তাব বাতিল হয়নি এই রাজ্যে। কিন্তু মাঝের সময়ে অন্য রাজ্যে টাকা ঢাললেও বিভিন্ন ফরাসি সংস্থা যে কিছুটা ওই কারণেই পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকায়নি, তা-ও বলেছেন তিনি।
তবে এবিজি-কাণ্ডের জন্য এ রাজ্য থেকে ফরাসি মুলুকে লগ্নি টানায় সমস্যা হতে পারে বলে মনে করেন না ‘ইনভেস্ট ইন ফ্রান্স এজেন্সি-র কর্তারা। তাঁরা জানান, টিটাগড় ওয়াগন, এভারেডি, আইটিসি ইনফোটেক ইতিমধ্যেই সেখানে ব্যবসা করছে।
এ বারও ফ্রান্সে লগ্নির বিষয়ে তাঁদের কাছে খোঁজখবর নিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি, রাসায়নিক, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, হোটেল-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংস্থা। |