পাহাড়টাই যেন এগিয়ে এল জাহাজের মতো
খনও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না ৬৩ বছরের প্রৌঢ়, থরথর করে কাঁপছে হাঁটু। এত বছরে কখনও তো এমন অভিজ্ঞতা হয়নি সীতারাম সুখাটিয়ার। পাহাড়ের খাঁজে এক টুকরো জায়গাটায় কোনও মতে ধরে রেখেছিলেন নিজেকে। আর চোখের সামনে জলস্রোতে খড়কুটোর মতো ভেসে যেতে দেখেছেন মৃতদেহ, অসহায় পশু।
খোলা আকাশের নীচে এ ভাবেই কেটেছে ১২ ঘণ্টা। ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার গিয়ে উদ্ধার করে তাঁকে। সহস্ত্রধারা হেলিপ্যাডে পৌঁছনোর পরে ভেঙে পড়লেন প্রৌঢ়। বললেন, “কিছু ক্ষণ আগেই গমগম করছিল কেদারনাথ মন্দির। মুহূর্তে মৃত্যু উপত্যকায় বদলে গেল।” সোমবার সকালে মন্দিরের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ দেখেন, পেছনের পাহাড়টা যেন এগিয়ে আসছে। তার ধাক্কায় শঙ্করাচার্যের সমাধি ভবনটিও একটা বড় জাহাজের মতো নেমে আসছে। সেটা ধাক্কা মারল ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অতিথি নিবাসে। লোকজন-সহ সে বাড়িটি নেমে যাচ্ছে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে। আর কিছু দেখেননি। দৌড়ে উঠে পড়েন মন্দিরের চাতালে। তার পর কী যে হয়েছে। বলার মতো অবস্থায় নেই এই প্রৌঢ়। বলেন, সে দিন অন্তত ৮০০০ দর্শনার্থী ছিলেন। ছিলেন হাজার চারেক ঘোড়াওয়ালাও। এখন সেখানে একা জেগে কেদারনাথ।
আকাশ পথে নিয়ে আসা হচ্ছে আটকে পড়া লোকেদের।
খোঁজ মেলেনি কেদারে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের দায়িত্বে থাকা জগদীশানন্দ মহারাজের। উখীমঠের সুধীর মহারাজ গিয়েছিলেন ফাটা-র হেলিপ্যাডে। যদি পৌঁছে খবর নেওয়া যায়। জায়গা না মেলায় ফিরে এসেছেন। অজানা আশঙ্কায় মন ভার।
উদ্ধার হওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়লেন সাক্ষী বনশল। ৪৯ জনের একটা বিশাল দলের সঙ্গে স্বামী-সন্তানকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। ১৫ জুন, হঠাৎই একটা খবর আসে তাঁদের কাছে, গঙ্গোত্রীর জল বিপদসীমার উপর বইছে। আট মাসের বাচ্চাকে বুকে আগলে তড়িঘড়ি নেমে আসেন ধারালিতে। আশ্রয় নেন সেখানের একটা হোটেলে। কিন্তু বন্যার জলে মুহূর্তে ধ্বংসস্তূপের চেহারা নিল সেই বাড়িটাও। এ বার সেখান থেকে পালাতে হল সাক্ষীদের। ছুটলেন কাছেই অন্য একটা হোটেলে। যখন পৌঁছলেন, সেটার আর চিহ্ন নেই। চারিদিকে জল আর জল। পানীয় জলটুকুও ছিল না, খাবার বলতে কয়েকটা বিস্কুটের প্যাকেট। বললেন, “জীবনে এ অভিজ্ঞতা ভুলব না।”
চলছে উদ্ধারের কাজও।
সীতারাম-সাক্ষী-সুমিতদের মতোই কেদারনাথ মন্দিরের কর্মী রবীন্দ্র ভট্ট। তিন তলা একটা বাড়ির ছাদে উঠে পড়েছিলেন তিনি। শেষে ঝাঁপ দেন জলে। বললেন, “প্রভু কেদারনাথই বাঁচিয়ে দিলেন।” আরও অনেকে এখনও আটকে রয়েছে বৃষ্টি-বন্যাবিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ডে। সংখ্যাটা আন্দাজ ৫০ হাজার। চুরমার ঘরবাড়ি। হাজার খানেক মানুষ নিখোঁজ। সরকারি সূত্রে মৃতের সংখ্যা এখন ১৫০-এ দাঁড়িয়ে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা জানিয়েছেন, শত শত মানুষের মৃত্যুর খবর আসতে পারে। এখনও সব জায়গায় সেনা পৌঁছতে পারেনি। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর আশঙ্কা, হাজারের ঘরে পৌঁছতে পারে মৃতের সংখ্যা। অন্তত ৯০টি ধর্মশালা হড়পা বানে ধুয়ে গিয়েছে।
প্রিয়জনের খোঁজে বিভিন্ন রাজ্য থেকে ছুটে এসেছেন আত্মীয়-পরিজনেরাও। অসহায় অবস্থায় দোরে-দোরে ঘুরছেন। মুম্বই থেকে আসা এমনই এক জন জানালেন, “ওঁরা বেঁচে আছে, জানি। আজও ফোনে কথা বলতে পেরেছি। আতঙ্কে চিৎকার করছিল ওঁরা মরে যাব, বাঁচাও।”
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ কে পট্টনায়েক ও রঞ্জন গগৈ কেন্দ্র ও রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন যথেষ্ট সংখ্যক হেলিকপ্টার কাজে লাগানো হয়। তা ছাড়া, যা কিছু প্রয়োজন। সেনার ৪৫টি কপ্টার ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজে নেমেছে। প্রায় দশ হাজার বায়ুসেনা বন্যা-বিপর্যস্ত পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাণের সন্ধানে। আইটিবিপি প্রধান অজয় চাড্ডা জানালেন, তাঁদের এক হাজার কর্মী উদ্ধার কাজে যুক্ত রয়েছেন। সব চেয়ে খারাপ অবস্থা কেদারনাথের। ২২টি হেলিকপ্টার দুর্গতদের নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার কাজে নিযুক্ত। একই সঙ্গে হেলিকপ্টারে বিতরণ করা হচ্ছে ওষুধ, খাবার, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
হড়পা বানে ভেসে যাওয়া গাড়ি।
রুদ্রপ্রয়াগ-গৌরীকুণ্ড, হৃষীকেশ-গঙ্গোত্রী, হৃষীকেশ থেকে জোশীমঠ হয়ে মানা, পিথোরাগড়-ঘাটিয়াগড় উত্তরাখণ্ডের চারটে সড়কপথ ধস নেমে বন্ধ হয়ে যায়। চাড্ডাই জানালেন, ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জোশীমঠের মতো কয়েকটা পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। বদ্রীনাথের অবস্থা অন্য জায়গাগুলোর থেকে ভাল। যমুনোত্রী-গঙ্গোত্রীও এখন বিপন্মুক্ত। বিপদসীমার বেশ খানিকটা নীচে দিয়েই বইছে যমুনা।
তবে মানুষের হাহাকার, উদ্ধার-কাজ, অর্থসাহায্য এত কিছুর মধ্যে কিন্তু উত্তরাখণ্ড-বিপর্যয়ে মানুষের ভূমিকা নিয়ে ওঠা প্রশ্নটা ম্লান হয়নি। আজও অভিযোগ জানিয়েছে সিএজি। অবৈধ নির্মাণে কী ভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, সে বিষয়ে ২০০৯ সালে রাজ্যকে সতর্ক করে দিয়েছিল সিএজি। অভিযোগ সে রিপোর্ট পাত্তাই দেয়নি বহুগুণা-সরকার।

ছবি: পি টি আই

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.