সম্পাদকীয় ১...
প্রাচীনতন্ত্র
কেন্দ্রের ইউ পি এ সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রায় জ্যামিতিক প্রগতির হারে হ্রাস পাইতেছে। ‘এই সরকার অপদার্থ, ইহার সংস্কার করার সাহস নাই, ভবিষ্যমুখী হওয়ার কল্পনাশক্তি নাই, উপরন্তু দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হওয়ার প্রবণতা আছে’এমন একটা ধারণা ক্রমেই জনসাধারণের মনে দানা বাঁধিতেছে। অথচ সেই নেতিবাচক ধারণাটিকে পাল্টাইবার কোনও উদ্যোগ কিংবা প্রয়াস সরকারের তরফে নজরে পড়ে না। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ তাঁহার সুমিষ্ট বাচন সত্ত্বেও জনমনে দৃঢ়মূল ধারণাটিকে ঘুচাইতে পারেন নাই। ঘুচাইতে চাহেন, এমন আভাসও কি বিশেষ মিলিয়াছে? যদি চাহিতেন, তবে তাঁহার মন্ত্রিসভার সর্বশেষ পুনর্বিন্যাসে কি সেই অভিপ্রায় আর একটু স্পষ্ট ভাবে প্রতিফলিত হইত না?
এমন নয় যে মন্ত্রিসভার এই রদবদল খুব জরুরি ছিল। অভিযুক্ত কয়েক জন মন্ত্রীর ইস্তফার ফলে সচরাচর যাহা করা হইয়া থাকে, এ ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী বরিষ্ঠ মন্ত্রীদের হস্তে শূন্য মন্ত্রকগুলির অতিরিক্ত দায়িত্ব সঁপিয়া সেই দায় সারিতে পারিতেন। ‘দায়সারা’ কথাটি তো ইতিপূর্বে আর কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বেলায় এত প্রযোজ্য হয় নাই! পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের আর এক বছরও বাকি নাই। সেই নির্বাচনে ইউ পি এ পুনরভিষিক্ত হইবে, এমন প্রত্যাশা সম্ভবত কংগ্রেস হাই কমান্ডের অতি বড় আশাবাদীরও নাই। এই পরিব্যাপ্ত হতাশার মধ্যে নীতিগত প্রশ্নে সাহসী সিদ্ধান্তগ্রহণে অক্ষম একটি সরকারের কর্ণধার হিসাবে মনমোহন সিংহ তথাপি একটা ক্ষীণ আশার আলোকবর্তিকা জ্বালিতে পারিতেন, যদি পুনর্বিন্যাসের সুযোগে তিনি তরুণ প্রজন্মের অভিষেক ঘটাইতে উদ্যোগী হইতেন। তাহাতে হয়তো নির্বাচনী সম্ভাবনা উজ্জ্বলতর হইত না, কিন্তু দল হিসাবে কংগ্রেসের এবং সরকারপ্রধান হিসাবে তাঁহার মর্যাদা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ঈষৎ বাড়িত। দুর্ভাগ্যের বিষয়, তিনি প্রাচীনতন্ত্রেই তাঁহার আস্থা পুনরুচ্চারণ করিলেন। মনমোহন সিংহের সম্মুখে সাহসী হওয়ার সুযোগ ছিল। কথায় কথায় তিনি রাহুল গাঁধীর নবীন নেতৃত্বকে স্বাগত জানান। কিন্তু রাহুল গত কয়েক বছর ধরিয়া তরুণ প্রজন্মের কিছু রাজনীতিককে যে ভাবে তুলিয়া আনিতেছেন, প্রতিপালন করিতেছেন, কংগ্রেস হাই কমান্ড সে দিকে নজর দেয় নাই। নববিন্যস্ত মন্ত্রিসভার নূতন ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের গড় বয়স হিসাব করিলে দাঁড়াইতেছে ৭৩ বছর। প্রায় সকল নূতন মন্ত্রীই ৬৫ বছর, অর্থাৎ সরকারি কর্মক্ষেত্রে অবসরগ্রহণের সর্বোচ্চ প্রচলিত বয়ঃসীমা অতিক্রম করিয়াছেন। যে দেশে অধিকাংশ মানুষের বয়স পঁচিশের নীচে, সেখানে প্রবীণতায় এই অবিচল আস্থা একটিই বার্তা প্রেরণ করে: ইউ পি এ সরকার বার্ধক্যের ‘প্রজ্ঞা’য় যত আস্থাশীল, তারুণ্যের সৃষ্টিশীলতায় তত নয়।
প্রবীণ নেতারা নিশ্চয়ই সম্মানিত। প্রবীণের নিকট শিক্ষা লইবারও অনেক বিষয় আছে। কিন্তু তাহার জন্য প্রবীণদের মন্ত্রিসভায় বসাইয়া রাখিবার প্রয়োজন নাই। সেখানে তরুণের অভিষেক ভবিষ্যতের স্বার্থেই আবশ্যক। এবং, মনে রাখা দরকার, বয়স নিজে অভিজ্ঞতার সমার্থক নয়, তরুণদেরও সদর্থক অভিজ্ঞতার ভাঁড়ার থাকিতে পারে। আরও বড় কথা, বয়স সচরাচর প্রথা ভাঙিতে সাহসী হয় না। গতিশীলতাও তাহার অপছন্দের। সে স্থিতিজাড্যে বদ্ধ থাকিতে স্বস্তি পায়। স্থিতির মধ্যে স্থবিরতা থাকিতে পারে, কিন্তু নিশ্চিন্তিও আছে। প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী কি সেই কারণেই মন্ত্রিসভার পুনর্বিন্যাসে তরুণ প্রজন্মকে বরণ করার সুবর্ণসুযোগটি হাতছাড়া করিলেন। যদি তাহাই হয়, তবে তাহা দ্বিগুণ আক্ষেপের বিষয়। কারণ দুই দশক আগে এই প্রধানমন্ত্রীই, তখন অর্থমন্ত্রী হিসাবে, ভারতীয় অর্থনীতিতে নূতনকে বরণ করিয়াছিলেন। যে কারণেই তিনি এখন প্রাচীনপন্থী হইয়া থাকুন, নবীনবরণে তাঁহার এই ব্যর্থতার ফলে কিন্তু বিজেপির সুবিধাই হইয়া গেল। নরেন্দ্র মোদী বয়সে নবীন না হইলেও তাঁহার প্রবল প্রাণশক্তি তাঁহার শরীরী ভাষায় নিয়ত প্রকাশিত, বস্তুত প্রকট। প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী ও তাঁহার প্রবীণ মন্ত্রিসভা পরিচালিত সরকারের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের বিপরীতে আস্তিন-গোটানো মোদীর চওড়া কব্জির আস্ফালন ও তাঁহার গুজরাত উন্নয়নের মডেল নিঃসন্দেহে আগামী নির্বাচনে ইউ পি এ’কে বেগ দিতে চলিয়াছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.